ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

রমজানে জাকাত আদায়ে অধিক সওয়াব

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ৭ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৩:৫৩, ৭ এপ্রিল ২০২৪
রমজানে জাকাত আদায়ে অধিক সওয়াব

ইসলামের অন্যতম একটি হলো জাকাত। শরীয়তের দৃষ্টিকোণে যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদ তথা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ বা সঞ্চয়ের মালিক হয় এবং তা এক বছর তার নিকট সঞ্চিত থাকে, তাহলে তার ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের প্রায় ৩২ জায়গায় জাকাত আদায়ের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি হলো জাকাত।

ইসলাম ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে জাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে এক ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি উপহার দিয়েছেন। দারিদ্র্য বিমোচন ও ধনী-গরীবের মাঝে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসিম। বছরের যেকোনো দিন জাকাত আদায় করা যায়। তবে মাহে রমজানে যেহেতু সব আমলেরই অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই অধিক সওয়াব লাভের আশায় অধিকাংশ মুসলিম রমজান মাসে জাকাত প্রদান করেন। এছাড়া জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বাৎসরিক হিসাব রাখা প্রয়োজন হয়, এজন্য রমজান থেকে রমজান হিসাব রাখা অধিকতর সহজ।

যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও জাকাত আদায় করে না, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর ও জাকাত আদায় কর এবং তোমরা নিজের জন্য যে নেকি অগ্রিম পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু করো, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তা প্রত্যক্ষ করেন।  (সূরা বাকারা, আয়াত:১১০)

মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আরও ইরশাদ করেন, আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (জাকাত আদায় করে না), আপনি তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন তা (জমাকৃত সম্পদ) জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে,   (সেদিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং যা জমা করেছিলে এখন তা আস্বাদন কর। (সূরা তাওবাহ, আয়াত:৩৪-৩৫)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। 
১. এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। 
২. নামজ কায়েম করা। 
৩. জাকাত আদায় করা। 
৪. হজ করা। 
৫. রমজান মাসে সিয়াম পালন করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস:৮)

প্রিয় পাঠক, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের মাঝে বিরাট বৈষম্য দেখা যায়। পুঁজিপতিরা সমাজের সিংহভাগ মানুষকে শোষণ করে বিরাট সম্পদের মালিক হয়। অন্যদিকে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির লোকেরা বঞ্চিত ও সর্বহারা হয়। অথচ ইসলাম ধনীদের সম্পদে বঞ্চিতদের অধিকার প্রদান করেছে এবং জাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদ গরীবদের মাঝে সুষ্ঠ বণ্টনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। কিন্তু অতি দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, সমাজের খুব কমসংখ্যক মানুষই সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করে। অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বড়ই উদাসিন, আবার অনেকে জাকাত আদায় করলেও সমুদয় সম্পদ হিসাব করে সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করে না। যদি আমাদের সমাজের বিত্তশালী ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা সঠিক পন্থায় ও সুপরিকল্পিতভাবে জাকাত প্রদান করেন, তাহলে এ দেশের বিরাট বঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়