ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

স্টুয়ার্ট ব্রড: শুভ্রতার মলাটে মোড়ানো এক মহাকাব্য

আরিফুল হক বিজয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৩ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ২০:৩০, ৩ আগস্ট ২০২৩
স্টুয়ার্ট ব্রড: শুভ্রতার মলাটে মোড়ানো এক মহাকাব্য

দ্য ওভাল। লন্ডন। শেষ বিকেলের সূর্যটা ধীরে ধীরে মিইয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিস্নাত আকাশের অশ্রু ঝেড়েমুছে রক্তিম হয়ে উঠেছে গোধূলীর একাংশ। লাল চেরিটা হাতে নিয়ে ছুটতে শুরু করলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ক্যারিয়ারের শেষ বলটা ছুঁড়লেন।

গুড লেংথ ফোর্থ স্টাম্প। না চাইতেও বিষ মেলানো লাল চেরিটা ছুঁয়ে ফেললেন আলেক্স ক্যারি! ব্যাটের কোণায় চুমু খেয়ে বল জমা হলো বেয়ারস্টোর গ্লাভসে। মুহূর্তেই উঠে দাঁড়াল পুরো ওভাল। মুহুর্মুহু করতালির ধ্বনিতে ছেঁয়ে গেল চারপাশ। হঠাৎ গ্যালারিতে দেখা গেল স্বর্গীয় এক দৃশ্য।

আরো পড়ুন:

অশ্রুভেঁজা চোখে কৈশোর পেরোনো বাচ্চাদের মতো উল্লাস করছেন এক ইংলিশ ভদ্রলোক। তিনি ক্রিস ব্রড, স্টুয়ার্ট ব্রডের বাবা। এমনই একদিনে ডারবানে বিমর্ষতায় মুষড়ে পড়েছিলেন ক্রিস। সেটারও উপলক্ষ্য ছিলেন তার ছেলে।

লন্ডনের আনন্দাশ্রু আর ডারবানের বেদনার মাঝে ব্যবধান ১৬ বছর। যুবরাজের হাতে ছয় ছক্কা খাওয়ার পর অনেকেই ব্রডের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। এমনকি ক্রিস ব্রডও পরের ম্যাচে কাতর নয়নে যুবিকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার ছেলের ক্যারিয়ারটাই শেষ করে দিলে। ধন্যবাদ।’

কার্যত ঐ ‘শেষ’ই ছিল ব্রডের ক্যারিয়ারের ‘শুরু’। ব্রড যখন আসল শেষটা করলেন, তখন নামের পাশে ৬০৪ টেস্ট উইকেট। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সংখ্যাটি ৮৪৭। ১৬ বছর আগেই ব্রডকে জার্সিতে যে কথাটি লিখে দিয়েছিলেন যুবি, ‘আমিও পাঁচটা ছয় খেয়েছি। সুতরাং, অনুভূতিটা আমার জানা। ইংল্যান্ডের (তোমার) ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা।’

যুবরাজের শুভকামনা কিংবা নিজের দৃঢ়তা - যাই হোক, ব্রড ধীরে ধীরে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে শুরু করলেন। হতাশার পথ থেকে সফলতার দিকে বাঁক নিলেন। ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া মনোবল কুড়িয়ে নিয়ে জড়ো করতে শুরু করলেন।

ফল পেলেন সে বছরই মাস দুয়েক পর। শুভ্রতায় মোড়ানো এক সকালে সাদা জার্সি গায়ে লাল বলটা গ্রীপে চেপে দৌড় শুরু করলেন ব্রড, ঘুরে দাঁড়ানোর দৌড়। শুধু ঘুরে দাঁড়াননি, স্মৃতির পটে তিক্ত হয়ে থাকা ‘ছয়’ সংখ্যাটির পরে আরও দুটো শূন্য বসিয়েছেন। শূন্য মূল্যহীন। তবে এই শূন্য অমূল্য।

স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে একদা ভেসে উঠেছিল ব্রডের হতাশা ভরা বিমর্ষ মুখ। কাতর নয়নে চেয়ে ছিলেন একদৃষ্টে। নিয়তির কি পরিহাস। এর ঠিক ১৬ বছর পর জায়ান্ট স্ক্রিনে আরেকবার জ্বলে উঠল ব্রডের নাম। নামের পাশে স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করেছে সাদা পোশাকে ‘৬০০’ উইকেটের কীর্তি।

বাইশগজে আরও অনেক কীর্তিতেই নিজেই ঝুলি সমৃদ্ধ করেছেন ইংলিশ কিংবদন্তি। ইংলিশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৮৪৭) উইকেট দখল, টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক (৬০৪), দলের পক্ষে অ্যাশেজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার (১৫৩)। এছাড়াও বিশ্বের পেসারদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটের (৮৪৭) দখল নিয়েছেন ব্রড।

ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে ৪ হাজারের বেশি রান এবং ৮০০ উইকেটের কীর্তি আছে কেবল ৪ জনের। ক্রিকেটের এই এলিট ক্লাবে ব্রডের নামটাও আছে। বাকি তিনজন হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম এবং প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। 

বোলিং দিয়ে কিংবদন্তির কাতারে পৌঁছালেও অলরাউন্ডার হিসেবেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খ্যাতি আছে ব্রডের। ২০১০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে নয় নম্বারে নেমে খেলেন ১৬৯ রানের ইনিংস। যা কিনা এই পজিশনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

ব্রডের নাম আসতে আরেকটি নাম অবশ্য ঘুরেফিরে আসবেই, জেমস অ্যান্ডারসন। মাঠের বাইরে হরিহর আত্মা থেকে মাঠের জুটিতে পরিপূরক হয়ে ওঠা; একটা প্রজন্মের কাছে ব্রডের পাশে শূন্যস্থান মানেই নিশ্চিত অ্যান্ডারসন।

বিদায়বেলায় আরেকবার, শেষবার দেখা গেল দু’জনের চিরচেনা আলিঙ্গন। ওই যে শেষ বলের আগে ভেসে আসা কমেন্ট্রি, জিমিকে খুঁজে জড়িয়ে ধরা কিংবা গার্ড অফ অনারের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে ঢোকার ছবিটা।

এক হাতে হ্যাট, তার ভেতর হেডব্যান্ড, এক ফাঁকে তুলে নেয়া শেষ ম্যাচের স্মৃতিফলক একটি স্টাম্পও আছে, অন্য হাতে জবাব দিচ্ছেন অভিবাদনের; বিউগলের করুণতর সুরের মতো শেষ দৃশ্যে এভাবেই বাইশগজ ছেড়ে যাচ্ছিলেন ব্রড।

ব্রড নিজেই যেমনটা বলছিলেন, ‘আই থিংক দ্যাট দ্য ওল্ডার আই গেট, দ্য মোর আই প্লে, ইউ রিলাইজ হোয়েন ইট’স ইউর টাইম...’।

হ্যাঁ, এটাই সময়। হাসতে হাসতে সাইত্রিশেই মহাকাব্যের মলাটে বন্দি হবার সময়। অনুপ্রেরণার গল্পে আপনি থাকছেন ব্রড। আপনি থাকছেন ভষ্ম ছাঁইয়ের গল্পে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়