ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নেপথ্যে থেকে প্রকাশ্যে ‘গোলে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ১০ নভেম্বর ২০২০  
নেপথ্যে থেকে প্রকাশ্যে ‘গোলে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’

‘জীবন বাঁচাও, বাঁচাও মানবতা’ স্লোগান নিয়ে তিন বছর নীরবে কাজ করার পর সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে ‘গোলে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। তাদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানটিও ছিল ভিন্ন ধরনের। কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, ছিলো না কোনো জাঁকজমকের বাড়তি বিড়ম্বনা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলো ছিন্নমূল শিশুর দল। তাদের নিয়েই হয়েছে ব্যতিক্রমী আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান।

কথা হয় গোলে ওয়েলফেয়ার সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নূর সেলিনা শিউলীর সঙ্গে। তিনি জানালেন তাদের আগামীর ভাবনা এবং গত তিন বছর নীরবে থাকার কারণ। শুরুর দিনগুলোর কথা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একটি পরিবারের কয়েকজন সন্তান মায়ের ফুসফুসের বিরল চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সাল থেকে একটি ফান্ড গঠন করে। সেখান থেকেই মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করা হতো। এরপর ২০১৮ সালে তাদের মা মারা গেলে সেই ফান্ড তারা বন্ধ করে দেয়নি। সেই টাকা দিয়েই শুরু হয় মানবতার সেবা।’

সে সময় এর নাম দেওয়া হয় ‘ইয়ুথ লিডারশিপ অব গুলজার আমীর ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ সংক্ষেপে ‘গোলে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। প্রতিষ্ঠাকালীন যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আকরাম হোসেন, নূর সেলিনা শিউলী, মো. পারুল বেগম, ইব্রাহিম হোসেন, স্বপন মিয়া, ওমর ফারুক আহমদ, সূরাইয়া নূর আয়শা ও বকুল আক্তারের নাম থাকবে প্রথম সারিতে। এদের সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা এসেছেন চাকরি বা ব্যবসার সূত্রে। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের প্রচেষ্টায় একটু একটু করে বিকশিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কাজের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নূর সেলিনা শিউলী বলেন, ‘প্রথমে আমরা ঢাকার মগবাজার এলাকা এবং এর আশপাশের গরিব ও পথশিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করি। প্রতি মাসে বেশ কয়েকবার আমরা এ ধরনের আয়োজন করতাম। এ বছর করোনার কারণে আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য চাকরি হারায়। ফলে আমাদের ফান্ডিং কয়েক মাস বন্ধ ছিলো। তবে গত আগস্ট থেকে আবার নতুন করে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা পথশিশুদের খাওয়ানোর বাইরেও প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছি।’

শিউলী বলেন, ‘করোনাকালীন আমাদের কাছে আর্থিক সহায়তার অনেক আবেদন এসেছে। আমরা দেখেছি যারা আগে বেশ সচ্ছল ছিলো তারাও ফোন করে সহায়তা চাচ্ছে। আমরা অবাক হয়েছি! তখন আমরা আরো বেশি অনুধাবন করি যে, এ সময় মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এ কারণেই আমাদের নতুন করে শুরু করা।’

‘আমরা সবাই কমিটেড ছিলাম সেবার কথাগুলো আমরা গোপন রাখব। অন্য কারো কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে কার্যক্রম চালাব না। যা করার নিজেরাই করব। কিন্তু করোনার কারণে যখন আমাদের কাছে অসহায় মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেল অথচ আমাদের আর্থিক অবস্থা অনুকূল ছিলো না তখন বাধ্য হয়েই সবাইকে আমরা জানিয়েছি যাতে অন্যরাও অসহায়দের জন্য এগিয়ে আসে।’ বলেন শিউলী।

‘গোলে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ থেকে কারা সহায়তা পাবেন এমন কোনো শর্ত নেই জানিয়ে শিউলী বলেন, ‘যারাই আর্থিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, সেটা দেশের  যেকোনো স্থান থেকেই হোক না কেন, আমরা চেষ্টা করব তার পাশে দাঁড়ানোর।’

কথাপ্রসঙ্গে জানা গেলো প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা এখন ২০। যারা প্রত্যেকেই সাধ্য অনুসারে কাজ করছেন মানবতার সেবায়। তাদের এ বিষয়ে বৃহৎ পরিকল্পনাও রয়েছে। খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসেই পথশিশুদের জন্য স্কুল খোলা হবে। শীত আসছে। শীতে ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতের কাপড় দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে খাওয়ার আয়োজন তো থাকবেই।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়