ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

বিতর্কিত ক্যারিয়ারে সাইমন্ডসের জানা-অজানা

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১৫ মে ২০২২   আপডেট: ১৭:৪৯, ১৫ মে ২০২২
বিতর্কিত ক্যারিয়ারে সাইমন্ডসের জানা-অজানা

১১ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার এন্ড্রু সাইমন্ডস। কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিলের কাছে এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত হন তিনি। বিতর্ক সঙ্গে করে নিয়েই জীবনযাপন করেছেন। বলিউডে অভিষেক থেকে শুরু করে মাঙ্কিগেট কেলেঙ্কারি, আইকনিক ড্রেডলক ছেটে ফেলা। সাইমন্ডসকে নিয়ে এমন কিছু জানা-অজানা জেনে নেওয়া যাক-

২০০৩ বিশ্বকাপে দলের প্রত্যেকে বিতাড়িত করতে চাইলেও পন্টিং ছিলেন পাশে

২০০৩ বিশ্বকাপ ছিল সাইমন্ডসের আগমনী বার্তা। ওইবার অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল তৃতীয় বিশ্বকাপ। সাইমন্ডস ৩২৬ রান করেন এবং নেন দুই উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন।

কিন্তু ওই বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল সাইমন্ডসের। স্কোয়াডে জায়গাই হতো না তার। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও সাইমন্ডসের ভালো বন্ধু অ্যাডাম হলিওকে বলেছেন এই কথা। ড্রেসিংরুমের সবাই যখন সাইমন্ডসকে নেওয়ার বিরুদ্ধে, তখন রিকি পন্টিং পাশে দাঁড়ান। ২০২০ সালে এক সাক্ষাৎকারে হলিওকে বলেছেন, ‘আমি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অনেককে জানি যারা তাকে চায়নি ওই বিশ্বকাপে। কিন্তু পন্টিং বলেছেন, ‘আমি তাকে চাই দলে।’

আইকনিক ড্রেডলক ছেটে ফেলেন দাতব্য কাজে

কোকড়ানো ঝুলে থাকা চুল, যাকে বলে ড্রেডলক। আইকনিক এই হেয়ার স্টাইলে প্রায় ছয় বছর মাঠে কাটিয়ে দেন সাইমন্ডস। কিন্তু ২০০৯ সালে তিনি তার প্রিয় হেয়ার স্টাইল উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি লাইভ টেলিভিশনে ন্যাড়া হয়ে যান। তার চুলগুলো লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় নিলামে তোলেন। তারপর থেকে টাক মাথায় ক্যারিয়ারের বাকি সময় পার করেন সাইমন্ডস।

ভারতীয় টিভিতে অভিষেক

ইন্ডিয়ান রিয়েলিটি শো বিগ বসের প্রতিযোগী ছিলেন সাইমন্ডস। ভারতে বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। ২০১১ সালে দুই সপ্তাহের জন্য এই শো করেন তিনি, সঙ্গে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সানি লিওন।

জন্ম ইংল্যান্ডে

ইংল্যান্ডের বার্মিংহ্যামে জন্ম হয়েছিল সাইমন্ডসের। প্রাপ্ত বয়স্ক জীবনের বেশিরভাগ সময় ছিলেন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। শিশুকালে তাকে পোষ্য নেন এক ইংলিশ দম্পতি। তাদের সঙ্গে সাইমন্ডস চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে তাকে ইংল্যান্ড ‘এ’ দলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও প্রত্যাখ্যান করেন।

ডাকনাম রয়

সাইমন্ডসের নামের আশেপাশে কোনো রয় নেই, তারপরও এটি তার জনপ্রিয় ডাকনাম। তিনিও সবসময় বলে আসতেন, ‘আমাকে রয় ডাকো’।

কোথা থেকে এলো এই নাম? শৈশবে বাস্কেটবলের বিশাল ভক্ত ছিলেন সাইমন্ডস। ব্রিসবেন বুলেটসের অজি গ্রেট লেরয় লগিন্সের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় ভক্ত-সতীর্থরা তাকে ডাকতে শুরু করেন রয়।

মাঙ্কিগেট কেলেঙ্কারি

২০০৮ সালে সিডনি টেস্ট চলাকালে হরভজনের বিরুদ্ধে সাইমন্ডস ও অন্য অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়রা বানর ডাকার অভিযোগ করেন। এই ঘটনা ক্রিকেট বিশ্বে ক্ষোভের ঝড় তুলেছিল। সিরিজই স্থগিত হতে বসেছিল।

শেষ পর্যন্ত তিন ম্যাচের জন্য হরভজনের নিষেধাজ্ঞা আসে। এই বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন সাইমন্ডস। অবশ্য ২০১১ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে তাদের পুনর্মিলন হয়, যেখানে এক সাক্ষাৎকারে সাইমন্ডস বলেছিলেন, ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন হরভজন।

বলিউডে অভিষেক

বলিউডেও অভিষেক হয়েছিল সাইমন্ডসের। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার পা পড়ে পাতিয়ালা হাউজ দিয়ে। অক্ষয় কুমার ও ঋষি কাপুরের সঙ্গে অভিনীত এই ছবি মুক্তি পায় ২০১১ সালে।

রাগবিও খেলেছেন

ব্রিসবেন ব্রঙ্কোসের বড় ফলোয়ার ছিলেন সাইমন্ডস। ২০০২ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে তো রাগবিতেই নাম লেখেন তিনি। রাগবি লিগে খেলার ইচ্ছা ছিল তার।

২০০৯ সালে চুক্তি ভঙ্গ করায় অস্ট্রেলিয়া দল থেকে বাদ পড়লে ব্রিসবেন ব্রঙ্কোসের সঙ্গে অনুশীলনে দেখা যায় তাকে। ওই বছর জুনে উইনাম-ম্যানলির হয়ে একটি প্রদর্শনী ম্যাচও খেলেন। পরে আবার ফিরে যান ক্রিকেটে।

অ্যালকোহল ইস্যু ও বিতর্কিত কন্ট্রাক্ট ক্লজ

২০০৫ সালে কার্ডিফে বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েন সাইমন্ডস। ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যায় মদের পার্টিতে যোগ দেওয়া ছিল তার অপরাধ। দলের নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন এবং জরিমানাও গোনেন। তার এই কান্ডের পরের দিন বাংলাদেশের কাছে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া।

তিন বছর পর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া সফর করেছিল, সেবার তার খেলার কথা ছিল। তাকে দলেও রাখা হয়েছিল। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগের দিন দলের বাধ্যতামূলক বৈঠকে উপস্থিত না থেকে ডারউইনে মাছ ধরতে চলে যান। সেদিন ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও বৈঠকে উপস্থিত হওয়া ছিল জরুরি। কিন্তু দলের নিয়ম ভেঙে ছিটকে যান এই অলরাউন্ডার। কয়েক মাসের জন্য দলের বাইরে ছিলেন তিনি।

২০০৯ সালে মদ খেয়ে রেডিওতে এক বিতর্কিত সাক্ষাৎকার দেন সাইমন্ডস। ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেন। ওই বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ান দলে ফেরেন তিনি এবং জনসম্মুখে মদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে একটি চুক্তিও সই করতে হয়েছিল বোর্ডের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, ড্রেসিংরুমে খাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও শুধরাতে পারেননি, কয়েকজন সতীর্থকে নিয়ে রাগবি ম্যাচ দেখার সময় মদপান করায় তার ক্যারিয়ারের বিদায় ঘণ্টা বাজে।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়