ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রোজা ফরজ হওয়ার রহস্য ও গুরুত্ব

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১ মে ২০২১  
রোজা ফরজ হওয়ার রহস্য ও গুরুত্ব

বিশ্ব জাহানের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর কোনো কিছুই হেকমত বা রহস্য ছাড়া সৃষ্টি করেননি এবং বিধান দেননি। এর ধারাবাহিকতায় রোজা ফরজ হওয়ারও বিশেষ হেকমত বা রহস্য রয়েছে।

রোজা ফরজ হওয়ার রহস্য হচ্ছে, ১. আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ বাস্তবায়ন ও শরিয়তের বিধানা অনুসরণ করে তাকওয়া অর্জন করা। রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর ফরজ করে দেওয়া একটি বিধান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের ওপর নির্মিত হয়েছে।’ এ পাঁচটির মধ্যে একটি রমজানের রোজা বলে উল্লেখ করেছেন । ২. সবর ও ধৈর্যের অভ্যাস গড়ে তোলা ও প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে ইচ্ছাশক্তিকে শাণিত করা। ৩. দরিদ্র ও নিঃস্বদের প্রতি দয়া ও মমতা প্রদর্শনের প্রতি মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা। কারণ, ব্যক্তি যখন ক্ষুধার্ত থাকার যাতনা অনুভব করবে, অভাবগ্রস্তদের প্রতি তার অন্তর ও অনুভূতি কোমল হবে। ৪. রোজার মাধ্যমে শরীরের আরাম ও সুস্থতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

রোজার রহস্যের মতো গুরুত্বও রয়েছে অনেক। রোজার অফুরন্ত প্রতিদান দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মের প্রতিদান এভাবে দেওয়া হয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, রোজা শুধু আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম)

সর্বশক্তিমান প্রতিপালক আল্লাহ নিজেই যখন এর প্রতিদান দেবেন তখন কী পরিমাণে দেবেন? আল্লাহ তায়ালা রোজা পালনকারীকে যে প্রতিদান দেবেন তা পরিমাপ করা হবে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য রোজা পালনের সঙ্গে কোনো আমলের তুলনা হয় না। তিনি রোজা পালনকারীদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা নির্দিষ্ট করে দেন। যে দরজা দিয়ে রোজাদার ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রইয়ান। কেয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তারা প্রবেশ করা শেষ হলে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে, ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন, রোজা হলো জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। (মুসনাদে আহমদ)। যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে রোজা পালন করবে আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (সত্তুর বছরের) দূরত্বে সরিয়ে দেবেন। (মুসলিম)

এখন আমাদের কর্তব্য হলো, রোজার রহস্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে অতুলনীয় ফরজ আমল পালনে ব্রতী হওয়া এবং এর পূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়