ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

ডিবি খুঁজে পায়নি, বাবা-মার সঙ্গে আদালতে সেই শিশু

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ৯ মে ২০২৪  
ডিবি খুঁজে পায়নি, বাবা-মার সঙ্গে আদালতে সেই শিশু

মিল্টন সমাদ্দারকে সঙ্গে নিয়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েও ডিবি পুলিশ যে শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারেনি, সেই শিশুকে আজ আদালতের কাঠগড়ায় তার পালিত বাবা-মার সঙ্গে দেখা গেছে। এর মধ্যে দিয়ে শিশুটিকে অন্যত্র পাচার বা বিক্রি করে দেয়ার বাদীর আশঙ্কা দূর হলো।  

শিশুটির পালিত বাবা-মা জসিম বাবুর্চি এবং সুমি বেগমকে আজ আদালতে উপস্থাপন করেন মিল্টন সমাদ্দারের আইনজীবী। এ সময় শিশুটিকে কোলে নিয়েই কাঠগড়ায় দাঁড়ান জসিম। এ সময় সুমি বেগমও শিশুটির সঙ্গে ছিলেন। 

চার বছর আগে শিশুটিকে মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমে দেন ধানমন্ডির বাসিন্দা এম রাকিব। সেই শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগে সম্প্রতি আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করা হয়। মামলায় মিল্টন সমাদ্দারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। 

আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে  আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

আবেদনে তিনি বলেন, রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার স্বীকার করেন, ওই শিশু অর্থাৎ মামলার ভিকটিমকে মিরপুর এলাকার জসিম বাবুর্চি নামে এক ব্যক্তিকে তিনি দান করেছেন। তবে তিনি বিধি মোতাবেক আদালতের অনুমতি না নিয়ে, মামলার বাদীকে অবহিত না করে শিশুটিকে দান করেছেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে জসিম বাবুর্চির বাসায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে জসিম বাবুর্চির ভাইয়ের বাসা সাভারেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকেও শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন শিশুটিকে অন্যত্র পাচার বা বিক্রি করে দেয়ার আশঙ্কা জোড়ালো হয়ে ওঠে।  

আদালতে মিল্টন সমাদ্দারের পক্ষে আব্দুস ছালাম শিকদার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলা নগর থানার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে দুই বছরের এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন মামলার বাদী এম রাকিব। পরে তিনি পুলিশকে ফোন দেন। পুলিশ কোনো স্টেপ নেয়নি। পরে তিনি মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমের কথা জানতে পেরে সেখানে যোগাযোগ করেন। মিল্টন সমাদ্দার আশ্রম থেকে লোক পাঠিয়ে গাড়ি দিয়ে শিশুটিকে নিয়ে যান এবং বাদীকে রশিদ দেন। 

আদালতে ছালাম শিকদার প্রশ্ন রেখে বলেন, এর মধ্যে কোনো অন্যায় আছে? লোভ আছে? পুলিশ যদি সেদিন শিশুটির দায়িত্ব নিতো তাহলে মিল্টন সমাদ্দারের কিছু করতে হতো না। তাকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হয়েছে। শিশুটির মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। 

আইনজীবী বলেন, বাবুর্চি জসিম এবং তার স্ত্রী সুমি বেগম নিঃসন্তান। তারা শিশুটিকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। বাচ্চাকে নেওয়া অঙ্গীকারনামায় আদালতের সীল রয়েছে। শিশুটিকে তারা মাতৃস্নেহে বড় করছে। কি অন্যায় করলো তারা? অথচ মামলা হলো মানবপাচার আইনের ১০ (২) ধারায়! অপহরণ বা পাচার কিছুই হয়নি। আর যাকে নিয়ে মামলা সেই বাচ্চা তো আদালতে আছে।

শিশুটিকে যে আদালতে হাজির করা হয়েছে তা আদেশে উল্লেখ করার অনুরোধ জানান এই আইনজীবী।

শুনানি শেষে আদালত আদেশ অপেক্ষমান রাখেন। পরে আদালত জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে মিল্টন সমাদ্দারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গত ১ মে মিরপুর মডেল থানায় মিল্টন সমাদ্দারের নামে মামলা করেন  এম রাকিব। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে দুই বছরের এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনি থানায় ফোন করেন। কিন্তু থানা পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এ ফোন করলে মিল্টন সমাদ্দার শিশুটিকে নিয়ে যান। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ একদিন ফোন করে মিল্টন সমাদ্দার বাদীকে গালিগালাজ করেন এবং বলেন সে যেন তার প্রতিষ্ঠানে আর না যায় এবং শিশুটির খোঁজখবর না রাখে। সম্প্রতি একটি খবর নজরে আসায় তিনি গত ২৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিশুটির খোঁজ করেন। কিন্তু শিশুটিকে না-পেয়ে মামলা দায়ের করেন। 

উল্লেখ্য, গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জাল মৃত্যু সনদ তৈরি, টর্চার সেলে মানুষজনকে নির্যাতন ও মানবপাচারের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।  

মামুন/তারা 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়