ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

‘তুমি ঘাবড়িও না- আমার ছেলে বিপ্লবী, বিয়েটাও বিপ্লবী’

স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১১:৩০, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
‘তুমি ঘাবড়িও না- আমার ছেলে বিপ্লবী, বিয়েটাও বিপ্লবী’

১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ্ কায়সার। পান্না কায়সারের সঙ্গে তার বিয়ের দিন কারফিউ জারি ছিল। উনসত্তুরের গণ আন্দোলনে উত্তাল ছিল সারা দেশ।

বিয়ের ঠিক আগের দিন বিকেলে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। অনুষ্ঠানে যোগ দেন আত্মীয়-স্বজন। কথা ছিল পান্না কায়সারের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান পর্ব শেষে শহীদুল্লাহ্ কায়সারের গায়েহলুদ হবে। কিন্তু শহীদুল্লাহ্ কায়সার গায়েহলুদ মাখতে চাইছিলেন না। আত্মীয়-স্বজনের চাপে শেষ পর্যন্ত মাত্র একটি আঙুলে মেহেদি দিতে রাজি হয়েছিলেন।

ঢাকা শহর সেদিন মিছিলে মিছিলে সরগরম। এ শহর সেদিন ছিল মিছিলের শহর। বিকেলে কারফিউ জারি হলো। তাও আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য। বিক্ষোভে ফেটে পড়লো মুক্তিকামী মানুষ। রাজনৈতিক পরিবেশ মানুষকে ভীতস্থ করে তুলল। এদিকে শহীদুল্লাহ্ কায়সার আর পান্না কায়সারের বিয়ে তার পরের দিন। আত্মীয়-স্বজনরা তার আগের দিন বিকেলেই যে যার বাড়িতে চলে যান।

পান্না কায়সারের বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। একে অশুভ ইঙ্গিত মনে করে পান্না কায়সারের মা বলে দিলেন, বিয়ে হবে না। কিন্তু শহীদুল্লাহ্ কায়সারের মা নাছোড়বান্দা। কারফিউ পাস জোগাড় করে ফেললেন। নিজে আরো দুই-একজনকে সঙ্গে নিয়ে পান্না কায়সারের বাড়িতে হাজির হলেন। ছেলের বউয়ের কপালে এঁকে দিলেন হলুদের তিলক। আর বউমাকে বলে দিলেন, তুমি ঘাবড়িও না- আমার ছেলে বিপ্লবী, বিয়েটাও বিপ্লবী।

কারফিউ পাস নিয়ে শহীদুল্লাহ্ কায়সার সাধারণ পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে বরবেশে বিয়ে করতে  এলেন। সঙ্গে ছিলেন ফরহাদ গজনবী, আলী আকসাদ, জহির রায়হান, সুচন্দা, জাকারিয়া হাবিব ও বেবী। চা-নাস্তা খেয়ে বিয়ের পর্ব শেষ হলো। শহীদুল্লাহ্ কায়সারের হাত ধরে বিকেল ৪টায় শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠে বসলেন পান্না কায়সার। তারপর এক বিচিত্রময়, দুর্গম পথের যাত্রা শুরু হলো।

 

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে

ঢাকা/শান্ত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়