ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইতিহাসে বিশ্বকাপ

প্রথম বিশ্বকাপ ১৯৩০

আমিনুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২২ মে ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রথম বিশ্বকাপ ১৯৩০

উরুগুয়ে ১৯৩০ বিশ্বকাপজয়ী দল

১৯৩০ ফিফা বিশ্বকাপ : 

১৩টি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে আমেরিকা অঞ্চলের ৯টি ও ইউরোপের ৪টি দল ছিল। ভ্রমণের খরচ ও সময় বিবেচনা করে অনেক ইউরোপীয় দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ যুগপৎভাবে অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্স ও মেক্সিকোর মধ্যে। যেখানে ৪-১ গোলে ফ্রান্স জয়ী হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বেলজিয়ামের ম্যাচে ৩-০ গোলে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হয়। বিশ্বকাপের প্রথম গোল করেন ফ্রান্সের লুসিয়েন লরেন্ত।

ফাইনালে উঠে যায় প্রতিযোগিতার ফেবারিট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা এবং ৯৩ হাজার দর্শকের সামনে উরুগুয়ে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা লাভের গৌরব অর্জন করে।

উৎপত্তি

স্যার থমাস লিপটন ১৯০৯ সালে তুরিনে স্যার থমাস লিপটন ট্রফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। যদিও এটি দেশভিত্তিক প্রতিযোগিতা ছিল না, তবে প্রতিটি ক্লাব ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এজন্য এই প্রতিযোগিতাকে অনেকে প্রথম বিশ্বকাপ বলেন। এতে ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা পেশাদার দল অংশ নেয়।

১৯১৪ সালে ফিফা অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় ফুটবলকে ‘অপেশাদার বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় এবং এই প্রতিযোগিতা পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এর ফলে ১৯২০ সালের গ্রীষ্ম অলিম্পিকে বিশ্বের প্রথম আন্তমহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় মিসর (প্রথম খেলায় নকড আউট হয়) ও ১৩টি ইউরোপিয়ান দল। এতে স্বর্ণ জেতে বেলজিয়াম।

উরুগুয়ে ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের অলিম্পিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ লাভ করে। ১৯২৮ সালে অলিম্পিকের বাইরে আলাদাভাবে নিজস্ব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩০ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পা দেওয়া দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে (১৯২৪ সাল থেকে ফিফা পেশাদার খেলা শুরু করে) ফিফা তাদের ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচন করে।

নির্বাচিত বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থাকে এতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু উরুগুয়েতে বিশ্বকাপ আয়োজনের অর্থ ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল সফরে আসতে হবে। এজন্য কোনো ইউরোপীয় দেশ প্রতিযোগিতা শুরুর দুই মাস আগেও দল পাঠাতে সম্মত হয়নি।

শেষ পর্যন্ত বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া থেকে দল আনাতে সক্ষম হয় ফিফা। মোট ১৩টি দেশ এতে অংশ নেয়। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৭টি, ইউরোপ থেকে ২টি ও উত্তর আমেরিকা থেকে ২টি।

অংশগ্রহণকারী দেশগুলো : 

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, প্যারাগুয়ে, চিলি, বলিভিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সময়মতো নিবন্ধন করলেও আটলান্টিকের অপর পারের কোনো ইউরোপীয় দেশ নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন করেনি। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল ভ্রমণের কারণে খুব কম ইউরোপীয় দলই প্রতিযোগিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।

উরুগুয়ের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে অংশগ্রহণের আবেদন জানিয়েছিল। ১৯২৯ সালের ১৮ নভেম্বর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কমিটি সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। প্রতিযোগিতা শুরুর দুই মাস আগে পর্যন্ত ইউরোপের কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়নি।

ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে ও উরুগুয়ের সরকার শেষ চেষ্টা হিসেবে অংশগ্রহণের বিনিময়ে ইউরোপীয় দলগুলোর যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের প্রস্তাব দেন।

শেষ পর্যন্ত চারটি ইউরোপীয় দেশ অংশগ্রহণে সম্মত হয় : বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া। রোমানিয়া দলের (যারা এক মাস আগে যুগোস্লাভিয়ার কাছে হেরেছিল এবং পরে ১৯৩১ সালে বলকানস কাপ জিতেছিল) ম্যানেজার ছিলেন কোস্তেল রদুলেস্কু এবং কোচ ছিলেন তাদের অধিনায়ক রুডল্‌ফ ওয়েজার ও অক্টাভ লুসিদে এবং দলটি জেনোয়া থেকে এসএস কোন্তে ভের্দ জাহাজে করে রওয়ানা দেয়।

১৯৩০ সালের ২১ জুন ফ্রান্স দলকে Villefranche-sur-Mer থেকে তুলে নেওয়া হয় এবং বেলজিয়াম দলকে বার্সেলোনা থেকে জাহাজে ওঠানো হয়। একই জাহাজে জুলে রিমে ট্রফিসহ তিনজন ইউরোপীয় রেফারিকে নেওয়া হয় : বেলজিয়ান জাঁ ল্যাঙ্গেনাস ও হেলরি ক্রিস্টোফ এবং প্যারিসবাসী থমাস ব্যালওয়ে, যিনি সম্ভবত ছিলেন একজন ইংরেজ।

১৯৩০ সালের ২৯ জুন রিও ডি জেনেরিও থেকে ব্রাজিল দলকে নৌকাতে ওঠানো হয় এবং তারা ১৯৩০ সালের ৪ জুলাই তারিখে উরুগুয়েতে পৌঁছায়। রিওতে বলওয়ে খবর পেয়েছিলেন যে ফ্রান্সে তার স্ত্রী মারা গেছেন। মার্সেই থেকে যুগোস্লাভিয়া দল বাষ্পীয় জাহাজ ফ্লোরিডাতে করে উরুগুয়েতে পৌঁছায়। তাদের সঙ্গে অলিম্পিকের জায়ান্ট কিলার মিসর দলের সঙ্গে আসার কথা থাকলেও তারা জাহাজ ধরতে পারেনি।

ভ্রমণ সম্পর্কে লুসিয়েন লরেন্ত বলেছিলেন, ‘আমরা ১৫ দিন “কেপ ভার্দে” জাহাজে ছিলাম। আমরা Villefranche-sur-Mer-এ বেলজিয়ানয় ও যুগোস্লাভিয়ানদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমরা আমাদের মূল ব্যায়াম ও প্রশিক্ষণ করেছি জাহাজের ডেকে। কোচেরা ট্যাকটিক্স সম্পর্কে কিছুই বলেননি।’

গ্রুপ বিশ্লেষণ : 

গ্রুপ ১ : প্রথম গ্রুপেই কেবল চারটি দল অংশ নিয়েছিল। এরা হচ্ছে আর্জেন্টিনা, চিলি, ফ্রান্স ও মেক্সিকো। এই গ্রুপ থেকে  আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে ওঠে।

গ্রুপ ২ : 

গ্রুপ ৩ : 

গ্রুপ ৪ : 

সেমিফাইনাল : 

ফাইনাল : 

খেলা শুরুর আগেই কার বল দিয়ে খেলা হবে সে বিষয়ে ঝগড়া বেধে যায়। শেষ পর্যন্ত ফিফা সিদ্ধান্ত নেয় প্রথম অর্ধে আর্জেন্টিনার বল ও দ্বিতীয় অর্ধে উরুগুয়ের বল দিয়ে খেলা হবে। প্রথম অর্ধে উরুগুয়ে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে ম্যাচ জেতে এবং প্রথম বিশ্বকাপ বিজয়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তৎকালীন ফিফা সভাপতি জুলে রিমে ‘বিশ্বকাপ ট্রফি’ প্রদান করেন। পরে এই ট্রফির নাম রাখা হয় ‘জুলে রিমে ট্রফি’।

বিশ্বকাপ জয়ের পরের দিন উরুগুয়েতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেস উরুগুয়ের দূতাবাসে উন্মত্ত জনতা পাথর নিক্ষেপ করে।

সেই ফাইনালের কেবল একজন খেলোয়াড় ফ্রান্সিসকো ভ্যারালো (যিনি আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন) ২০০৭ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।

এক নজরে ১৯৩০ বিশ্বকাপ

আয়োজক : উরুগুয়ে

চ্যাম্পিয়ন : উরুগুয়ে

রানার্স আপ : আর্জেন্টিনা

তৃতীয় স্থান : যুক্তরাষ্ট্র

চতুর্থ স্থান : যুগোস্লাভিয়া

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ : ১৩ জুলাই ১৯৩০ (ফ্রান্স ৪ – ১ মেক্সিকো, ইউএসএ ৩ – ০ বেলজিয়াম)

বিশ্বকাপের প্রথম গোল : লুসিয়েন লরেন্ট (ফ্রান্স)

গোল্ডেন বল : জোস নাসাজ্জি (উরুগুয়ে)।

গোল্ডেন বুট : গুইলেরমো স্তাবিল (আর্জেন্তিনা)

গোল্ডেন গ্লাভস : এনরিক বালেস্তোরেস (উরুগুয়ে)।

বি.দ্র : ১৯৯৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চারবার গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কারের নাম বদলে প্রখ্যাত প্রয়াত সোভিয়েত গোলকিপার লেভ ইয়াসিনের নামে করা হয়েছিল ‘ইয়াসিন পুরস্কার’৷ ২০১০ থেকে আবার ফিরে যায় পুরোনো নামে।

 তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৪/আমিনুল/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়