ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ধর্ম উপদেষ্টা

৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ফেরত পাবেন ৪৯৭৮ হাজি

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ১৩ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৮:৫০, ১৩ জুলাই ২০২৫
৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ফেরত পাবেন ৪৯৭৮ হাজি

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

বা‌ড়ি ভাড়াসহ বি‌ভিন্ন খা‌তে উদ্বৃত্ত থাকায় সরকারি মাধ্যমের ৪৯৭৮ হাজিকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হবে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

রবিবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের পারফরমেন্স বিষয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

আরো পড়ুন:

হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নেই উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “হাজিদের সেবা করাই সরকারের একমাত্র ব্রত। এ বছর হজ প্যাকেজে বাড়ি ভাড়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা ধার্য করা হয়েছিল, তার চেয়ে কিছু কম রেটে বাড়ি ভাড়া পাওয়া গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কম রেটে সার্ভিস চার্জও মিলেছে। এর ফলে প্যাকেজের কিছু টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি মাধ্যমের প্রত্যেক হাজেকে ফেরত দেওয়া হবে।”

তি‌নি জানান, সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর যেসব পূর্ণ প্যাকেজের হাজি চার ও ছয় নম্বর বাড়িতে ছিলেন তারা প্রত্যেকে ৫,৩১৫ টাকা ফেরত পাবেন। চার নম্বর বাড়ির শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২৩,০২৭ টাকা ফেরত পাবেন। এই প্যাকেজের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ১৩,৫৭০ টাকা ফেরত পাবেন। পাঁচ ও ছয় নম্বর বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোন হাজি রাখা ছিল না।

“সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর পূর্ণ প্যাকেজের যেসব হাজি এক নম্বর বাড়িতে ছিলেন তারা প্রত্যেকে ১৯,১৯২ টাকা এবং শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ৫১,৬৯২ টাকা ফেরত পাবেন। দুই নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২১,১৪২ টাকা এবং শর্ট প্যাকেজের হাজিরা ৫৩,৬৪২ টাকা ফেরত পাবেন। তিন নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২৪,২৬২ টাকা ফেরত পাবেন। এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোনো হাজি ছিলেন না।”

এই টাকা হাজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠানো হবে ব‌লেও জানান উপ‌দেষ্টা।

এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক অভিহিত করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “এ বছর হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের গাইডলাইন অনুসারে আমরা সব প্রক্রিয়া যথা সময়ে সম্পন্ন করেছি। হজযাত্রী নিবন্ধন, হজের আবশ্যিক ব্যয়ের টাকা আইবিএনের মাধ্যমে সৌদিতে প্রেরণ, নুসুক মাসার নামক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মিনা-আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ, বাড়ি ভাড়া ও সার্ভিস কোম্পানির সাথে চুক্তি, পরিবহন চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এছাড়া, হজ ফ্লাইট সিডিউল পর্যালোচনা সাপেক্ষে হজযাত্রী পুনঃবন্টনের প্রক্রিয়া যথা সময়ে সম্পন্ন করা হয়।”

আ ফ ম খা‌লিদ হো‌সেন বলেন, “হজ ব্যবস্থাপনার সব বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিলো প্রো-অ্যাক্টিভ কোনো সংকট তৈরি হওয়ার পূর্বেই আমরা প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিয়েছি। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা একটি টিম স্পিরিট নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এর ফলে, এ বছর হজে যেতে না পারার বেদনায় কাউকে কাঁদতে হয়নি।কোনো হজ ফ্লাইট বিপর্যয় হয়নি।হজযাত্রীদের মধ্যে হট্টগোল, হৈচৈ, শোরগোল দেখা যায়নি। বাংলাদেশের নিবন্ধিত শতভাগ হজযাত্রী হজ পালন করতে পেরেছেন।”

দেশবাসীকে প্রতারক হতে সাবধান হতে পরামর্শ দিয়ে ড. খালিদ বলেন, “হাজিদের রিফান্ড কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান বা দুস্থদের আর্থিক সহায়তাসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেয় সব ধরনের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এরূপ টাকা পাঠাতে মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে ফোন করা কিংবা তার কাছ থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর কিংবা বিকাশ বা নগদ কিংবা রকেটের কোনো পিন নম্বর চাওয়া হয় না। এমনটি যদি কেউ করে তাহলে সে প্রতারক।”

ড. খালিদ বলেন, “এ বছর হজযাত্রী হারানো সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এবার ৮৯২ জন হজযাত্রী হারানো গিয়েছিল যার মধ্যে ৮৯১ জনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। এ মৌসুমে যে ৪৫ জন হজযাত্রী মৃত্যূবরণ করেছেন তাদের সবারই নানা ধরনের জটিল রোগব্যাধীতে আক্রান্তের পূর্ব ইতিহাস ছিল।”

হজ ব্যবস্থাপনা টিমওয়ার্ক হিসেবে অভিহিত করে উপদেষ্টা বলেন, “সবাই টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে হজ ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও সাবলিল হবে-এটাই স্বাভাবিক। এ মৌসুমে হজ ব্যবস্থাপনায় টিম স্পিরিটেরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি।”

তিনি হজ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স, হাবের সভাপতি ও মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এ সময় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মো. আয়াতুল ইসলাম, হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মঞ্জুরুল হক, হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার ও মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়