ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

কৃচ্ছ্রতা নীতিমালা: গতবারের মতো অর্থ সাশ্রয় হবে না

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ৪ জুলাই ২০২৩  
কৃচ্ছ্রতা নীতিমালা: গতবারের মতো অর্থ সাশ্রয় হবে না

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প কৃচ্ছ্রতা নীতির বাইরে রেখে এ উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মতো চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা নীতি অবলম্বনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি পরিপত্রও জারি হয়েছে। তাতে যেসব খাতের কথা বলা হয়েছে সেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতাধীন কোনো প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এডিপির প্রকল্প কৃচ্ছ্রতা নীতির বাইরে রেখে তা থেকে কতটা সুফল পাওয়া যাবে তা নিয়ে ভাবছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কৃচ্ছ্র নীতি অবলম্বন করে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু একই নীতি অনুসরণ করে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে গেলো বছরের অর্ধেক অর্থও সাশ্রয় করা সম্ভব হবে না। কারণ গত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প ব্যয়েরও লাগাম টেনে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এবার এডিপির প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোনো সাশ্রয় নীতি অবলম্বন করার কথা বলা হয়নি। ফলে এডিপির বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এবার কোনো অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে না। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য গত রোববার জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি প্রকল্পে এখন থেকে আর ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। সব ধরনের ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ বরাদ্দের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব ধরনের যানবাহন ক্রয়, আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এডিপির প্রকল্পের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত অর্থবছরে এডিবিতে ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ২৫ ভাগ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পের ক্ষেত্রে পুরো অর্থ ছাড় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ খাত থেকে বেশ মোটা অঙ্কের অর্থের সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছিল; কিন্তু এবারের পরিপত্রে এডিপির প্রকল্প বিষয়ে কোনো ব্যয় সাশ্রয়ের কথা বলা হয়নি। তাই গতবার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছিল; কিন্তু এবার তার অর্ধেক ১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা গেলেও আমরা খুশি। কারণ এডিপিতে অর্থ ব্যয়ের রাশ টেনে ধরার কারণে গতবার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন দুই ভাগ কম হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে। এতে সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরে বাজেটে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে রয়েছে আরও ২৯০০ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে অর্থ ব্যয় করা যাবে। ফলে এ খাত থেকে অর্থবছর শেষে খুব বেশি অর্থ সাশ্রয় করা যাবে না।

গত অর্থবছরে কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য মোট তিনটি পরিপত্র জারি করা হয়। এগুলোর মধ্যে ‘উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন’ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়েছিল, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে, সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলো ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীন দফতর/সংস্থাগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরি চিহ্নিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন যথা নিয়মে অগ্রধিকার ভিত্তিতে চলবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি (জিওবি) অংশের ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রেখে অনূর্ধ্ব ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুসারে ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ করা অর্থ আবার যোগ করে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগের পূর্বানুমতি নিয়ে) ‘এ’ ক্যাটাগরি চিহ্নিত প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করতে পারবে।

কিন্তু এবার এডিবি বিষয়ে কোনো ব্যয় সাশ্রয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি। পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বিদ্যুৎ খাতে (অর্থনৈতিক কোড নং ৩২১১১১৩) বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ এবং পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট (অর্থনৈতিক কোড নং ৩২৪৩১০১) এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে (অর্থনৈতিক কোড নং ৩২৪৩১০২) বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আবাসিক ভবন (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১১১০১), অনাবাসিক ভবন (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১১২০১) এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১১৩১৭) বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।

পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১৪১১০১) বন্ধ থাকবে, তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা পরিপালন করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০১), জলযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০২) ও আকাশযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০৩) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। অন্যদিকে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব প্রকার যানবাহন (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) ক্রয় করা বন্ধ থাকবে।

/হাসনাত/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়