ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জিতলো সিলেট, উৎসবেও মাতলো ‘সিলেট’

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫১, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২৩:০৪, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩
জিতলো সিলেট, উৎসবেও মাতলো ‘সিলেট’

আরও একটি জয় সিলেটের। আরও একবার উৎসবে মাতলো সিলেটবাসী। সিলেটে পা রেখে গোটা শহরের ভালোবাসা পেয়েছিলেন মাশরাফি, মুশফিকরা। সেই ভালোবাসা আজ তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন ভিক্টরি ল্যাপে।

খুলনা টাইগার্সকে ৩১ রানে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সিলেট স্ট্রাইকার্স নিশ্চিত করেছে শেষ চার। ১০ ম্যাচে ৮ জয়ে সুরক্ষিত তাদের জায়গা। বিপিএলে সিলেটের এমন মসৃণ যাত্রা আগে কখনোই হয়নি। শেষ চার নিশ্চিতের দিনে তাদের পারফরম্যান্স আরও ক্ষুরধার, আরও ভয়ংকর।

খুলনার আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে তৌহিদ হৃদয় ও জাকির হাসানের ফিফটিতে ৪ উইকেটে ১৯২ রানের পুঁজি পায় সিলেট। পাহাড়সম রান তাড়া করতে গিয়ে রুবেল হোসেনের তোপে খুলনা আটকে যায় ১৬১ রানে।

সিলেটে আরও একদিন হবে বিপিএলের ম্যাচ। তবে স্বাগতিক দল সোমবার নিজেদের শেষ ম্যাচ খেললো হোম ভেন্যুতে। তাইতো ১৮ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। স্টেডিয়ামের প্রতিটি গ্যালারি টইটুম্বুর। দেশের একমাত্র গ্রীন গ্যালারিতেও সিলেটের দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। পুরো স্টেডিয়ামে ছিল গোলাপী উৎসব। মাশরাফির হাত ধরে সিলেট প্রথম দল হিসেবে চলে গেছে প্লে’অফে।

বিপিএলে সিলেটের দলটি অনেকদিন ধরেই ভালো করতে পারছিল না। মাশরাফি, মুশফিক, শান্ত, জাকিরে এবার সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আর অপেক্ষার পালা ফুরানোর পথে।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে সিলেটের শুরুটা ভালো হয়নি। আগে ম্যাচের নায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ফেরান প্রথমবার বিপিএল খেলতে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মার্ক দেয়াল। ১২ বলে ৬ রানের বেশি করতে পারেননি এ ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে পাল্টে যায় সিলেটের ব্যাটিং। দুই তরুণ তৌহিদ ও জাকির এলোমেলো করে দেন খুলনার বোলিং আক্রমণ।

শিশিরভেজা উইকেটে বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল বোলারদের। এলোমেলো হচ্ছিল বোলিং। হাত থেকে ছুটে লাইন ও লেন্থ মিস করছিলেন বারবার। সেসবের পুরো ফায়দা নিয়ে হৃদয় ও জাকিরের ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা। ৬৮ বলে ১১৪ রানের জুটি গড়েন।

ইনজুরি থেকে ফিরে হৃদয়ের ব্যাট হাসছিল না। আজ জ্বলে উঠে তার ব্যাট। ৪৯ বলে ৯ চারে তার ব্যাট থেকে আসে ৭৪ রান। এছাড়া শুরুতে ২৫ বলে ২৯ রান করা জাকির পরের ১৩ বলে করেন ২৪ রান। ৩৮ বলে তার ৫৩ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ২ চার ও ৪ ছক্কায়। মুশফিক শেষ দিকে নেমে ৭ বলে ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে তার বিদায়ে লাভ হয়েছে সিলেটের।

রায়ান বার্ল ও থিসারা পেরেরা তুলতে পেরেছেন ঝড়। ১০ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন তারা। আগে নামা বার্ল ১১ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২১ ও পেরেরা ৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান করেন। প্রথম ১০ ওভারে ৭৮ রান পাওয়া সিলেট শেষ ১০ ওভারে ১১৪ রান পায়।

৪০ রানে ২ উইকেট নিয়ে খুলনার সেরা বোলার স্পিনার দেয়াল।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুলনার শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা রুবেল হোসেন প্রথম ওভারেই ফেরান দুই ওপেনারকে। লেগ স্টাম্পের উপরের বল বালবিরনে উড়াতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন।

ওই ওভারের শেষ বলে তামিমকে শর্ট বল করেন ডানহাতি পেসার। উড়াতে গিয়ে তামিম ধরা পড়েন মিড অনে। ১০ বলে ২ চারে ১২ রান করেন তামিম।

সেখান থেকে মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে জুটি গড়েন শাই হোপ। প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন দুজনই। কিন্তু রান রেটের বোঝা এতোটাই বেশি ছিল যে বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হচ্ছিল। তাতে বিপদ চলে আসে দ্রুত। পেসার রাজাকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা উড়াতে গিয়ে ৩৩ রানে আটকে যান হোপ। ২২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় এ রান করেন। জয়ের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২০ রান।

আজম খান চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ভয়ও দেখিয়েছিলেন। ১৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় দ্রুত ৩৩ রান করেন। তার পথ আটকে দেয় স্বদেশী ইমাদ ওয়াসিম। বাঁহাতি স্পিনারের সোজা বল মিস করে বোল্ড হন। খুলনা শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন পেসার রাজা। তার শর্ট বলে ইয়াসির হাওয়ায় ক্যাচ তোলেন। ফিরতি ক্যাচ নেন রাজা নিজেই।

রুবেল পরের স্পেলে ফিরে এসে মার্ক দেয়াল ও সাইফউদ্দিনকে বোল্ড করেন। মার্ক দেয়ালের উইকেট নিয়ে বিপিএলে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে শততম উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচে রুবেলের সুযোগ ছিল ৫ উইকেট নেওয়ার। তার শর্ট বলে পুল করেছিলেন নাসুম। কিন্তু ফাইন লেগে ক্যাচ ছেড়ে চার বানিয়ে দেন ইমাদ ওয়াসিম। ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন রুবেল।

জয় পাওয়া ম্যাচে মাশরাফি নিজের বোলিং শেষ করতে পারেননি। ২.১ ওভার বোলিংয়ের পর কুঁচকির চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর আর মাঠে ফেরেননি। ম্যাচ শেষেও বের হননি ড্রেসিংরুম থেকে। তার পরিবর্তে মাঠ পরিচালনা করেছিলেন মুশফিকুর রহিম।

ম্যাচ শেষে সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। দোয়া করবেন আমরা যেন আপনাদেরকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারি।’

ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়