ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

৩৮ লাখ টাকার সোনা চুরির মামলার তদন্তে নাটকীয় মোড়

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২০ অক্টোবর ২০২৩  
৩৮ লাখ টাকার সোনা চুরির মামলার তদন্তে নাটকীয় মোড়

সিরামিকস ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদ স্বপন পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড এলাকায়। সম্প্রতি তার বাসা থেকে ৩৮ ভরি সোনা চুরি হয়। এসব সোনার দাম প্রায় ৩৮ লাখ টাকা।

সোনা চুরির ঘটনায় বাড়ির দারোয়ান মো. সেলিম ও তোফাজ্জল হোসেনকে আসামি করে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেন সুলতান আহম্মেদ। গ্রেপ্তার করা হয় দুই দারোয়ানকে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে, তাদের কাছ থেকে সোনা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। চারদিক বিচার-বিশ্লেষণ করে মামলার তদন্ত চালিয়ে যায় পুলিশ। মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। সিসিটিভির ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায়, ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে ওই বাসায় আসেন সুলতান আহম্মেদের খালাতো বোনের মেয়ে মিথিলা আহম্মেদ। পরদিন ভোরে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখার পর পুলিশ মিথিলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ’র বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে ১২ লাখ ২২ হাজার ১৪০ টাকা দামের প্রায় ১৫ ভরি সোনা জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় মিথিলাকে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

এদিকে, সেলিম ও তোফাজ্জলের আইনজীবীরা বলছেন, বিনা অপরাধে ২০ দিনের বেশি কারাগারে ছিলেন সেলিম ও তোফাজ্জল। বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালত ২ হাজার টাকা মুচলেকায় সেলিম ও তোফাজ্জলের জামিনের আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার তারা কারামুক্ত হন। এখন তারা মামলা থেকে মুক্তি চান। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত শেষে জানা যাবে, কারা দোষী আর কারা নির্দোষ।

সেলিমের আইনজীবী নোমান জাবেদ বলেন, সুলতান আহম্মেদের স্ত্রী সেলিমা বেগম ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাবার বাড়ি যান। সুলতান আহম্মেদ যান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। যাওয়ার সময় সেলিমা বেগম সেলিমের কাছে বাসার চাবি দিয়ে যান। বিকেলে সেলিম গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় তোফাজ্জলের কাছে ওই চাবি দিয়ে যান। রাতে সুলতান আহম্মেদ বাড়িতে ফেরেন। তখন তার সাথে একজন মহিলা আসেন। ওই মহিলা ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে বের হয়ে যান। ১৬ সেপ্টেম্বর সেলিমা বেগম ফিরে আসেন।

তিনি বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর সেলিমা বেগম বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। তিনি আলমারির লকার খুলে দেখেন, সোনা নেই। পরে সেলিম ও তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে সুলতান আহম্মেদ নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন। তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের কাছ থেকে কোনো মাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কারণ, তারা তো ঘটনার সাথে জড়িত না। কূল-কিনারা না পেয়ে পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে। ফুটেজে মিথিলা নামের ওই নারীকে দেখা যায়। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সোনা চুরির কথা স্বীকার করেন।

আইনজীবী আরও বলেন, নিরীহ দুটি লোককে অযথা হয়রানি করতে মামলা করা হয়েছে। কোনো অপরাধ না করেই ২০ দিন তারা কারাগারে ছিলেন। সুলতান আহম্মেদ নিরীহ দুজন ব্যক্তিকে ভিকটিমাইজড করেছেন। এতে তাদের পরিবারও সাফারার হয়েছে। তারা আদালতের বারান্দায় ঘুরেছেন।

সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলা করার কথা জানান অ্যাডভোকেট নোমান জাবেদ।

মামলার বাদী সুলতান আহম্মেদ স্বপন বলেন, এটার তো সমাধান হয়ে গেছে। দারোয়ান দুজন মুক্তি পেয়েছেন। কারণ, তারা নির্দোষ। প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত হয়েছে এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

জেনে-শুনে কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন, এমন প্রশ্নে কিছুটা বিরক্তি হন সুলতান আহম্মদ। তিনি বলেন, মামলা তদন্তাধীন। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউ মার্কেট থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বলেন, ৩৮ ভরি সোনা চুরির ঘটনায় দুই দারোয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নাম মিথিলা আহম্মেদ। তিনি সুলতান আহম্মেদের খালাতো বোনের মেয়ে। তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে এসে ওই বাসায় থাকেন। ভোরে বাসা থেকে বের হয় যান। এত সকালে ওই মহিলা বের হয়ে গেলো, অথচ দারোয়ান তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলো না। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছু সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, মিথিলার একটা মেয়ে আছে। সে অসুস্থ। মেয়ের চিকিৎসায় অনেক টাকা ব্যয় হয়। চিকিৎসার টাকার জন্য তিনি চুরি করেছেন বলে জানিয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। এটা একটা বড় ঘটনা। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে তদন্ত চলছে। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ইমিডিয়েটলি আদালতে চার্জশিট জমা দেবো।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ