ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কর্মক্ষেত্রে নারী অর্থনীতির পট পরিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ৮ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৩:৪৯, ৮ মার্চ ২০২২
কর্মক্ষেত্রে নারী অর্থনীতির পট পরিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক

ছবি: রাইজিংবিডি

বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচক গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ অর্থনীতিতে নারীদের অবদান বাড়ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশে অর্থনীতির পট পরিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। এই পাঁচ দশকে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতায় বড় অবদান রেখেছেন নারীরা।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি নারী ও পুরুষ কর্মজীবী। গড় হার পুরুষ ৭০ শতাংশ ও নারী ৩০ শতাংশ। কৃষি ও তৈরি পোশাক কারখানায় (গার্মেন্টস) ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ার আনুপাতিক হারে নারীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। 

জন প্রশাসন ও অন্যান্য চাকরিতে নারী পুরুষের আনুপাতিক হার এখনও ৫০: ৫০ হয়নি। দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং নারীর কাজের গতি পুরুষের চেয়ে বেশি হওয়ায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের ৫ম অধ্যায়ে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হয়েছে নির্ধারিত সময়েই তা অর্জিত হবে।

এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে নারী কর্মজীবী নেই। জন প্রশাসন, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, স্বশস্ত্র বাহিনী, সিভিল এভিয়েশন, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, স্বাস্থ্য, ব্যাংক বীমা, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, নির্মাণকর্মীসহ বিভিন্ন শাখায় নারীরা কাজ করছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে কর্মচারী পদে নিয়োজিত আছেন তারা। 

অর্থনীতির মূলধারার স্বীকৃত উৎপাদন খাতের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেক নারী। অর্থনীতির বৃহত্তর তিনটি বড় খাত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। দেশের পোশাক শিল্পের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই নারী। কৃষি প্রধান উত্তরাঞ্চলে গেল শতকের শেষ দশকেও কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের চেয়ে কম ছিল। কৃষিতে যন্ত্র যুগের দ্রুত আবির্ভাবে নারীর অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। এর বাইরে কৃষি কাজে প্রায় দেড় কোটি ও শিল্প খাতে অন্তত ৫০ লাখ নারী শ্রমিক রয়েছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে দেশে কর্মক্ষেত্রে নারী ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। এই হার ১৯৮০ সালের দিকে ৮ শতাংশ ও ২০০০ সালে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশে ওঠে। তবে শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার ২০১০ সালে বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়। ২০১৩ সালে অবশ্য কিছু কমে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামে। 

বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে নারী হিস্যা ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির আকার ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এরমধ্যে ৬ কোটি ৮ লাখ মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন। মোট শ্রমশক্তিতে ৪ কোটি ২২ লাখ পুরুষ আর নারী ১ কোটি ৮৭ লাখ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ছে।

তারা বলছেন, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেশে দুটি দলের বিরোধ থাকলেও নারী উন্নয়নে এবং নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে দুটি সরকারের মধ্যে ব্যাপক ঐক্যমত ছিল। আর এ কারণে দেশে নারীদের অগ্রগতি জয়গান চলছে। তারা বলেন, দেশে নারী শিক্ষার প্রভাব সবক্ষেত্রে পড়েছে। অর্থনীতি, শ্রমবাজার, রাজনীতিসহ সবকিছুর মূলেই রয়েছে নারীর শিক্ষা।

জানা গেছে, বর্তমান সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট করা হচ্ছে। সব মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৪টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নারীর সামর্থ্য উন্নীতকরণ, নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, নারীর মতপ্রকাশ ও মতপ্রকাশের মাধ্যম সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রথম কান্ট্রি ইকোনমিস্ট অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গত ৫০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। তবে দেশের অর্থনীতির গতিময়তা বজায় রাখতে হলে নারীদের কর্মসংস্থানের হার আরও বাড়াতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ঘরের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ নারীকে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে গিয়ে ঘরে-বাইরে সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

ঢাকা/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়