ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শাপলা কুড়িয়ে তাদের প্রতিদিন আয় হাজার টাকা

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ৫ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৭, ৫ আগস্ট ২০২১
শাপলা কুড়িয়ে তাদের প্রতিদিন আয় হাজার টাকা

একদিকে মহামারি করোনা সংক্রমণের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে করোনা রোধে চলছে কঠোর লকডাউন। সার্বিক পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন নিন্ম আয়ের পরিবারগুলো। অনেকেই জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম বেড় করে নিচ্ছেন। এর মধ্যে বিনা পুঁজিতে দিনের কয়েক ঘণ্টা শাপলা কুড়িয়ে প্রায় শতাধিক পরিবারের আয়ের উৎস তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ালবিল এলাকার গাদিঘাট ও হাঁসাড়ার আলমপুরে শাপলা কুড়িয়ে দৈনিক একেক জনের আয় হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। বিলজুড়ে শাপলার সমাহার। বিস্তীর্ণ বিল থেকে ছোট ছোট কোষা নৌকা বোঝাই করে এসব শাপলা আনা হচ্ছে এলাকার রাস্তার পাশে। শাপলার আঁটি গুণে গুণে পিকআপ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। দাম চুকিয়ে শাপলা ভর্তি ট্রাকগুলো ছুটে যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।

গাদিঘাট এলাকার সুমন খান, মো. মোশারফ, নুর হোসেনসহ অনেকে বলেন, লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে আছেন তারা। এখন শাপলা বিক্রির টাকায় দিন পার করছেন। এখানে প্রায় ৫০/৬০ জন কাজ করছেন।  

হাঁসাড়া এলাকার আলামপুরের আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার হোসেন, বলাই রাম জানান, চলমান লকডাউনে তেমন কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি তারা। অনেকটা বাধ্য হয়েই শাপলা কুড়াতে হচ্ছে। এখানে ৩০/৪০টি পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রি করে। 

উপজেলা সদরের শাপলা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর যাবত হরপাড়ায় শ্রমিকের কাজ করছি। লকডাউনের কারণে বেকারিএখন। কামারখোলা বিল থেকে শাপলা কুড়িয়ে এসে প্রতিদিন ডাকবাংলা মার্কেটের সামনে বিক্রি করি।

শাপলার পাইকার সেলিম শেখ বলেন, সিরাজদিখান থেকে এখানে পিকআপ ভ্যান নিয়ে শাপলা নিতে এসেছি। প্রায় ১ হাজার আটি শাপলা কিনে ঢাকার যাত্রাবাড়ি যাচ্ছি। আলামপুর এলাকার জমাইতুল্লাহ ও চাঁন মিয়া জানান, প্রতিদিন বিকালে তিনি এসব শাপলা নিতে আসেন এখানে। পরে রাজধানীর কাওরান বাজারে বিক্রি করেন।

গাদিঘাট এলাকার ওহাব হাওলাদার বলেন, আড়িয়ালবিল এলাকায় শাপলা কুড়িয়ে কর্মহীন অনেকের সংসার চলছে। তাদের কাছ থেকে এসব শাপলা কিনে নিচ্ছি। এতে উভয় পক্ষেরই অর্থ কামাই হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিলে শাপলা কুড়ানো হয়। প্রায় ৬০/৭০টি শাপলা হিসাব অনুযায়ী একটি আঁটি বাঁধা হয়। প্রতি আঁটি শাপলা পাইকাররা কেনেন ১২-১৫ টাকায়। দৈনিক একজন কমপক্ষে ৫০ আঁটি শাপলা কুড়াতে পারেন। প্রতিদিন শ্রীনগর থেকে শাপলা বোঝাই করে প্রায় ৮/১০টি পিকআপ ভ্যান ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে যাচ্ছে। সুস্বাদু সবজি হিসেবে শাপলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামী কার্তিক-পৌষ মাস পর্যন্ত শাপলা কুড়াবেন তারা। করোনাকালীন ক্রান্তিলগ্নে শাপলা কুড়ানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্মহীন শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়