ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

এখন কী তন্ত্র চলছে, প্রশ্ন জিএম কাদেরের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ৯ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১১:১৫, ৯ আগস্ট ২০২২
এখন কী তন্ত্র চলছে, প্রশ্ন জিএম কাদেরের

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জিএম কাদের। ছবি: রাইজিংবিডি

বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম‌্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সাধারণ মানুষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার চেয়েছিল, কিন্তু এখন আমরা নতুন ধরনের জমিদার পেয়েছি। নতুন ধরনের রাজা, নতুন ধরনের সৃষ্টি। সত্যিকার অর্থে প্রজাতন্ত্র আর নেই। আমরা সেই প্রজাই হয়ে গেছি আবার।

তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীতে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা থাকলেও যানজট ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তা বাতিল ঘোষণা করেন পার্টির চেয়ারম‌্যান জিএম কাদের। এ ঘোষণায় নেতাকর্মীরা কিছুটা বিক্ষুব্ধ হন। তারা ফেস্টুন বানার নিয়ে, কেউ কেউ বুকে লাঙলের ছবি একে মিছিলের আশায় সমাবেশে আসেন। তবে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ শেষে মূলত মিছিল করেনি জাতীয় পার্টি।

দলটির মাঠ পর্যায়ের প্রথম এই কর্মসূচিতে লোকসমাগমও আশানুরূপ হয়নি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরসহ আওতাধীন থানা, ইউনিট এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী মিলিয়ে দুই হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক যোগ দেন এই সমাবেশে। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। এদিকে, বাবলার নেতৃ‌ত্বে তার নির্বাচনী এলাকার লোকজন না আস‌লে সমা‌বেশ ফ্লপ হ‌তো ব‌লেও জানান উপ‌স্থিত নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, আস‌লে বাবলার লোকজন না আন‌লে ফ্লপ হ‌তো সমবাশে।

সমাবেশে জিএম কাদের বলেন, মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই। সরকারের জবাবদিহিতা নেই। এই দেশ হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।  জনগণের দেশ, সেই দেশ কী আমার পেয়েছি? আমরা তন্ত্র পেলাম না, প্রজাতন্ত্র পেলাম না, গণতন্ত্রও পেলাম না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমাদের বলতে হচ্ছে শহীদের রক্ত বৃথা গেছে। সাধারণ মানুষ যা চেয়েছিল তা পাইনি। অত‌্যাচার নির্যাতন সইতে হবে না। বৃটিশ আমলের জমিদারি প্রথা থেকে মুক্তি চেয়েছি। কিন্তু সেটা হয়নি।

‘এখন আর কোনো তন্ত্র মন্ত্র এর কথা বলবো না, এখানে আমার অবস্থা কী হয় জানি না। তোমাদের কী হয় তাও জানি না। তোমরা বুঝে নাও এখন কী তন্ত্র চলছে। কী তন্ত্র চলছে বলো’।

কত টাকায় মেগা প্রজেক্ট করা হয়েছে, তার সম্পূর্ণ হিসাব বিবরণী স্বেতপত্র আকারে প্রকাশের জন‌্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম‌্যান বলেন, ‘আমরা ভাত চাই। কর্মসংস্থান চাই। চিকিৎসা চাই। ভালোভাবে বাঁচতে চাই।  আমরা যাই চাই না কেন এটার বাস্তবতা কী, শুন‌্য। আমরা যাই বলি, ওনারা ওনাদের কাজ করবেন। তারা আমাদের কথা শুনে না, এখন যে টাকার জন‌্য দৌড়াদৌড়ি করছেন কেন? যদি ধরে নেই আমাদের রিজার্ভ আছে, তারপরও টাকার জন‌্য দৌড়াদৌড়ি মানে আরও কিছু মেগা প্রজেক্ট করতে চায়। তার মানে হলো, বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া’।

জিএম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে এখন ১৬ লাখ কোটি টাকার ঋণের বোঝা, যার অর্ধেকের বেশি বিদেশি ঋণ। এই যে তথ‌্য সরকারি, আমার কথা নয়।’

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘সরকার নাকি আইএমএফ এর পরামর্শে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের মূল্য ১০৯ ডলার থেকে কমিয়ে ৮৯ ডলার হয়েছে, তখন কেন দেশে তেলের মূল্য বাড়াতে হবে?’

‘তেলের দাম বাড়ালেই পরিবহন শ্রমিকরা নিজেরাই এক ধরনের হরতাল ডেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়। তখন সরকার কিলোমিটারে ৩৫ থেকে ৪০ পয়সা বাড়িয়ে দেয়। আর পরিবহন শ্রমিকরা কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করছে। যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি না হয়, তাকে পথে নামিয়ে দেওয়া হয়। জনগণের এই দুর্ভোগ দেখার যেনো কেউ নেই’, বলেন জিএম কাদের।

জাপা চেয়ারম‌্যান বলেন, ‘আগে যখন বলেছি দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে। তখন আমাকে বলা হলো আমি নাকি অশিক্ষিত। কিন্তু এখন এই অবস্থা কেন?’

ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেকটি ব্যাংকে জনগণের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ঋণের টাকা না দিলেও খেলাপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে অনেককে। আমরা এই তালিকা চাই। সরকার বলছে, রিজার্ভ রয়েছে, কিন্তু আমরা দেখছি সরকার টাকার জন্য এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। আমরা শ্রীলঙ্কার মতো স্বৈরশাসন চাই না, মেগা প্রকল্প চাই না। তিনি মানুষের জন্য রেশন চালু করার দাবি জানান।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও চরম দুরবস্থার জন‌্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে দায়ী করে জিএম কাদের বলেন, দেশে রাজনীতি নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ‌্যতে আর কাউকে রাজনীতি করতে হবে না। মানুষের কথা বলতে হবে না। একজনই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন।

‘আমরা চাই, জবাবদিহিতামূলক সরকার। আমরা চাই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। সংবিধান সংশোধন করে হলেও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা চাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।’

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গত বাজেট অধিবেশনে সরকারের পক্ষ যেতে বলা হলো, সব ঠিক আছে। ২ মাসের মধ্যে কি হলো? আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে কেনো। বিনিয়োগকারীরা জানেন না, তাদের কি হবে।

তিনি বলেন, সরকার মানুষের কথা চিন্তা করছে না, কৃষকের কথা চিন্তা করছে না। মেগা প্রকল্পের খরচ কমান, মানুষের কথা ভাবুন।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মানুষের আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বেশি তেলের দাম আর কখনো বাড়েনি।

দলের কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সরকার জনগণের কথা ভাবে না। সরকারকে ঘিরে রেখেছে কিছু আমলা ব্যবসায়ী। তাদের কথায় চলে সরকার।

দলের কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, পল্লীবন্ধু জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখেয়েছেন। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষে আবস্থা অবনতি হয়েছে। তেলের মূল্য না কমালে আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস‌্য অ‌্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব‌্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সংসদ সদস্য  সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম, অধ‌্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলহাজ শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আব্দুস সাত্তার মিয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, গোলাম মোহাম্মদ রাজু বেলাল হোসেন, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, সুমন আশরাফ, সুজন দে প্রমুখ।

/নঈমুদ্দীন/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়