ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

আমরা যেসব গাছের চারা রোপণ করতে পারি

দ্রাবিড় সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১০:১২, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
আমরা যেসব গাছের চারা রোপণ করতে পারি

এখন তীব্র গরম। প্রাকৃতিক শীতলতা পেতে গাছের চারা রোপণের প্রচুর কথাবার্তা চলছে। কিন্তু এখন গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় নয়! সেজন্য বর্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে  হবে। ততদিনে প্রকৃতি শীতলতা দিতে শুরু করবে। আশা করা যায়, এই বর্ষায় প্রচুর গাছের চারা রোপণ করা হবে। কিন্তু কী গাছের চারা রোপণ করবেন? ইউক্যালিপ্টাসের মতো গাছ গরম আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, আমাদের উত্তরবঙ্গ এর প্রমাণ পাচ্ছে। কারণ ইউক্যালিপ্টাস নিঃসরিত অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড বাতাসে তাপ ধরে রাখে, সুতরাং গাছ লাগিয়ে আপনি-আমি দেশের আরো ক্ষতির কারণ হতে পারি। যদি আসলেই আপনারা গাছের চারা রোপণ করতে চান, তাহলে দেশীয় প্রজাতিকে নির্বাচন করুন। সম্ভব হলে সেটি যেনো ফলের গাছের চারা হয়। ফলের গাছ আমাদের সবকিছু উজার করে দেবে। রেইন্ট্রি, ইউক্যালিপ্টাস, মেহগনি, একাশিয়া গাছ আমাদের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, এগুলো বর্জন করুন। 

প্রকৃতিকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে না দিলে প্রকৃতি তার যথাযথ শোধ নিবে, এর বাইরে যাওয়ার কোন পথ মানুষের প্রজ্ঞা-প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই নিজেদের বাঁচার স্বার্থেই প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে ভাবতে হবে। পরিসংখ্যানবিদরা বলে থাকেন একটি দেশের ভূমির শতকরা অন্তত পঁচিশ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। বাংলাদেশে এর এক তৃতীয়াংশও নাই। ধরা যাক, ব্যক্তি, সংগঠন, সরকারের উদ্যোগে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে পঁচিশ শতাংশ বনাঞ্চল তৈরি করে ফেললাম, এতেই কী পরিবেশ ঠিক হয়ে যাবে। তাপমাত্রা কমে আসবে? না। ভুল বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সেটা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয় এমন গাছ ক্রমাগত লাগাতে থাকলে বাস্তুসংস্থান, পরিবেশ-প্রতিবেশ, পুষ্টি, বৃক্ষ-অর্থনীতি, প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক, পাখি-পতঙ্গসহ জমির ফসল, পুকুরের মাছ, পশু খাদ্যের শৃংখলা সবকিছুতেই বিপর্যয় দেখা দেবে।

মেহগনি, ইউক্যালিপ্টাস, রেইনট্রি, একাশিয়া, শিশু ইত্যাদি আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর গাছ। যা আমাদের প্রাকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। ইউক্যালিপ্টাস গাছ লাগানোর ফলে মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। রেইনট্রি  ক্রমাগত কমিয়ে দিচ্ছে আমাদের ফসল ও মাছের উৎপাদন। মেহগনির বিষাক্ত ফল ও পাতা আমাদের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান ব্যাপকভাবে ধ্বংসের পিছনে প্রধানত দায়ী।  আমাদেরকে মানতে হবে যে, প্রতিটি বৃক্ষের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট আছে। এর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বাস্তুসংস্থানের সম্পর্ক। আমরা এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি, আসছে বর্ষায় দেশিয় ফলের গাছ লাগানোর। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে, মানুষ বাঁচবে, পশু ও পাখিরাও বাঁচবে। নিজেদের গাছের ফল আত্মীয়-প্রতিবেশীকে দেয়ার মাধ্যমে যে হৃদ্যতার সংস্কৃতি ছিল, ফিরে আসবে সেই হৃদ্যতাও। 

আমরা যেসব গাছের চারা রোপণ করতে পারি:

ফলদ গাছের তালিকা: আম, জাম, কাঁঠাল, গোলাপজাম, জামরুল, লিচু, পেয়ারা, কুল  বা  বড়ই, বেল, হরীতকী, বহেড়া,  আমলকী, তাল, খেজুর, ডেউয়া, চালতা, জলপাই, পানিফল, করমচা, কামরাঙা, সাজনা, জলপাই ইত্যাদি। পূর্বাঞ্চলে রোপণ করার জন্য সব থেকে ভালো হয় লেবু, মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, ডেফল, তৈকর, ডেউয়া, কুল, কামরাঙা, অরবরই, বিলম্বি ইত্যাদি। 

বনজ গাছের তালিকা: হিজল, উদাল, লোহাকাঠ, বৈলাম, রক্তন, কালিগর্জন, ঢালিগর্জন, সিভিট, ধূপ, কামদেব, রক্তন ,বুদ্ধনারকেল, টালি, চুন্দুল, ঢাকিজাম, চম্পা, শিমুল, চাপালিশ, মান্দার, পিতরাজ বা বৈদ্যিরাজ, চালমুগরা, ডেফল, নাগেশ্বর, কাও ফল বা ক্যাফল, ক্ষুদি জাম, ডুমুর, কড়ই, ধারমারা, তেজভাল, গামার, ছাতিম, মুসকুন্দচাপা, আসার, তেলসুর, পাদাউক, টুন বা তুন, বুরা, অশোক, বরমালা, বট, পাকুড়, অশত্থ, গয়া অশত্থ, নিম, কদম, কানাইডিঙ্গা, মহুয়া, খয়ের, বাঁশ, লটকন, কুচিলা, শাল,বরুন ইত্যাদি।

শোভাবর্ধক উদ্ভিদের তালিকা: কুরচি বা গিরিমল্লিকা, বকুল, কুসুম, ক্যারঞ্জা, মণিমালা, নীলমণিলতা, মধুমঞ্জরী লতা, মাধবীলতা, বসন্তমঞ্জরী, কাঠগোলাপ, গোলাপ, অশোক,  নাগলিঙ্গম, স্বর্নচাঁপা, পলাশ, সোনালু ইত্যাদি।

/লিপি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ