ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস মাহে রমজান 

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৮ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৪:৫৬, ২৮ এপ্রিল ২০২১
বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস মাহে রমজান 

বারো মাসের মধ্যে মাহে রমজান একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস। রোজার মাধ্যমে রয়েছে আলাদা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ হ্রাস পেয়ে সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজতর হয়ে ওঠে। মোটামুটি শবে-বরাতের পর থেকেই মানুষের মধ্যে ইবাদত ও ভালো কাজের ভিন্ন আবহ তৈরি হয়।

শবে-বরাত থেকে রমজানের শেষ পর্যন্ত ৪৫ দিনের মতো সময়। একটানা ৪০ দিন একটি কাজে ব্যয় করলে সেটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। মায়ের পেটের সন্তানও প্রতি চল্লিশ দিন অন্তর ভিন্ন রূপ নেয়। এজন্যই তাবলিগ জামাতে ৪০ দিনের চিল্লার বিধান চালু করা হয়েছে।

সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক ধনী-গরিব সব মুসলমানের জন্য রোজা সমানভাবে ফরজ। তাই সবাই নিজেকে একই নির্দেশের বাহক বা অনুসারী ভাবতে পারেন। যারা রোজা রাখেন তারা সবাই আল্লাহর গোলাম ভেবেই তা পালন করেন। বিশ্বের সব মুসলিম রোজাদার এক আল্লাহর গোলামের অনুভূতি নিয়ে রমজান মাস কাটিয়ে থাকেন। এতে সবার মধ্যে একাত্মবোধ দৃঢ় হয়। রোজার মাসে সাধারণত কেউ একা একা ইফতার বা সেহরি গ্রহণ করেন না। পারিবারিক পরিবেশে ইফতার-সেহরি করা হলে পরিবারের সবাই তাতে একসঙ্গে শরিক হন। এতে পারিবারিক সম্প্রীতি সুদৃঢ় হয়।

তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম সংস্কৃতি। সাধারণত এই নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়। সমাজের বিভিন্ন মানুষ এই নামাজে অংশগ্রহণ করেন। এতে ওই অঞ্চলের রোজাদার তারাবিপড়া মানুষের মধ্যে একটি আলাদা সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোজা পালনের মাধ্যমে একটি মাস মানুষ তার নফস নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ যদি কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা ইত্যাদি প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে মানুষের বিবেক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

সারাদিন ক্ষুধা-তৃষ্ণামুক্ত অবস্থায় কাটানোর ফলে সবার মধ্যে এই অনুভূতি জাগ্রত হয়Ñ ক্ষুধা, তৃষ্ণা তথা জৈবিক চাহিদার ক্ষেত্রে আমরা সবাই সমান। এই রোজা পালনের মাধ্যমে সমাজে যেসব মানুষ ঠিকমতো খেতে পায় না, তাদের অনুভূতি কেমন হতে পারে, তাদের কী ধরনের কষ্ট হয় তার একটি বাস্তব অনুভূতি অভাবমুক্ত মানুষও অভাবীদের মতো পেতে পারে। এই অনুভূতি সম্পদশালীদের অভাবী মানুষের প্রতি সদয় হতে সহায়তা করে। অফিসে, বাসায়, পরিবারে, বাইরে সবখানে রোজাদার মানুষ সহানুভূতি পেয়ে থাকেন। অধীনস্তদের কাজের চাপ কমিয়ে দেন। এই প্রক্রিয়া একমাস চলতে থাকলে এটি একটি অভ্যাসে পরিণত হওয়া স্বাভাবিক।

রোজা থাকা অবস্থায় কলহ-বিবাদ, বাজে কথা, কুৎসা-গিবতে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ। একজন রোজাদার হিসেবে সবাইকে এসব বাজে অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হয়। ফলে সমাজের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়ানো সম্ভব। রমজানের শেষ ১০ দিন কোনো কোনো রোজাদার ইতিকাফে বসেন। এই ইতিকাফকে ঘিরে বাইরের রোজাদারদের সঙ্গে একটি সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্যভাব গড়ে ওঠে।

তাছাড়া আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যারা রমজানের চাঁদের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছে, তারা সেদিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপ রূপে জন্ম দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মতো হতভাগ্য এই জগতে আর কেউ নেই।’ তাই মাহে রমজানের মতো এমন সুবর্ণ প্রশিক্ষণের সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আলোর পথে এবং ভালোর পথে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়