যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকের ছড়াছড়ি
সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার (ফাইল ফটো)
সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর : যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে সহজেই মিলছে মাদক। কারা প্রশাসনের সহযোগিতায় কারা-অভ্যন্তরে চলছে এই মাদক ব্যবসা। এ ছাড়া রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি।
কারাগারের ডিআইজি প্রিজন থেকে শুরু করে কারারক্ষীরা এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাজে নানা অপরাধ করে যেসব মানুষের এখানে ঠাঁই হয়েছে তাদের জিম্মি করেই তারা এসব অনয়িম-দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বন্দিদের সুবিধার জন্য কারাগারের ভেতরে রয়েছে একটি ক্যানটিন। প্রত্যেক বন্দিই এ ক্যানটিন থেকে তাদের পছন্দমতো সামগ্রী কিনে খেতে পারেন। এজন্য বন্দিদের নামে থাকা অ্যাকাউন্টে তাদের স্বজনরা টাকা রেখে দেন। বর্তমানে এ ক্যানটিন চালাচ্ছেন করারক্ষী উত্তম কুমার। তিনি ক্যানটিন ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বন্দিদের একটু ভালো রাখার জন্য চালু করা এই ক্যানটিন হয়ে উঠেছে এখন কারাগারে অপরাধ ছড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
সূত্রমতে, ক্যানটিনে যেসব খাদ্য বিক্রি করা হয় তা কেনা হয় বাইরের বাজার থেকে। এই ক্যানটিনে যেসব খাদ্যসামগ্রী নেওয়া হয়, তা কারাগারে ঢোকার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। এটা করা হয় সবার জ্ঞাতসারেই। এর কারণ ক্যানটিনের জন্য খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে কারাগারের ভেতরে নেওয়া হয় মাদকদ্রব্য। কোমল পানীয়র ক্যান অথবা বোতলে ভরেই কারাগারের ভেতরে নেওয়া হচ্ছে মরণনেশা ফেনসিডিল। অন্যান্য শুকনো খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ভরে নেওয়া হয় ইয়াবা, ডিসোপ্যান ট্যাবলেট ও গাঁজা। এসব বিক্রি করা হয় বন্দিদের কাছে।
সূত্রমতে, ৫০ টাকা করে গাঁজার পুরিয়া কিনে ভেতরে বন্দিদের কাছে তা বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এমনিভাবে বাইরে থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে কেনা ফেনসিডিল ভেতরে বিক্রি করা হয় ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে।
কোমল পানীয়র বোতলে ভরে কারাগারের ভেতরে নিয়ে তা কখনো কোমল পানীয়র ছদ্মরূপে হিসেবে বোতল ধরে আবার কখনো কাপে ভরে চা হিসেবে আসামিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া ডিসু (ডিসোপ্যান) নামে পরিচিত নেশার ট্যাবলেট বিক্রি হয় সিগারেটের বিনিময়ে। এক প্যাকেট সিগারেট দিলে পাওয়া যায় পাঁচটি ডিসু ট্যাবলেট। ডিসু ট্যাবলেটের ব্যবসা করেও করারক্ষীরা হাজার হাজার টাকা আয় করছেন।
যশোর মাদক ব্যবসা ও সেবনের একটি চিহ্নিত জোন হওয়ায় কারাগারেও মাদকসেবী আসামির সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া অনেক পরিবার তাদের মাদকসেবী সন্তানকে ভালো করার জন্যও কারাগারে পাঠিয়ে থাকে। এজন্য করাগারে একটি অস্থায়ী ‘মাদকাসক্ত নিরাময়’ কেন্দ্রের একটি ইউনিটও আছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের অনয়িম-দুর্নীতির কারণে এটি অনেকটা মাদক সম্প্রসারণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে বসেই বন্দিরা এখন ফেনসিডিল-গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশার ট্যাবলেট পাচ্ছে। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থাও যশোর কারাগারের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব দুর্নীতির সঙ্গে জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ ও কারারক্ষক মহিউদ্দিন হায়দার জড়িত। ক্যানটিন ম্যানেজার এবং করারক্ষীরা মাদক ব্যবসা করে যে অর্থ আয় করে তার অংশ এই দুই কর্মকর্তাও পান। এজন্য কারাগারের প্রবেশপথে যে সিসি ক্যামেরা রয়েছে তা তারা কৌশলে অকেজো করে রাখেন।
অবশ্য এসব অভিযোগ আমলে নেননি যশোর কেন্দ্রীয় করাগারের করারক্ষক এস এম মহিউদ্দিন হায়দার। তিনি বলেন, ‘কারাগারের ভেতরে মাদক ঢোকা একেবারেই অসম্ভব। বাস্তবতা হলো অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা পেতে ব্যর্থ হয়ে মহলবিশেষ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। ক্যানটিনের মালামাল কেন, কারাগারের ভেতরে যা-ই ঢোকানো হোক না কেন, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ঢোকানো হয়।’
সিসি ক্যামেরা অকেজো করে রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অকেজো করে রাখা নয়, এমনিতেই ওটি মাস খানেক ধরে নষ্ট হয়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা মেরামত না করলে আমার কিছু করার নেই।’
রাইজিংবিডি/যশোর/২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪/কমল কর্মকার
রাইজিংবিডি.কম