সাহরির গুরুত্ব ও ফজিলত
![সাহরির গুরুত্ব ও ফজিলত সাহরির গুরুত্ব ও ফজিলত](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022March/risingbd-2204040448-2204070551.jpg)
‘সাহরি’ শব্দটি আরবি `সাহরুন’ থেকে এসেছে। সাহরুন শব্দের অর্থ রাতের শেষাংশ বা ভোররাত। সাহরি অর্থ শেষ রাতের বা ভোরের খাবার। সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে যে আহার করা হয়, একে শরিয়তের পরিভাষায় ‘সাহরি’ বলে।
রোজা রাখার নিয়তে সাহরি খাওয়া সুন্নাত। রমজান মাসে সাহরির সময় মুসলিমবিশ্বে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। মসজিদের মিনারগুলো থেকে ভেসে আসে হামদ-নাত, সাহরি খাওয়ার আহ্বান। সাহরি পার্টিরা অলি-গলিতে ঘুরে গজল-কাওয়ালির মাধ্যমে জাগিয়ে তোলে ঘুমের পাড়া। তখন রোজাদার মুসলমানরা সাহরি খাওয়ার জন্য জেগে ওঠেন। এমনকি শিশুরাও বাদ থাকে না।
হাদিস শরিফে সাহরি খাওয়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আহলে কিতাব আর আমাদের মুসলমানদের রোজার মধ্যে শুধু সাহরি খাওয়াই পার্থক্য। অর্থাৎ তারা সাহরি খায় না আর আমরা সাহরি খাই।’ (মুসলিম : ১৮৪৩, তিরমিজি : ৬৪২)
যদি ক্ষুধা না থাকে আর খাওয়ারও ইচ্ছা না থাকে, তবু দুই একটা খেজুর খেয়ে নিলে অথবা এক ঢোক পানি পান করে নিলেও সুন্নাতের ওপর আমল হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। অর্থাৎ শরীরে প্রফুল্লতা ও শক্তি থাকে। (বুখারি, মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন, তোমরা সহিরি খেয়ে রোজা রাখার জন্য সাহায্য গ্রহণ করো। (সহিহ ইবনে খুজায়মা)
এ সকল হাদিস থেকে স্পষ্ট হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরি না খেয়ে রোজা রাখলে একদিকে অনেক বরকত থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা হয়, অপর দিকে এ রোজা হয়ে যায় ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজার সঙ্গে সাদৃশ্য। তবে সাহরিতে আপনি কী খাবেন, কতটুকু খাবেন তা রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্ধারিত করে দেননি। তা একান্তই ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, সামর্থ্য, রুচি ও দৈহিক সামর্থ্য বা সুখ-অসুখের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার শরীরের সঠিক প্রয়োজন বুঝে আপনার সামর্থ্য অনুপাতে আপনি সাহরি খাবেন। সাহরির খাবারগুলো একদিকে হবে হালাল উপার্জনের, অপর দিকে তা হবে স্বাস্থ্যকর। হারাম খাবার খেয়ে নিজের দেহ পরকালে জাহান্নামে জ্বালাবেন না। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিজের দেহ ইহকালে রোগের যন্ত্রণা দেবেন না।
সাহরি খাওয়ার সময় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, পানাহার করো যতক্ষণ রাতের অন্ধকার কালো রেখা থেকে প্রভাতের সাদা আলো শুভ্র রেখা প্রকাশিত না হয়।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭) দেরি করে সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তাফসিরে কাশশাফ রচয়িতা সাহরির নিয়ম প্রসঙ্গে লিখেছেন, সমস্ত রাত ছয় অংশে ভাগ করে শেষাংশে সাহরি খাও।
সাহাবি যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে সাহরি খেতাম, তারপর নামাজ শুরু করতাম। কোনো একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল, সাহরি ও ফজরের নামজের মধ্যে সময়ের দূরত্ব কতটুকু হতো? তিনি বলেন, ৫০ আয়াত।
কুরআনের ৫০ আয়াত তেলাওয়াত করতে সাধারণত সময় লাগে ১৫/২০ মিনিট। এ হাদিসের আলোকেই সাহাবায়ে কেরাম দেরি করে সময়ের শেষ ভাগে সাহরি খেতেন। রোজাদারের জন্য রাতের শেষাংশে সুবহে সাদিকের আগে আগেই সাহরি খাওয়া সুন্নাত এবং সওয়াব ও বরকতের কারণ। অর্ধ রাতের পরে যে সময়ই সাহরি খাবে সাহরির সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু রাত্রের শেষাংশে সাহরি খাওয়া উত্তম। সুবহে সাদিক না হওয়া পর্যন্ত সাহরি খাওয়া যাবে। তবে ফজরের আজানের পর সাহরি খেলে রোজা হবে না। কারণ, সেটা সাহরির সময় নয় ফজরের সময়। সাহরি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত অন্তরে করাই যথেষ্ট। মুখে যদি বলে ‘আমি আজ রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করলাম’ তাহলে ভালো।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
/তারা/
আরো পড়ুন