ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বাবার ভালোবাসাই কাল হলো ছেলের

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
বাবার ভালোবাসাই কাল হলো ছেলের

সাইম। ছবি: সংগৃহীত

সাইমকে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো মাহবুল-ছালমা দম্পতির। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জন্ডিসে মারা যান ছালমা। সাইম হয়ে পড়েন অসহায়। বাবা ছাড়া কারো কাছেই থাকতে চায় না সে। বাবাও সাইমকে ছাড়া দূরে থাকতে পারেন না।

এদিকে সাইমের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রেশমা খাতুনকে বিয়ে করেন মাহবুল। কিন্তু বাবা-ছেলের খুঁনসুটি সইতে পারছিলেন না রেশমা। ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শংকর এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সাইম বাবুকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগে ওঠে সৎ মা মোছা. রেশমা খাতুনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাইমের বাবা মাহবুল ইসলাম মামলা করেন। গ্রেপ্তার রেশমা খাতুন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলাটি তদন্ত করছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ মাহফুজার রহমান বলেন, সাইম বাবুকে তার সৎ মা রেশমা খাতুন বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যার কথা স্বীকার করেছে আসামি।

খুনের কারণ জানতে চাইলে মাহফুজার রহমান বলেন, মামলার বাদী মাহবুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী ছেলে সাইমকে রেখে চার মাস আগে মারা যান। দুই মাস আগে আসামি রেশমাকে বিয়ে করেন। তারও আগে একটি বিয়ে ছিলো। ওই সংসারে চার বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। বিয়ের শর্ত ছিলো, দুজন দুজনের ছেলে-মেয়েকে মেনে নিবে। কয়েকদিন আগে রেশমার মেয়ে ঢাকায় আসেন। মেয়েকে মাহবুল নতুন জামা কিনে দেয়নি। এটা একটা ক্ষোভ। আর মাহবুল ছেলে সাইমকে বেশি ভালোবাসতো। এটা তার স্ত্রী মেনে নিতে পারেননি। এজন্য সাইমকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। আসামি একাই শিশুটাকে হত্যা করে। মামলার তদন্ত চলছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করবো।

সাইমের বাবা মাহবুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগে জন্ডিসে আমার প্রথম স্ত্রী মারা যান। ডিসেম্বর প্রথম স্ত্রীর খালাতো বোন রেশমা বিয়ে করি। ছেলেটার আমি ছাড়া আর কেউ নাই। এজন্য ওকে আমি একটু বেশিই ভালোবাসি। এটাই কি আমার অপরাধ। ওর মা, বাবা সবই আমি। এজন্য রেশমাকে একটু সময় কম দিতাম। ছেলেটাকে একটু বেশি সময় দিতাম। ছেলেটাও আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না।

তিনি বলেন, সাইমের মা মারা যাওয়ার পর ওকে ওর ফুফুর কাছে রেখে এসেছিলাম। ও আমার কাছে থাকতে চায়। আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। কান্নাকাটি করে। পরে আমার কাছে নিয়ে আসি। ১৫ দিন আগে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেই। ছেলেটা একটা নতুন পাঞ্জাবি কিনে দিতে বলে। বলে, আব্বু তুমি আমাকে একটা নতুন পাঞ্জাবি কিনে দাও। আমি পাঞ্জাবি পড়ে মাদ্রাসায় যাবো। মায়ের জন্য দোয়া করবো। দেখবে আম্মু আমার কাছে চলে আসবে।

মাহবুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনের মতো ওকে সকালে মাদ্রাসায় দিয়ে আসি। আমি কাজে চলে যাই। ওর মাকে ফোন দিয়ে বলি ছেলেকে আনার জন্য। আনতেও যায়। আনার সময় এক প্যাকেট চিপস কিনে দেয়। সেটা নিয়ে নাচতে নাচতে ও বাসায় আসে। অর্ধেকটা খায়। বাকি অর্ধেক টিভির ওপর রেখে দেয়।

রুমে সিসি ক্যামেরা রয়েছে উল্লেখ করে মাহবুল ইসলাম বলেন, ছেলেটা বাঁচার জন্য চেষ্টা করেছিল। ছেলেকে বেশি ভালোবাসি এটাই আপরাধ। আমি ওর ফাঁসি চাই। সাত বছরের বাচ্চা, কোরআন শিখছে। ছেলেটা যদি ওর ভালো না লাগতো আমাকে বলতো। বাচ্চাকে থাপ্পড় মারতো, লাথি দিতো, সিঁড়ি থেকে ফেলে দিতো। তাও তো ছেলেটা আমার কাছে থাকতে পারতো। বাবা ছেলেকে ভালোবাসে এটাই কি কাল হলো।

মেয়েকে জামা না কিনে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুল বলেন, বেতন পাইনি, তাই কিনে দিতে পারিনি। আমি আমার ছেলেকে পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছি এতে ওর আঘাত লাগে। এজন্য আমার ছেলেটাকে ও এভাবে মারবে।

ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে মাহবুল বলেন, ছেলেকে তো ও খুন করেছে। ওকে বলি, দেখ তুই সত্য স্বীকার কর। তাহলে আমার ছেলেটাকে কাটাছেঁড়া করা লাগবে না। পরে ও পুলিশকে বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিতে। পুলিশের কাছে বলে, সাইমকে বালিশ চাপা দিয়ে বুকের ওপর বসেছিল। ৫ মিনিট পর মায়া লাগে। পরে নেমে যায়।

সাইমকে হত্যার ঘটনায় বাবা মাহবুল ইসলাম হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেন, সাইম বাবুকে রেখে তার মা ছালমা বেগম গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান। ডিসেম্বর ছালমার খালাকো রেশমা খাতুনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মাহবুল। ছেলেকে নিয়ে তারা হাজারীবাগের শংকর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সাইম জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়তো। প্রতিদিনের ন্যায় ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে সাইমকে মাদ্রাসায় দিয়ে ডিউটিতে যান মাহবুল। বেলা সোয়া ১১ টার দিকে রেশমা সাইমকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসে। দুপুর ২টার দিকে রেশমা মাহবুলকে ফোন করে জানায়, ছেলের চোখ মুখ কালো হয়ে গেছে, দ্রুত বাসায় আসুন। আড়াইটার দিকে মাহবুল বাসায় এসে দেখেন সাইম মৃত অবস্থায় খাটে শুয়ে আছে। তার মুখমন্ডল, নাকে, গলায় ডান ও বাম গালে চাপা আঘাত এবং বুকে চাপা আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত জমাট ছিল।

বাদীর অভিযোগ, সাইম ঘুমিয়ে পড়লে আসামি রেশমা মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। 

/মামুন/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়