ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

মনিরা সুলতানার ব্যতিক্রমী ছাদকৃষি

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ২৪ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৮, ২৪ এপ্রিল ২০২১
মনিরা সুলতানার ব্যতিক্রমী ছাদকৃষি

গাজীপুর মহানগরীর জোড়পুকুর পাড় এলাকার বিদেশ ফেরত মনিরা সুলতানা মুনমুনের ব্যতিক্রমী ছাদকৃষি সবাইকে অবাক করে দিচ্ছে। তিনি স্বামী আকরাম হোসেনের সহযোগিতায় গত সাত বছরে তার বাড়ির ছাদ সাজিয়েছেন নিজের স্বপ্নের মতো করে। 

সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চলছে তার পরিচর্যা। মাছ পালনের পানির হাউস থেকে ফাইটোপ্লাংকটন মিশ্রিত পানি দেওয়া হচ্ছে গাছের গোড়ায়। নিজেই উৎপাদন করছেন জৈব সার। গাছগুলোর গোড়ায় মাটি না দিয়ে সেখানে দেওয়া হচ্ছে নারকেলের ছোবড়া ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ। ছাদকৃষি শুধু নিজের মধ্যে না রেখে তিনি তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্যদের মাঝেও। 

তিনি তার ছাদে অন্যদের দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া কীভাবে খুব অল্প জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে চলে গবেষণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে অনলাইনে দেন প্রশিক্ষণ। নিজের ছাদে উৎপাদিত চারা থেকে কিছু বিক্রিও করেন তিনি। এভাবে ছাদ ও ছাদকৃষিকে বাণিজ্যিকরূপ দিয়েছেন মনিরা সুলতানা।

তার ছাদে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বড় বড় সব পানির পাত্রে উঁকি দিয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা ও পদ্ম। পাশেই বড় ধরনের পানির হাউস তৈরি করা হয়েছে। সেখানে লাফালাফি করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ছাদজুড়ে যেন প্রাণ-প্রকৃতির খেলা চলছে। বাহারি ফুল, ফল, সবজি, ঔষধি গাছ, লতাগুল্মে ছেয়ে আছে ছাদের চারপাশ। ছাদের দক্ষিণ পাশে পাখিদের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেখানে একটু পর পর উড়ে এসে বসছে ঘুঘু, বুলবুলি, শালিক, চড়ুই।

মনিরা সুলতানা জানালেন, তিনি শখের বশে ২০১৪ সালের দিকে অল্প কিছু গাছ এনে লাগিয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ মাথায় এলো কীভাবে এটিকে উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যিক করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের ঔষধি গাছ, সবজি ও নানা ধরনের ফলের গাছ আমদানি করেন।

তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ফেসবুকে ‘প্ল্যান্টস ফ্রম মুন’ নামের একটি গ্রুপ খোলেন। সেখানে সদস্য হন অনেকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন।

মনিরা সুলতানা বলেন, ‘৫ মার্চ সর্বশেষ আমি প্রায় ৩০ জনকে নিয়ে কর্মশালা করি। তাতে শেখানো হয়, কীভাবে উদ্ভিদের পরিচর্যা করতে হয়, জৈবসার তৈরির প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ভিদের জাত সংগ্রহের পদ্ধতি। ছাদে আমি মাছের চাষও করছি। ছাদবাগানে সব মিলিয়ে উদ্ভিদের সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৯টি। এর মধ্যে ঔষধি গাছ আছে ৪০ প্রজাতির। শোভাবর্ধনকারী গাছ আছে ৫৬ প্রজাতির। বিশেষ প্রজাতির গাছের সংখ্যা ২৬টি। দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় গাছ আছে ৭ প্রজাতির। ফলদ গাছের সংখ্যা ৯৯টি। অন্যান্য অন্তত ১০০ প্রজাতির গাছ আছে।’
ঔষধি গাছের মধ্যে আছে অর্জুন, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, ঘৃতকুমারী, নিম, তুলসী, থানকুনি, বাসক, পেইন কিলার, অ্যাড্রেসিয়া বেরি, ডেইজি, কিডনি প্ল্যান্ট, ভ্যানিলা অর্কিড, কর্পূর, জয়ত্রী, গোলমরিচ, সুইট রেসিন, ট্রি রেসিন, কারি পাতা প্রভৃতি। সবজির মধ্যে আছে লেটুস, করলা, ধনেপাতা, বেগুন, কাঁকরোল, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, লাল ঢেঁড়স, শিম, শসা, টমেটোসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতি।

মনিরা সুলতানার স্বামী আকরাম বলেন, ‘আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেই মনিরা সুলতানা ছাদে গাছপালা রোপণ করতে শুরু করেন। ছাদকে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার এই পদ্ধতিটি নারীদের সমাজে এগিয়ে রাখবে।’

গাজীপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়