ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

দেশে এইডস শনাক্তে শীর্ষে ঢাকা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৯:৫৪, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
দেশে এইডস শনাক্তে শীর্ষে ঢাকা

ছবি: ইন্টারনেট

দেশের অন্য জেলার তুলনায় ঢাকায় এইডস রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এদিকে সিরাজগঞ্জে অস্বাভাবিকভাবে এইডস রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একসময় শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডস বেশি শনাক্ত হতো। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ রোগ শনাক্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইচআইভি এইডসের ২০২৩ সালের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে এক বছরে ১ হাজার ১০০ এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে কোনো বছর এত রোগী দেখা যায়নি। এ নিয়ে এইডসে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো প্রায় ১১ হাজার।

এর আগে ২০২০ সালে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৯৪৭ জন। এবার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চেয়ে সাধারণ মানুষ এইচআইভিতে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো রোগী শনাক্তের শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শনাক্ত হওয়া রোগী চিকিৎসা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।

এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আনুমানিক সাড়ে ১৪ হাজার রোগী রয়েছে। এসব রোগীর ৩৭ শতাংশ এখনও শনাক্তের বাইরে। আর চিকিৎসার বাইরে রয়েছে ২৩ শতাংশ রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রোগী শনাক্তের দিক থেকে ঢাকার পরে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। এর পরে চট্টগ্রাম বিভাগ। তবে সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে অস্বাভাবিক হারে এইডস রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত এক বছরে সেখানে ১৪৪ এইডস রোগী মিলেছে। যাদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই সুঁই-সিরিঞ্জের মাদকসেবী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচির তথ্য বলছে, বছরে নতুন শনাক্তদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অভিবাসী অথবা তাদের পরিবারের। মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে প্রবেশের আগেই এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরত আসার পর তাদের শনাক্তে বিমানবন্দরে ব্যবস্থা নেই।

২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আসা ১ হাজার ৫৪২ সন্দেহভাজন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের এইডস শনাক্ত হয়েছে। ২০২২ সালে এ হার ছিল ৬ শতাংশ। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির ৬৬ শতাংশই বিদেশ ফেরত। ২১ শতাংশ সমকামী। এইডস শনাক্ত হওয়া ১২ শতাংশ যক্ষ্মার রোগী। এদের ৬ শতাংশ রোহিঙ্গা। ৫ শতাংশ ব্যক্তির মা-বাবা থেকে এইচআইভি হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকরা বলছেন, এইচআইভি পজিটিভ ৯৮ শতাংশ মা সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন অধ্যাপক শামিউল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জে এইচআইভি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার কারণ সেখানে কর্মসূচি না থাকা।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধানে জেলা হাসপাতালে এইডস চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া একটি মেথাডন ক্লিনিক (বিকল্প মাদক চিকিৎসা) স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে সুই-সিরিঞ্জের পরিবর্তে আক্রান্তদের মুখে মাদক প্রদান করা হয়। এতে সুই-সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাত্রা কমে আসে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আর এইচআইভি ছড়ায় না।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এইডস রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আরিফুল বাশার বলেন, এ হাসপাতালে জটিল রোগীর সেবা দেওয়া হয়। তবে সংকট হলো, এসব রোগীর চিকিৎসায় যে ধরনের ল্যাব সুবিধা থাকা জরুরি, তা নেই। অনেক সময় এইডস আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচার ও হার্টের রিং পরানো প্রয়োজন হলেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে চায় না।

/পারভেজ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়