ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

আরাফাতের স্মৃতি আজও কাঁদায় বিপুকে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
আরাফাতের স্মৃতি আজও কাঁদায় বিপুকে

ছবি: সংগৃহীত

তিন ভাই দোকানের কাজ সেরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাসায় ফেরার। ভাইয়ের ছেলে বাইরে খেলছিলো। ছোট ভাইকে এক বন্ধু ফোন দেন। পরে বেরিয়ে যান তিনি। একটু দূরে যাওয়ার পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে মারা যান মো. আলী, তার ছেলে আরাফাত ও ভাই অপু। শেষ মুহূর্তে আরাফাতকে বাঁচাতে দুই ভাই তাকে জড়িয়ে রাখেন।

আরও পড়ুন : তারা বাড়ি ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। আহত হন আরও অনেক।

মো. আলী ও অপুর ভাই বিপু বলেন, পুরান ঢাকার চকবাজারে অপু এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকান আছে। তিন ভাই সেখানে কাজ করতাম। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে দোকানের চাবি বড় ভাইদের বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যাই। ভাতিজা আরাফাত পাশেই খেলাছিলো। হঠাৎ বিকট শব্দ। অনেক মানুষ আগুনের মাঝে পড়ে যায়। চিল্লাচিল্লি শুনি। ভাইদের কথা মনে পড়ে। অনেক খোঁজাখুঁজি করি। ভোরে হাসপাতালে গিয়ে লাশ পাই। ভাতিজাকে বাঁচাতে দুই ভাই বুকের মধ্যে রাখে। তারপরও বাঁচেনি। দুই ভাইয়ের বুকের মাঝে ভাতিজা আরাফাতের লাশ।

তিনি বলেন, ২০ সেকেন্ড আগে যদি এ ঘটনাটা ঘটতো তাহলে আমিও বাঁচতাম না। আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। কিন্তু অনেক খারাপ লাগে। দুই ভাই ছিলো আমার বটগাছ। ভাই বলে ডাকতে পারি না। তিন ভাই মিলে সংসারটা ভালোভাবে চলে যেত। এখন নিজেকে খুব একা লাগে। বাবা-মা অসুস্থ। অনেক সুখ চাপা দিয়েও মা-বাবাকে ভালোভাবে চালাতে পারি না। মাসে তাদের অনেক টাকার ওষুধ লাগে। কিভাবে যে চলবো সব সময় এই চিন্তায় থাকতে হয়।

আলী-অপুর মা তারামনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, দুই ছেলে আর নাতনিকে হারিয়ে খুব কষ্টে আছি। যাদের ছেলে, নাতনি মারা যায় তারা কি ভালো থাকতে পারে। তারপরও বেঁচে আছি। আগে তো সংসারে কষ্ট ছিলো না। তিন ভাই ইনকাম করতো, ভালোভাবেই চলতাম। এখন বিপু একা আর পারে না। ওর অনেক কষ্ট হয়। আমরা কি পেলাম। কিছুই পেলাম না। মাঝখান নিয়ে আমার বুক খালি হয়ে গেলো।

আরাফাতের মা ইতি সরকার বলেন, স্বামী ছেলেকে হারানোর পর নগর ভবনে চাকরি হয়েছে। যে বেতন পায় তাতে সংসার চলে না। অনেক কষ্ট হয়। তবুও টিকে থাকতে কাজ করতে হচ্ছে।

মো. আলী যখন মারা যান তখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ইতি। এরপর ছেলে সন্তান হয়। ওই ছেলের বয়স এখন চার বছর। কেউ বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলে, ‘বাবা তো মারা গেছে’।

/মামুন/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়