ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রমজানে জান্নাতের দরজা খুলে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩২, ১১ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১২:৫০, ১১ এপ্রিল ২০২২
রমজানে জান্নাতের দরজা খুলে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়

মাহে রমজানকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য বর্ণনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এটা এমন একটি মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমতের ঝরনাধারায় পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন বান্দার গুনাহ মাফের জন্য এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবে নির্ধারিত।’ 

যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা, অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা ও অসৎ কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বান্দা যখন রমজান মাসের রোজা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ন্যায় ও কল্যাণের পথে পরিচালিত হয়, তখন মাসের ১০ দিন অতিবাহিত হলে তিনি আল্লাহর রহমত তথা দয়া ও অনুগ্রহ প্রাপ্ত হন। এরপর যখন আরো ১০ দিন কাটান, তখন আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। এরপরও যখন তিনি শেষ ১০টি দিন এভাবে সিয়াম ও কিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে কাটান, তখন রোজাদার জাহান্নাম থেকে মুক্তির গ্যারান্টি লাভে ধন্য হন।

যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থ লোকদের পরিশ্রম কমিয়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মুমিনের দোয়া কবুল হয়। এ মাসে আখেরাতের মুক্তি অর্জনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, হে পুণ্য অন্বেষণকারী- অগ্রসর হও। হে পাপাচারী- থামো, চোখ খোলো। তিনি আবার ঘোষণা করেন, ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’

বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন উপলক্ষ খোঁজেন। রমজান সে ধরনের একটি বড় উপলক্ষ। এ মাস উপলক্ষে অগণিত গুনাহগার বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যারা রমজানের চাঁদের প্রথম তারিখ থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছে, তারা সেদিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে জন্ম দিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মতো দুর্ভাগা এ জগতে আর কেউ নেই।’ 

যদিও বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত সবকালে সবসময় বর্ষিত হতে থাক, বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানে এর ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। পবিত্র মাহে রমজানের বরকতে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে আদম সন্তান রোজা পালন, নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, ফিতরা, জাকাত প্রদান ও জিকির-আজকার ইত্যাদিতে মশগুল হয়ে তাকওয়া অর্জনে অধিক সচেষ্ট হতে পারে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল। যখন রমজান আসত, জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতে আসতেন, কুরআনের তালিম করতেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবাহিত বায়ু থেকেও অধিক হারে দান-খয়রাত ও নেক আমল করতেন।’ (বুখারি, হাদিস ৪৭১১; মুসলিম, হাদিস ২৩০৮)। 

আল্লাহর রহমত পেতে সৃষ্টির প্রতি দয়াশীল হতে হবে। আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো, আসমানওয়ালা খোদা তোমাদের প্রতি রহম করবেন।’ (বুখারি শরিফ)

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম


 

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়