ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঈদ শপিংয়ে উপচেপড়া ভিড়, চরম ক্ষতির শঙ্কা

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১৩ মে ২০২১   আপডেট: ১৯:৫৪, ১৩ মে ২০২১
ঈদ শপিংয়ে উপচেপড়া ভিড়, চরম ক্ষতির শঙ্কা

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও ঈদের আগের দিন বেড়েছে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড়।  তবে, এসব ক্রেতার বেশিরভাগই শারীরিক দূরত্ব মানছে না। বিপণিবিতানগুলোতে মাস্ক ছাড়া কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের। এতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এখন যে স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, এর  ফল পাওয়া যাবে কিছুদিন পর। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের ফলে করোনা পরিস্থিতির যদি আরও খারাপের দিকে যায়, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এর মধ্যে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। সেটিও একটি আতঙ্কের বিষয়। পরবর্তী সময়ে যারা ঢাকায় ফিরবেন, তাদের ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় করোনা নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য হতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে  দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে জামা-কাপড়, জুতা, প্রসাধনীর দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। কেউ স্বাস্থ‌্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। পাল্লা দিয়ে ভিড়ের মাঝেই কেনাকাটা করছেন সবাই। ক্রেতাদের ভিড় দেখে মোটেও অসন্তোষ নন বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, বছরে দুটি মাত্র ঈদ। এরমধ্যে রোজার ঈদে হচ্ছে আমাদের অন্যতম উপলক্ষ। এই ঈদে বেচা-কেনা বেশি হয়। তবে গত দুই বছর ধরে করোনার কারণে বিক্রিতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকি এই মাসের জন্য। ঈদে বিক্রি বাড়বে প্রত্যাশা থাকে। শেষ সময়ে এসে মানুষ কেনাকাটা করছে। বিক্রি হওয়াতে ভালোই লাগছে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অধিকাংশ ক্রেতা গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটা করছেন। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকলেও অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। তবে এই ক্ষেত্রে ক্রেতাদের অজুহাতের কোনো শেষ নেই। নানা অজুহাতে তারা মাস্ক ছাড়াই মার্কেটে ঢুকছেন, কেনাকাটা করছেন।

নাদিয়া আক্তার এক ছেলে ও দুই মেয়ের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন নিউমার্কেটে। মাস্ক না পরার কার‍ণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোজা রেখে মাস্ক ব্যবহার করতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া গরমও পড়ছে খুব। তাই মাস্ক পরতে কষ্ট হয়।’

মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে আসা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর করোনার কারণে এই দিনটিতে আনন্দ করতে পারিনি। তাই এবার একটু কেনাকাটা করতে এলাম। যতটা সম্ভব স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে কেনাকাটা করার চেষ্টা করছি।’

মাহমুদা খাতুন  নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বছরে একটি ঈদের কেনাকাটা করি। বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। তবে, কেউ  স্বাস্থ্যবিধি  মানছেন না। কয়েকজন মেনে কী হবে?’

শাহ আলী মার্কেটের বিক্রেতা সাজ ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী নিলয় বলেন, ‘ক্রেতারা যেন মাস্ক পরেন, সে চেষ্টা করছি। অনেকেই মানতে চান না। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না।’

গাউছিয়া মার্কেটের রহমানিয়া ক্লথ হাউজের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরে লেখা আছে, যেন সবাই স্বাস্থবিধি মেনেই ভেতরে আসেন। কেউ কেউ মানেন। আবার অনেকে মানেন না। শেষ সময়ের বিক্রি এটি নিয়ে বেশি বলাবলির সময়ও নেই।’

আরেক দোকান মালিক আল আমিন বলেন, ‘আমরা যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করলে কেউ মানছেন, কেউ মানছেন না।’

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘করোনা এখন ভয়াবহ অবস্থায় আছে। এ মহামারি থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মাস্কবিহীন চলাফেরায় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সবাইকে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। না হয় ঈদ পরবর্তী সময়ে এর ফল খারাপ হতে পারে।’

করোনা মোকাবিলায় জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরাটা বাধ‌্যতামূলক করতে হবে। দূরত্ব মানতেই হবে। একটা দোকানের সামনে ১০ ফুট জায়গা আছে, সেখানে দুজন খরিদ্দার যেন থাকেন। দুই জনের কাজ শেষ হয়ে গেলে আরও দুই জন আসবেন। এটা নিশ্চিত করতে আরও বেশি তৎপরতার দরকার ছিল।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘শুধু লকডাউন বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে লাভ হবে না। এর মাধ্যমে সর্বস্তরে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’

/ইয়ামিন/এনই/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়