ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিপক্ষে ৯ দেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৭:৫২, ২ জানুয়ারি ২০২১
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিপক্ষে ৯ দেশ

রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি)

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়াসহ প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি সংক্রান্ত এক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৯টি দেশ। এর মাধ‌্যমে এসব দেশ মিয়ানমারের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানালো। দেশগুলো হলো, ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় সূত্র এই তথ‌্য জানিয়েছে। 

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ১৩০ ভোট পড়ে। আর ওই প্রস্তাবের পক্ষে পড়েছে ৯টি ভোট। অথচ ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অবস্থান না নিয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছিল ওই ৯ দেশ।

‘আনান কমিশন’ নামে পরিচিত রাখাইনবিষয়ক সাবেক পরামর্শক কমিশনের অন্যতম সদস্য ও ডাচ কূটনীতিক লেটেশিয়া ভ্যান্ডেন অ্যাসাম শুক্রবার (১ জানুয়ারি) টুইটে ভোটাভুটি বিশ্লেষণ করে বলেছেন, ২০১৯ সালের প্রস্তাবের ভোটাভুটির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ৯টি দেশ তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এই ৯টি দেশ এবার প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ মিয়ানমারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ওই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের বিপক্ষে  (মিয়ানমারের পক্ষে) ভোট দিয়েছে মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে। আর ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও জাপানসহ ২৫টি দেশ প্রস্তাবের ভোটাভুটি থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) গত বছরের নভেম্বর জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে ওই প্রস্তাবটি আনে। ইইউ এবং ওআইসির প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরুর প্রসঙ্গ এবং রোহিঙ্গা ও সংখ্যালঘু অন্য জনগোষ্ঠীদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিসহ আরও কিছু বিষয়ে মিয়ানমারকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ওই প্রস্তাবে বলা হয়।

নিউইয়র্কের কূটনীতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত নভেম্বরে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে মিয়ানমারের বিরোধিতার পরও ইইউ-ওআইসির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।  ওই প্রস্তাবের ওপর এবার বছরের শেষ দিনের কর্ম অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও মিয়ানমার বিরোধিতা করে। 
জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে প্রস্তাবটি নিয়ে সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এই নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানায়। এবারের ভোটাভুটিতে তৃতীয় কমিটির চেয়ে কম ভোট পেয়েছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের বিরুদ্ধে তৃতীয় কমিটির নেওয়া প্রস্তাব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৮তম প্লেনারি অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে প্লেনারি অধিবেশনের সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এই নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানায়।

যথারীতি জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াউ মো তুন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির ফল ভালো হবে না।’ এই চাপকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার প্রশ্নে জাতিসংঘকে ব্যবহারসহ চাপ দেওয়াকে মিয়ানমার মেনে নেবে না।’ এই প্রস্তাব রাখাইন রাজ্যে সংকট সমাধানে কোনো কাজে আসবে না বলেও তিনি জানান।

হাসান/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়