ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পশ্চিমবঙ্গে ভাষা আন্দোলনের ডাক মমতার

কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২১ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ২১:৫৬, ২১ জুলাই ২০২৫

ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষীদের ওপর হেনস্তার প্রতিবাদে সোমবার (২১ জুলাই) শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের ডাক দেন মমতা।

এদিন তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সার্কুলার জারি করে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানো ও জেলে ভরে রাখার ষড়যন্ত্র করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “জাতীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম যে বাংলায় হয়েছে, সেখানকার ভাষার ওপর আঘাত এলে তা মানা হবে না, প্রয়োজনে লড়াই যাবে দিল্লিতে।”

আরো পড়ুন:

প্রতি বছর একুশে জুলাইয়ের এই মেগা কর্মসূচি থেকে দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অভিমুখ ঠিক করে দেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার ২১ জুলাইয়ের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে। বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আসন্ন ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বনাম বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি হেনস্থার অভিযোগ। ৩৩তম ‘শহীদ তর্পণে’র মঞ্চ থেকে সেই ইস্যুকেই হাতিয়ার করে ভোটাধিকার ও নাগরিকত্বের রাজনীতিকেই সামনে আনল তৃণমূল। পাশাপাশি বাংলা বলার জন্য ভিন্ন রাজ্যে হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের ঢাক বাজিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান।

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, “বাংলা ভাষার উপরে সন্ত্রাস মানছি না, মানবো না। বাংলা ভাষা এশিয়াতে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সারা পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে এই বাংলা ভাষা। আর কোনো ভাষার এত ব্যাপ্তি নেই। সেই বাংলা ভাষার উপরে যদি অপমান হয়, অত্যাচার হয়, সন্ত্রাস হয় তবে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেব।” এসময় তিনি ঘোষণা দেন, “২৭ জুলাই থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হবে। সব ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে মিছিল মিটিং করতে হবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের রেজাল্ট বের না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।”

এদিনের সভা মঞ্চ থেকে বিভিন্ন নথি তুলে ধরে মমতা দাবি করেন, “এটা হচ্ছে ভারত সরকারের সেই নোটিফিকেশন। এটা বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলোকে পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যাকেই সন্দেহ হবে, একমাস ডিটেনশন ক্যাম্প বা হোল্ডিং কাম্প করে আটকে রাখতে পারবে। যার জন্য প্রায় ১০০০ এর বেশি মানুষ- তাদের কাউকে কাউকে রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ বা ওড়িশার কারাগারে রাখা হয়েছে। কাউকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমি এখনো জানিনা বাংলাদেশে কত লোককে ফেরত পাঠানো হয়েছে।” 

বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, “তাদের দলের এক নেতা বলছে এরাজ্যে ১৭ লাখ রোহিঙ্গা আছে। ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম নাকি বাদ দিতে হবে। আমার প্রশ্ন সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কত? জাতিসংঘ শেষ জানিয়েছিল গোটা পৃথিবীতে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে। এখন বড়জোর বেড়ে ১৩-১৪ লাখ হতে পারে। তাহলে ১৭ লাখ পেলেন কোথায়? তারা তো সকলে মিয়ানমারের নাগরিক।” মমতা বলেন, “বাংলা ভাষার ওপর সন্ত্রাস চলছে।” এরই সঙ্গে তিনি আবার বলেন, “বিজেপি এখন ঠিক করে দিতে চায় যে কে কী খাবে, কে মাছ খাবে, কে কার মাথা খাবে।” মমতা বলেন, “যাকে যাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করা হয়েছিল, তাদের মামলা করে ছাড়িয়ে এনেছি আমরা। এরা বাংলা ভাষায় কথা বলত বলে আটক রাখা হয়েছিল।”

মমতা বলেন, “আমাদের কোনো ভাষার বিরুদ্ধে সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলার ওপর কেন সন্ত্রাস হবে। বাংলা বলার জন্য যদি কোনো বাঙালিকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে আমি ছেড়ে কথা বলব না। প্রয়োজনে এই লড়াই দিল্লি অবধি নিয়ে যাব। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আপনারা জানেন আমি কোনো লড়াই লড়লে শেষ দেখে ছাড়ি।”

ধর্মতলার সমাবেশ মঞ্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “আসামের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তিনি আসামকে সামলাতে পারছেন না, অথচ বাংলায় নাক গলাচ্ছেন। নাক গলানো বন্ধ করুন। নয়তো এমন আন্দোলন গড়ে তুলব, সবাই যাব আসামে। দেখি কত ডিটেনশন ক্যাম্প, জেলে আমাদের ভরতে পারে।” 

বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এদিন মমতা বলেন, “সবাইকে জেলে ভরে দিচ্ছেন! কিন্তু মনে রাখবেন, আগামী দিনে মানুষই গণতন্ত্রের রায়ে আপনাদের জেলে ভরে দেবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অবিচার’ ও ‘বদলার রাজনীতি’ এখন চরমে পৌঁছেছে।”

এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর চরম হুঁশিয়ারি, “শহীদ মঞ্চ থেকে দিল্লিকে উৎখাত করার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম, তোমাদের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই থামবে না। যেদিন দিল্লিতে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে বিসর্জন দেব, সেদিন এই লড়াই থামবে।”

নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়েও তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিহারে ৪০ লাখ মানুষকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাতেও করতে চাইছে। এটা করলে আমরা ঘেরাও কর্মসূচি করব। নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করব। আমরা এটা কিছুতেই হতে দেব না। গোটা বাংলা জুড়ে ঘেরাও কর্মসূচি হবে। প্রয়োজনে দিল্লিতেও আন্দোলন হবে।” 

আগামী বছর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশ্যের মমতার বার্তা, “২০২৬ চালের বিধানসভা নির্বাচনে আরো বেশি আসন নিয়ে আমাদের জিততে হবে। ওই জয়ের পর আমাদের লক্ষ্য হবে দিল্লির লড়াই। দিল্লি থেকে বিজেপিকে হটাতে হবে।” 

দুই দিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন তা নিয়ে মমতার পাল্টা অভিমত, “বাংলাকে বদলাতে গিয়ে ভারত সরকারের বদল হবে না তো? বাংলাতে তো পরিবর্তন হয়ে গেছে, নতুন করে বদল করার দরকার নেই। আগামী দিনে দিল্লিতে পরিবর্তন করতে হবে। দিল্লিতে উৎখাত করার জন্য আজকে বাংলাতে তার ভিত্তিপ্রস্তর করলাম।” 

অনুপ্রবেশ ইস্যুতেও এদিন মোদি সরকারকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ধর্মের নামে ভেদাভেদ’ করার অভিযোগও আনেন মমতা। বলেন, “মানুষকে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করে নিজের রাজনীতি বাঁচাতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু বাংলার মানুষ সেটা মেনে নেবে না। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। বাংলা বিভাজনের রাজনীতি মানে না।”

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়