‘ন্যাসভ্যাক’ হেপাটাইটিস-বি’র চিকিৎসায় সর্বশেষ সংযোজন

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল জানান, ‘ন্যাসভ্যাক’ হচ্ছে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের চিকিৎসায় সর্বশেষ সংযোজন। এটি একটি থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন যা হেপাটাইটিস-বি’র চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ার ৭৮তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত স্পিকার হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এসব তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ভারতের আহমেদাবাদের মহাত্মা মন্দির কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভুপেন্দ্রভাই প্যাটেল। সম্মেলনে ডা. স্বপ্নীল ‘ন্যাসভ্যাক’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।
ডা. স্বপ্নীল জানান, সম্প্রতি ফন্টিয়ারর্স ইন মেডিসিন নামক পৃথিবীর একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল জার্নালে ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা পাওয়া রোগীদের চিকিৎসা শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পরের ফলোআপ প্রকাশিত হয়েছে। এই ফলোআপে দেখা যাচ্ছে, এসব রোগীরা ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার পাঁচ বছর পরও হেপাটাইটিস-বি’র অন্য কোনও ওষুধ গ্রহণ না করেও সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। ইতিপূর্বে ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের দুই এবং তিন বছরের ফলোআপ ডাটাও পৃথিবীর দুটো শীর্ষ জার্নাল প্যাথোজেন্স এবং ভ্যাকসিনস-এ প্রকাশিত হয় এবং সেখানেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।
অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল জানান, বর্তমানে হেপাটাইটিস-বি’র চিকিৎসায় যে সমস্ত নিউক্লিওসাইড ও নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ ওষুধ মুখে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো বহু বছর ধরে টানা ব্যবহার করতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে আজীবন। এরপরও কোনো কোনো রোগীর লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে না, আর যারা অনিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি যে শুধু অনেক বেশি তাই-ই নয়, বরং তাদের কারও কারও লিভার ফেইলিওরও ডেভেলপ করতে পারে। অন্যদিকে, ন্যাসভ্যাকের মাত্র দশটি ডোজ ছয় মাস ব্যবহার করে তাতেই এ ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, সম্প্রতি জাপানি বিশেষজ্ঞরাও সেদেশে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল হেপাটোলজি রিসার্চ নামের একটি শীর্ষস্থানীয় লিভার জার্নালে প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, ন্যাসভ্যাক নেওয়া জাপানি রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশের এই চিকিৎসায় হেপাটাইটিস-বি নেগেটিভ হয়ে গেছে এবং প্রায় সমসংখ্যক রোগীর প্রটেকটিভ অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে। হেপাটাইটিস-বি’র প্রচলিত ওষুধগুলো ব্যবহারে এ ধরনের ফলাফল প্রায় অচিন্তনীয়।
ন্যাসভ্যাক সম্পর্কে সাম্প্রতিক এই প্রকাশনাগুলো বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ন্যাসভ্যাক সম্বন্ধে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। আশা করা যাচ্ছে, বছর খানেকের মধ্যে ওষুধটি জাপানে অনুমোদন পেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে এই ওষুধটির হেপাটাইটিস-বি’র চিকিৎসায় গেইম চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নির্দিষ্ট মেয়াদে ওষুধ ব্যবহার করে যদি বেশিরভাগ হেপাটাইটিস- বি’র রোগী আশ্বস্ত থাকতে পারেন যে, তাদের লিভারটি ভালো থাকবে; তাহলে পৃথিবীর কোটি কোটি হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত রোগীর জন্য এর চেয়ে ভালো খবর আর কিছুই হতে পারে না বলেও জানান ড. স্বপ্নীল।
অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল বলেন, ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ার এবারের সম্মেলনে ন্যাসভ্যাকের উপর তার উপস্থাপিত বিশেষ লেকচারটি নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বাংলাদেশে এই অর্জনের একটি বড় স্বীকৃতি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ ১, ২ ও ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নেতৃত্বে সম্পাদিত হয়। ন্যাসভ্যাক উদ্ভাবনের জন্য অধ্যাপক স্বপ্নীল এবং জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবরসহ কয়েকজন জাপানি এবং কিউবান চিকিৎসাবিজ্ঞানী, কিউবান একাডেমি অব সাইন্সেস থেকে ২০১৯ সালে প্রিমিও ন্যাশনাল পদক অর্জন করেন। এ বিষয়ে গত বছর বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেস অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীলকে প্রদান করে ‘বাস গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’। এ ছাড়াও ডা. স্বপ্নীল ২০১৭ সালে অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ার একাডেমিক উইং ইন্ডিয়ান কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স থেকে সন্মানসূচক ফেলোশিপ (এফআইসিপি) অর্জন করেন।
মেয়া/এনএইচ
আরো পড়ুন