ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

‘এই সরকারের আমলে মামলার তদন্ত এত দেরি হবে, ভাবতেই পারিনি’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ৭ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১০:৩৪, ৭ আগস্ট ২০২৩
‘এই সরকারের আমলে মামলার তদন্ত এত দেরি হবে, ভাবতেই পারিনি’

সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মনির (ছবি: সংগৃহীত)

‘আমার ছেলে এভাবে মারা যাবে, চলে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি। আবার মামলার তদন্ত যে এতো দেরি হবে, তাও আবার এই সরকারে আমলে সেটা ভাবতেই পারেনি।’

১১ বছরের অধিক সময় পার হলেও ছেলে হত্যার বিচার না পাওয়া এভাবেই দুঃখ প্রকাশ করেন নিহত সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির। 

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন  সাগর সরওয়ার ও  মেহেরুন রুনি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব। এখন পর্যন্ত ৯৯ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি। সর্বশেষ গত ২২ জুন মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিল। কিন্তু ওইদিন র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট শফি উদ্দিনের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ৭ আগস্ট ধার্য করেন। সোমবার র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারলে প্রতিবেদন দাখিল পেছানোর সেঞ্চুরি হবে আলোচিত এ মামলার।

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, সোমবার প্রতিবেদন না দিলে ১০০ বারের মতো দিন পোছাবে। কী আর বলবো, রেকর্ড তৈরি করতে যাচ্ছে। মামলার তদন্ত কী হচ্ছে গত ৩/৪ বছর ধরে আমি কিছুই জানি না। কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি। এখন তদন্ত কর্মকর্তা কে আসেন তাও চিনি না। সাগরের মা যে বেঁচে আছে, ছেলে বেঁচে আছে এখানকার কর্মকর্তা মনে হয় জানেন না। আমার ছেলেকে তো আর ফেরত পাবো না, এজন্য বিচার চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমার একটাই কথা, ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার মৃত্যু'র আগে হলেও দেখে যেতে চাই সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচার। আমি এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কবর জিয়ারত করতে যায়নি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, যেদিন আমার ছেলের হত্যাকারীদের দেখবো, বিচার দেখে যেতে পারবো, ওইদিন কবর জিয়ারত করবো। এর আগে যদি আমার মৃত্যুও হয়, হোক। এরপরেও খুনিদের না দেখে আমি ছেলের কবর জিয়ারত করতে যাবো না। 

সাগর-রুনির ছেলে মেঘের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ও এখন আমার অনেক খোঁজ খবর রাখে। আমার কোলে এসে শুয়ে থাকে। মেঘ এখন ফুফুর হাতে ছাড়া ভাত খায় না। বাবা-মায়ের কাছে যেমনটি আদর পায়, মেঘ সে রকমই আদর চায়। আমার ছেলে এভাবে মারা যাবে, চলে যাবে কল্পনা করতে পারেনি। আবার মামলা যে এতো দেরি হবে, এই সরকারের আমলেই সেটাও ভাবতে পারিনি। র‌্যাব তো সব জানে। প্রতিবেদন জমা দিলেই হয়। সোজা কথা আমার ছেলের খুনিকে দেখে যেতে চাই। তাদের শাস্তি হবে কিনা জানি না। তবে খুনিদের দেখে যেতে চাই, কেন আমার ছেলেকে খুন করলো, কিসের জন্য করেছে। কত খুনের বিচার হচ্ছে, ক্লুলেস কত মামলায় বিচার হচ্ছে। কিন্তু সাগর-রুনির বেলায় এমন হচ্ছে কেন আমার বোধগম্য নয়। 

মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, শত বারেও মামলার প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারা  এটা শুধু আমাদের ক্ষেত্রে নয়, সারা দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক কথা। সরকার চাইলে সত্য ঘটনা বের করতে পারে। সেখানে ১০০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা, আর সেই সময়ও মঞ্জুর হচ্ছে। অথচ তারা এলিট ফোর্স দাবি করেন। সেখানে সাধারণ মানুষ কার কাছে বিচার চাইবে। আরও দুঃখজনক বিষয় তারা ছোট্ট খাটো বিষয়গুলো নিয়ে বড় করে প্রেস ব্রিফিং করে। অথচ আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে কোনো কাজ দেখাতে পারলো না। গত ১২ বছর ধরে মামলাটির প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়ে নিচ্ছে এটা একটি লজ্জাজনক বিষয়। প্রতিবেদন জমা না দেওয়া একটি ব্যাড সংস্কৃতি চালু হয়ে যাচ্ছে। দেশে কোনো কিছু করলেও বিচার হয় না এটাই মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত অপরাধী বের হয়ে আসুক, আর আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি হোক। আমাদের এটাই দাবি।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি নিজ বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ