ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

মা, তোমায় সালাম 

মাহফুজা হিলালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ৭ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ০৯:৪৫, ৮ আগস্ট ২০২১
মা, তোমায় সালাম 

শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে ‘বঙ্গমাতা’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। ‘মা’ হওয়া খুব সহজ কাজ নয়। মাকে হতে হয় একদিকে স্নেহময়ী, অন্যদিকে কঠোর মনের অধিকারী। মা যেমন সন্তানকে প্রশ্রয় দেবেন, তেমনি শাসনও করবেন। মায়ের থাকতে হয় দূরদৃষ্টি। তিনি সন্তানের ভবিষ্যৎ দেখতে পান। তবেই তিনি মা।

মা নিজের দূরদর্শিতা দিয়ে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সফল হতেও পারেন, নাও পারেন। যিনি সফল হন, তিনি সফল মা। আবার সফল না হলেও তাঁর কৃতিত্ব কম নয়, তাঁর চেষ্টার তো একটা মূল্য আছে; মূল্য আছে মাতৃত্বের। যুগে যুগে মায়েরা সন্তানের জন্য বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন। তাঁদেরই জন্য মানবজাতি এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে।

বঙ্গদেশের উন্নয়নে লীলাবতী থেকে ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, ফয়জুন্নেসা থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এবং রোকেয়া থেকে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বঙ্গদেশের কল্যাণের জন্য এঁদের প্রচেষ্টার অন্ত ছিল না। এঁদের মধ্যে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গমাতা। এখন প্রশ্ন হলো এ উপাধি কি শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী হবার কারণে, নাকি তাঁরও নিজস্বতা ছিল? সেই নিজস্বতা কতটুকু এবং কীভাবে দেশের জন্মইতিহাসে জড়িয়ে আছে? কিংবা তাঁর ভূমিকা না থাকলে কী হতো? সবই এখন গবেষণার বিষয়।

শেখ ফজিলাতুন নেছা বরাবরই আড়ালে থাকতে পছন্দ করতেন। তবে কিশোরী বয়স থেকেই তিনি দেশের জন্য নিবেদিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন থেকে নিজেকে দেশের কাজে সম্পৃক্ত করেছেন, তখন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব নিতান্তই বালিকা। ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গোপালগঞ্জে একটা কনফারেন্স হয়েছিল, তখন নেতাদের খাওয়ার জন্য যে রান্না-বান্না হয়েছিল তা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুন এবং বালিকা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। এ সময় হয়তো শেখ ফজিলাতুন নেছা কিছু না বুঝেই শাশুড়ির সঙ্গে কাজ করেছিলেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতায় রাজনীতি করছিলেন, তখন টুঙ্গিপাড়ায় এলে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুকে নিজের গোছানো টাকা দিতেন। অথবা এমন বলা যায় দেওয়ার জন্যই টাকা গুছিয়ে রাখতেন। বঙ্গবন্ধু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন: ‘রেণু যা জোগার করত বাড়ি গেলে এবং দরকার হলে আমাকেই দিত। কোনোদিন আপত্তি করে নাই, নিজে মোটেই খরচ করত না। গ্রামের বাড়িতে থাকত, আমার জন্যই রাখত।’

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে প্রথম থেকেই দেশমাতৃকার জন্য তিনি নিবেদিত ছিলেন। তারপর  ১৯৫৪ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকা আসার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দলের কাজ করতেন। কারাগারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকে নির্দেশনা আনতেন এবং সে কথাগুলো দলের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন। দলের কাজের জন্য টাকা-পয়সাও দিতেন। দলের প্রয়োজনে ঘরের আসবাব এমনকি নিজের গহনা পর্যন্ত বিক্রি করে টাকা জোগার করে দিতেন। এভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু তাঁর সব কাজই ছিল আড়াল থেকে। তাঁর কোনো পদ-পদবি ছিল না, করতেন না কোনো মিছিল-মিটিং। মায়ের মতোই নীরবে তিনি এ কাজগুলো করে গেছেন।

দেশের অনেকগুলো বাঁক পরিবর্তনে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যে কাজগুলো না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ। বাঙালির মুক্তির সনদ ‘ছয় দফা’। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬-এর ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে যখন ছয় দফা পেশ করেন, তখনই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভীত হয়েছিল। যে কারণে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর মাথা কিনতে চেয়েছিলেন। তিনি অনেক বড়ো বড়ো রাজনীতিবিদের মাথা কিনেছিলেন, ভেবেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মাথাও কিনে ফেলবেন। প্রস্তাবটা ছিল এ রকম: ‘মোনায়েম খাঁকে গভর্নর পদ থেকে সরিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বসাবেন। নিজের লোক নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারবেন। এতে কেন্দ্র খুব বেশি হস্তক্ষেপ করবে না। তাছাড়া গান্ধারা ইন্ডাস্ট্রিজের ফরটি নাইন পার্সেন্ট শেয়ার বঙ্গবন্ধু বা তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামে ট্রান্সফার করা হবে। আবার শেয়ার কেনার টাকারও ব্যবস্থা আইয়ুর খান করবে। বিনিময়ে ছয় দফার দাবি ছেড়ে দিতে হবে।’

প্রস্তাব এসেছিল ফজলুল কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে। ছয় দফা যে আসলে এক দফা তা ফজিলাতুন নেছা মুজিব জানতেন। তাই এটাকে নস্যাৎ করতে দিতে রাজি ছিলেন না তিনি। এ বিষয়ে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ ফজিলাতুন নেছাকে জিজ্ঞাসা করেন তখন তিনি প্রস্তাবটি পুরোপুরি নাকচ করে দেন। তারপর বাড়িতে এসেছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর কাছে এ প্রসঙ্গ তুলবেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই চা-নাশতা নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছিলেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং বলেছিলেন, ‘ভাই, আপনাকে একটা অনুরোধ জানাবো। শেখ মুজিবকে আইয়ুব খান আবারো জেলে ভরতে চান, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাদের এই বাড়িঘর দখল করতে চান, তাতেও দুঃখ পাবো না। আপনাদের কাছে আমাদের দুজনেরই অনুরোধ, আমাদের মাথা কিনতে চাইবেন না। শেখ মুজিবকে মোনায়েম খাঁ বানাবার চেষ্টা করবেন না।’

এভাবে তিনি ছয় দফাকে বাঁচিয়েছিলেন। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু গভর্নর হতেন, তাহলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা কতো কতো দিন পিছিয়ে যেতো বলাবাহুল্য। ছয় দফা নিয়ে এখানেই ষড়যন্ত্রের শেষ ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পরেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ-এর অনেক নেতাদের মধ্যেও ছয় দফাকে আট দফা করার ইচ্ছে হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রও ফজিলাতুন নেছা মুজিব কঠোর হাতে দমন করেছিলেন। তাঁরই ড্রইং রুমে বসে নেতারা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন। তিনি তখন গিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা এখানে কী শুরু করেছেন? আমার বাড়িতে বসে কোনো ষড়যন্ত্র করা চলবে না। এখানে কোনো মারামারিও করা যাবে না। আপনাদের নেতা জেলে আছেন। তাঁর অবর্তমানে তাঁর দেওয়া কোনো কর্মসূচি আপনারা পরিবর্তন করতে পারেন না। এটা হবে না। এটা হওয়া উচিতও না। আপনাদের সভা স্থগিত করুন। উনি ছয় দফার জন্য বছরের পর বছর জেলে আছেন। আর আপনারা ছয় দফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন? আমি স্পষ্ট বলছি, আপনারা যারা আপনাদের নেতার নির্দেশ ছয় দফা মানবেন না, তারা দল থেকে চলে যেতে পারেন।'

এমন বলিষ্ঠ উচ্চারণ সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় একটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল নিঃসন্দেহে। এরপর আবার এলো আরেক বার ছয় দফা নস্যাতের চিন্তা। অনেক নেতারা চাইছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি। কিন্তু শেখ ফজিলাতুন নেছা বুঝতে পেরেছিলেন এ ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভব হবে না। জনতার দাবির মুখে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। প্যারোলে মুক্তি নিতে হবে না। তাই তিনি বড়ো মেয়ে শেখ হাসিনার (বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছে খবর পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি প্যারোলে মুক্তি না নেন। বঙ্গবন্ধু শুনেছিলেন সে কথা। তারপর ঠিকই গণ আন্দোলনের মুখে রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েছিল।

এভাবে ছয় দফায় শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বারবার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছয় দফাকে বাঁচিয়েছিল। ছয় দফা না থাকলে এবং এমন গণ-আন্দোলন না হলে হয়তো ১৯৭০ সালের নির্বাচন হওয়াও সম্ভব ছিলো না।

আরেকটি বাঁকে এসে শেখ ফজিলাতুন নেছা হাল ধরেছিলেন, সেটা হলো ৭ই মার্চের ভাষণের দিন। সেদিন বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিতে যাবেন। তখন নেতা-কর্মীরা একেক জন একেক কথা বলতে শুরু করেছিলেন: ‘মুজিব ভাই এটা বলবেন, ওটা বলবেন’- এ সব। বঙ্গবন্ধুর চোখে-মুখে চিন্তার রেখা। শেখ ফজিলাতুন নেছা মনে মনে ভাবলেন তাঁকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করা দরকার। সবার কথা তাঁরও কানে আসছিল। কিন্তু সে সব কথা তাঁরও মনে ধরছিল না। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন। অথচ, এতো মানুষের ভিড় ছিল যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছাতে পারছিলেন না। অবশেষে বঙ্গবন্ধুকে খেতে দিয়ে শেখ ফজিলাতুন নেছা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যেন ঘরে আর কেউ না আসতে পারে। ঘরে শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন। ফজিলাতুন নেছা তখন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘খাওয়া শেষ করে তুমি পনেরো মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবা। তারপর বের হবা।’

বঙ্গবন্ধু যখন বিশ্রাম নিচ্ছেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি জানো তোমার কী বলতে হবে। তুমি মনে রাখবা তোমার সামনে আছে জনতা, আর পিছনে বুলেট। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি তাই বলবা। স্বাধীনতার জন্য তুমি সংগ্রাম করেছো, জেল খেটেছো। তুমিই জানো এ দেশের মানুষ কী চায়।  কারো পরামর্শ শোনার তোমার কোনো দরকার নাই।’

হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু সেদিন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের এ কথাটিও শুনেছিলেন। তাই তিনি রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে বলতে পেরেছিলেন: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এভাবেই শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশ গঠনের নেপথ্য কারিগর। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৮ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়িতে সপরিবারে বন্দি ছিলেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব। অবশ্য বঙ্গবন্ধু এবং শেখ কামাল, শেখ জামাল ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানি কারাগারে আর শেখ কামাল, শেখ জামাল ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। আবার বঙ্গবন্ধুর মা-বাবাকেও এ বাড়িতে রাখতে দেয়নি পাকিস্তানি গোষ্ঠী। তখন অসুস্থ মা-বাবার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একটি কেবিন-এর ব্যবস্থা করেছিলেন ফজিলাতুন নেছা। আর এটা হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পাঠানোর একটা কেন্দ্র। মা-বাবাকে দেখার জন্য শেখ ফজিলাতুন নেছা মেডিক্যাল কলেজে যেতেন। এখানে ছদ্মবেশে মুক্তিযোদ্ধারাও আসতেন। তখন তিনি নির্দেশনা দিতেন। আবার শেখ কামাল এবং শেখ জামালের খবরও এখানে এসে পেতেন। মূলত এখান থেকে ফজিলাতুন নেছা মুজিব মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

এ ক্ষেত্রেও তাঁর মনোবল বিস্ময়কর। তখন তিনি জানেন না বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন কিনা, জানেন না তাঁর দুই ছেলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরবেন কিনা। তাঁদের সেই অনিশ্চিত জীবনে রেখে তিনি যুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তখন। দেশ সম্পর্কে এতোটাই দৃঢ়চেতা ছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি। এমনকি গণভবনেও ওঠেননি। নিজের ছোট্ট নীড়েই নিজের মতো করে থাকছিলেন। এখানেও তাঁর সাদাসিধে মাতৃত্ব প্রকাশ পেয়েছে।

ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রখর দূরদৃষ্টি ছিল। কেবল তাঁর দূরদৃষ্টি ঘাতকের কার্যক্রমের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অর্থাৎ তিনি এ ব্যাপারে চিন্তা করেননি। তিনি ভাবতেই পারেননি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার অনিরাপদ হতে পারে। শুধু দেশের কথাই চিন্তা করছিলেন তিনি এবং বঙ্গবন্ধু দুজন মিলে। একবারও নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেননি। তাই বাংলাদেশকে এতিম করে অকালে তাঁরা চলে গেলেন।

শেখ ফজিলাতুন নেছার তিন বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম এবং আদর্শ তাঁর ওপর প্রভাব ফেলেছিল। একটি যৌথ পরিবারের বধূ হিসেবে ধৈর্য এবং পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা তিনি ছোট বেলা থেকেই পেয়েছিলেন। তাঁর শাশুড়ি অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর মা তাঁকে গড়ে তুলেছিলেন ছেলের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে। এবং এ জন্য তিনিও শতভাগ প্রস্তুত ছিলেন। তবে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের ছায়ায় থেকেও তিনি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন। তাই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি নিজের চিন্তা-চেতনা-দর্শনকেই প্রাধান্য দিতেন। আমরা আলোচনায় দেখলাম, তাঁর অনেক সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকেও চালিত করতো। যা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছিল।

শেখ ফজিলাতুন নেছা জন্মগ্রহণ করেছেন আনুমানিক ১৯৩০ সালে। নীলিমা ইব্রাহিম বলেছেন ১৯২৭ সালে। সে অনুয়ায়ী এ বছর তাঁর একানব্বইতম বা চুরানব্বইতম জন্মবার্ষিকী। তিনি বেঁচে থাকলে দেশের কল্যাণের জন্য অনেক দিকনির্দেশনা দিতেন নিশ্চিত। এই ক্ষণজন্মা নারীর জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি তৈরি হয়েছিল এতো দ্রুত। দেশের কল্যাণে তিনি যেমন মমতাময়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন কঠোর দিকনির্দেশক। বঙ্গবন্ধুর সাত বছর বয়স থেকে তিনি ছিলেন ছায়াসঙ্গী। বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি ক্ষণ তিনি সুন্দর করেছেন। অবশ্য এখানে বঙ্গবন্ধুর উদারতার কথাও বলতে হবে। তিনি শেখ ফজিলাতুন নেছার কথাগুলো ‘নারীর প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দেননি। বিনা বাক্যে এবং গভীর বিশ্বাসে গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁদের জীবন ঠিক সংসার জীবন নয়, একে অপরের প্রতি বিশ্বাসী বন্ধুর পথচলা।

এই বন্ধুত্ব এবং বিশ্বাস ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে আত্মবিশ্বাসী এবং ব্যক্তিত্বময়ী মানুষে পরিণত করেছিল। পরিণত করেছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেও। তাই  তিনি কঠোর হাতে ছয় দফাকে বাঁচিয়ে দেশের স্বাধীনতা তরান্বিত করেছিলেন। দেশের জন্য তিনি এক দিকে স্নেহধারা বইয়ে দিয়েছিলেন, অন্যদিকে সিদ্ধান্তে ছিলেন অবিচল। তাই তিনি নমস্য। তাই তিনি বঙ্গমাতা। মা, তোমাকে সালাম।

লেখক: গবেষক ও নাট্যকার; সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

* সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়