ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশ্বকাপের ক্যানভাস রঙিন করতে চান মুস্তাফিজ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২৭ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্বকাপের ক্যানভাস রঙিন করতে চান মুস্তাফিজ

ইয়াসিন হাসান : বাংলাদেশের ক্রিকেট যে কয়েকজন ক্রিকেটারের আর্বিভাবে বদলেছে ক্রিকেটের মান, বদলেছে প্রতিপক্ষের ভাবনা, বদলেছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের ভাবনা; তাদের মধ্যে অন্যতম মুস্তাফিজুর রহমান।

বাঁহাতি পেসারের বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগমন হয়েছিল খুব রাজসিকভাবে। তিনি আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। ভারতের বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপের পরপর ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই জয়ের রূপকার সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা মুস্তাফিজ। নাম না জানা এক তারকা হুট করেই হয়ে যান দেশের সবথেকে বড় পোস্টারবয়। দেশে, দেশের বাইরে সবকিছুতেই তার জয়গান।

এবার তার হাতেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্য। ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে, বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপে বড় কিছু পেতে চায় তাহলে মুস্তাফিজুর রহমানই সেই পথে দলকে এগিয়ে নিতে পারবে। মুস্তাফিজ অবশ্য অতসব নিয়ে ভাবছেন না। বারবার ইনজুরিতে পড়ে শক্তি, ক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছেন। তাই বিশ্বকাপের মূল সফরে সুস্থ থাকা নিয়েই যত চিন্তা তার। ‘এতো লম্বা সফর। এ সময়ে ইনজুরিতে পড়লে সমস্যা। তাই পুরোপুরি ফিট থাকা নিয়েই ভাবছি। এতো লম্বা টুর্নামেন্ট তো এর আগে খেলিনি।’
 


অভিষেকের পরপরই ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন মুস্তাফিজ। এবার খেলবেন তার থেকেও বড় টুর্নামেন্টে। ২০০৭ সালে পাড়ার বড় ভাই, বন্ধু, সবার সঙ্গে আনন্দ করতে করতে বোঝেন বিশ্বকাপের মাহাত্ম। তবে দৃঢ়চেতা না হওয়ায় তখন ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে অতটা ভাবেননি। ধীরে ধীরে মুস্তাফিজ স্বপ্ন বুনেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপের পরই ঠিক করেছেন আগামী চার বছরে কোথায় থাকতে হবে তাকে।  

‘গত বিশ্বকাপের পরই মূলত, আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়। সাফল্য পেলে সবখানেই সুযোগ আসবে। সেই সুযোগ এবার পেলাম।’

স্বল্পভাষী মুস্তাফিজ সব সময়ই নিজের আবেগ লুকিয়ে চলেন। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সেই রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকেও। কিন্তু নিজের ভেতরের কথা ভেতরেই রাখলেন। প্রকাশ করলেন না অনস্ক্রিন,‘যে কোন প্রথমেই অনেক ভালো অনুভূতি তৈরি হয়। আর বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতিতো অন্যরকম হবেই।  দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো ভালো লাগা অন্য কিছুতে আর হতে পারে না। তাইতো বিশ্বকাপে ১৫ সদস্যর দলে থেকে আমি গর্বিত।’
 


স্লোয়ার, কাটারে মুস্তাফিজ অনন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে সাফল্য মুস্তাফিজ পেয়েছে তার অধিকাংশই এই বোলিংয়ে।  এবারের ইংলিশ কন্ডিশনে বাঁহাতি পেসার ধরে রাখতে চান নিজের সাফল্য, ‘স্লোয়ার এবং কাটারের বাইরে আমার খুব বেশি কিছু নেই। এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করেই আমি সাফল্য পাওয়ার আশা করছি।  নতুন বোলিং শিখছি। সেগুলো মাঠে ব্যবহার করব।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাঁহাতি পেসাররা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মর্ডান ক্রিকেটে।  গত পাঁচবারের বিশ্বকাপের মধ্যে চারবারই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিল বাঁহাতি পেসার। গত সাতবারের চ্যাম্পিয়ন দলের পাঁচবারই বাঁহাতি পেসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে। ১৯৯২ সালে ওয়াসিম আকরাম, ১৯৯৬ সালে চামিন্দা ভাস, ২০০৭ সালে ন্যাথান ব্র্যাকেন, ২০১১ সালে জহির খান ও অশিস নেহরা এবং ২০১৫ সালে মিচেল স্টার্ক। ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রায় সবগুলো বড় দলেই একজন করে বাঁহাতি পেসার রয়েছে, শুধুমাত্র ভারত ছাড়া ।


মুস্তাফিজ কি পারবেন সেই চ্যালেঞ্জ নিতে? ‘অতসত তো মাথায় নিয়ে মাঠে নামা যায় না। আমার দায়িত্ব যেটা সেটা আমি ঠিক মতো পালন করব।  ব্যক্তিগত তেমন কোনো লক্ষ্য নেই। এতো কিছু ভেবে-টেবে আসলে লাভ নেই। চেষ্টা থাকবে নিজের সেরাটা দেওয়ার। প্রয়োজনের সময় দলকে যেন ব্রেক-থ্রু এনে দিতে পরালেই খুশি থাকব। সবচেয়ে বড় কথা, দলের জয়ে যেন অবদান রাখতে পারি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’

মুস্তাফিজ আত্মবিশ্বাসী দেশকে বড় কিছু দিতে।  শেষ চার বছরের পারফরম্যান্সই তার সবথেকে বড় প্রেরণা। এই প্রেরণাতেই বিশ্বজয় করতে চান ২৩ বছর বয়সি এ ক্রিকেটার।  বিশ্বকাপের ক্যানভাস রঙিন করতে চান।  চান রংধনুর সাত রং দিয়ে রাঙিয়ে দিতে আশপাশ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়