ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাটি ছাড়াই গাছের চারা

মহাসিন আলী, মেহেরপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১২:৩৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২২
মাটি ছাড়াই গাছের চারা

মাটির বদলে প্লাস্টিকের ট্রেতে জৈব্যসার দিয়ে উৎপাদন করা হয় বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা।

রবি মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত মেহেরপুরের কৃষকরা। আর এ জন্য কৃষকদের প্রয়োজন পড়ছে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটোসহ নানা ধরনের সবজির চারা। আর তাই মাটির স্পর্শ ছাড়াই কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে কৃষকদের সরবরাহ করছেন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জিয়া। তার চারা উৎপাদনের এমন উদ্যোগ ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে পুরো জেলা জুড়ে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোকোডাস্টে পানি ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। তাই যেকোনো বীজ থেকে চারা গজায় খুব সহজেই। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় একসঙ্গে লাখ লাখ চারা উৎপাদন সম্ভব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির ব্যবহার ছাড়াই প্লাস্টিকের ট্রের মধ্যে কোকোডাস্ট ও জৈবসার ব্যবহার করে সবজি ও ফল-ফুলের বীজ রোপণ করে চারা উৎপাদন করেছেন জিয়া। সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো সেই ট্রেতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শাক-সবজি ও ফল-ফুলের চারা। তবে এসব চারার সঙ্গে মাটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নারকেলের ছোবড়ার (কোকোডাস্ট) মধ্যে বীজ রোপণ করা হচ্ছে। 

জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ নেই। এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে প্রতি বছর আমার আয় হচ্ছে দুই-তিন লাখ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘লেখাপড়া শেষে রাজশাহীর আকাফুজি এগ্রো টেকনালজি নামে একটি কৃষি খামারে চাকরি করতাম। ৮-৯ বছর চাকরি করেছি। পরে গ্রামে ফিরে শুরু করি নার্সারির ব্যবসা। কয়েক বছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চারা উৎপাদন করে কৃষকদের কাছে কম দামে বিক্রি করি।’ 

জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘লাভবান হওয়ায় এক বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। পুরো জমিতেই বীজতলা তৈরি করেছি। খুলনা থেকে কোকোডাস্ট সংগ্রহ করে তাতে জৈব সারের (কেঁচো কম্পোস্ট) মিশ্রণ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও গাছের চারা উৎপাদন করছি।’

সফল এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘১০ হাজার প্লাস্টিকের ট্রে সংগ্রহ করি। এতে একবারে এক লাখ চারা উৎপাদন করা হয়। ট্রেতে বীজ রোপণ শেষে ঢেকে দেওয়া হয় নেট দিয়ে। ফলে কোনো ধরনের কীটপতঙ্গ চারাগাছকে আক্রমণ করতে পারে না। চারাগুলো বেড়ে উঠতে পারে সুস্থ ও সবলভাবে।’

ক্যাপসিক্যাম, স্ট্রবেরি, হাইব্রিড মরিচ, লাউ, কুমড়া, তরমুজ, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে। সব খরচ বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা আয় কারা যায় এই কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় কৃষক রুবেল ও হাবিবুর জানান, গেল বছর কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে উৎপাদিত বাঁধাকপির চারা নিয়ে জমিতে ভালো ফলন পেয়েছি। তাই এবারও আমরা এসেছি চারা সংগ্রহ করতে। সুস্থ, সবল ও বালাইমুক্ত চারা হলে ফসল ভালো হয়।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে জিয়াউর রহমানের চারা উৎপাদনের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। কোকোডাস্টে পানি ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। তাই যেকোনো বীজ থেকে চারা গজায় খুব সহজেই। বীজতলায় একসঙ্গে লাখ লাখ চারা উৎপাদন সম্ভব। আমরা জিয়াউর রহমানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের এভাবে চারা উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছি।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়