ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

‘ডেলিভারি ওম্যান হিসেবে কাজ করতে ভয় লাগত, এখন নেই’

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১১ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১০:১১, ১১ জুলাই ২০২২
‘ডেলিভারি ওম্যান হিসেবে কাজ করতে ভয় লাগত, এখন নেই’

‘ডেলিভারি ওম্যান’ হিসেবে কাজ করেন শুক্লা। ছবি: রাইজিংবিডি

শুক্লা সাহা। ভালো একটি চাকরি করতেন। করোনা মহামারির সময় চাকরি চলে যায়। সে সময় অসুস্থ বাবা, ছোট ভাই-বোন ও মাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। অল্প দিনের মধ্যে আর একটি চাকরি জোগাড় হলেও বেতন যা পান, তা দিয়ে বাবার ওষুধ, ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচ, বোনের চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিলো না।

কোনো উপায় না পেয়ে একটি খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিষ্ঠানে ‘ডেলিভারি ওম্যান’ হিসেবে কাজ শুরু করেন। সংসারের খরচ মেটাতে পারেন না বলে প্রথা ভেঙে যোগ দেন ‘ডেলিভারি ওম্যান’ হিসেবে।  প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করেন শুক্লা।

শনিবার (৯ জুলাই) রাইজিংবিডিকে শুক্লা বললেন, ‘আমাদের অবস্থা আগে ভালো ছিলো। বাবা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রেখেছিলেন। কিন্তু বাবার অসুস্থতা ও করোনা মহামারি সবকিছু পাল্টে দিয়েছে।’

পড়ুন: নারীর বাইকার হয়ে ওঠার গল্প শুনছে ওয়ালটন, প্রথম পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা

শুক্লা জানান, তার বাবার চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চেন্নাই যেতে হয়।  চিকিৎসার পর এখন তার বাবা একটু একটু দেখেন।  তবে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। তার বাবা স্ট্রোক করার আগপর্যন্ত সংসারটা দেখতেন নিজেই।  আর পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে তাকে (শুক্লা) দেখতে হয়।  তাই অফিস ছুটির পরও কখনো কখনো রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়।

শুক্লার জীবনযুদ্ধ। ছবি: রাইজিংবিডি

ডেলিভারি ওম্যান হিসেবে কাজ করতে কেমন লাগে এই প্রশ্নের উত্তরে শুক্লা বলেন, কাজ তো কাজই।  মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করি। একটি ফার্ম থেকে চার বছরের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের কোর্স করেছি। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করেছি।  গত বছর করোনার কারণেই ছাঁটাই করা হয় আমাকে। এরপর শুরু হয় আমার এই পথচলা। আগে থেকেই বাইক চালানোর অভ‌্যাস ছিলো। মাঝে কিছুদিন রাইডার হিসেবে কাজ করি। কিন্তু কিছু কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। পরে মোটরবাইক নিয়ে খাদ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডায় যোগ দেই।

শুক্লা জানান, অনেকে অর্ডার করার পর থেকে বিরক্তি প্রকাশ করতে থাকেন কেন এত দেরি হচ্ছে। ফোন করে ঠিকানা চাইলেও অনেক গ্রাহক খেপে যান।  আবার অনেকে বলেন, ‘আপনি লেডি ডেলিভারি ওম্যান- আগে জানাননি তো’।  ফুডপান্ডার ভারী ব্যাগ নিয়ে কাজ করাটা অনেক পরিশ্রমের।  প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮টির মতো অর্ডার পান তিনি।

শুক্লা বলেন, প্রথমদিকে কাজ করতে ভয় লাগত।  কিন্তু এখন আর ওসব নেই।  বাবা সব সময় বলতেন, ‘মেয়েদের সব কাজ শিখে রাখা ভালো। কখন কোনটা কাজে লাগবে। ’ তাই শখ করে মোটরসাইকেল চালানো শিখেছিলাম। আর এজন্যই চাকরিটা পেয়েছি।  তবে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। একটা ভালো চাকরি করতে চাই। বাবার চিকিৎসা এবং সংসার ভালোমতো চালানোর জন‌্য একটি ভালো বেতনের কাজ চাই। 

/সাইফ/ইভা/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়