ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

সখীপুরের বনাঞ্চলে এক মাসে ১৫ স্থানে আগুন!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ২৬ এপ্রিল ২০২৪  
সখীপুরের বনাঞ্চলে এক মাসে ১৫ স্থানে আগুন!

টাঙ্গাইলের সখীপুরের বনাঞ্চলে এক মাসে অন্তত ১৫টি জায়গায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ গত বুধবার বিকেলে উপজেলার বহেড়াতৈল বিটের আওতায় ছাতিয়াচালা সাইনবোর্ড এলাকায় একটি গজারির বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় পাঁচ একর গজারির বন আগুনে পুড়ে যায়। 

এরআগে গজারিয়া বিট কার্যালয়ের আওতাধীন অন্তত চারটি স্থানে শাল-গজারির বনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কালিয়ানপাড়া, গজারিয়া, কীর্ত্তনখোলা বংকী এলাকায় শাল গজারির এসব বনেও আগুন দেওয়া হয়, এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ একর বন পুড়ে যায়। নলুয়া বিটের আওতাধীন দেওদীঘি বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি গজারির বন, নলুয়া বিট কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে একটি, ঘেচুয়া এলাকায় দুটি ও আমের চারা এলাকায় একটি বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, গত ২৪ এপ্রিল গজারির বনে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে- তারা তা জানেন না। তবে গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি শাল-গজারির বন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে ৪টি রেঞ্জের আওতায় ১৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে শাল-গজারির বন রয়েছে। বসন্তে, তথা ফাল্গুন-চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রকৃতির নিয়মে শাল-গজারির পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাতের বেলায় আবার কখনো দিনের বেলাতেও বনে আগুন দেয়। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

নলুয়া বিট কর্মকর্তা সাফেরুজ্জামান বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি গজারির বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আমরা খুবই সতর্ক অবস্থায় আছি। এতে গতবারের চেয়ে বনে আগুন লাগার ঘটনা কম ঘটেছে। আমার কার্যালয়ে তিনজন স্টাফ রয়েছেন। চার-পাঁচ হাজার একর জমির বন দেখভাল করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই জনবল বাড়াতে হবে।

তুহিন নামে একজন বলেন, বনের কাছেই নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। তারা লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনেক সময় গজারি বনে আগুন দিয়ে থাকে। আবার প্রভাবশালী অনেকেই কেউ বনের জমি দখলের উদ্দেশ্যে বন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত। অনেক সময় বনের ভিতরে যে কাঁচা সড়ক রয়েছে সেই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরাও ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বনে আগুন দেয়। 

রনি নামের আরেক জন বলেন, মূলত জমিদখল আর লাকড়ি সংগ্রহ করতেই বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই সময়ে মাঝে মধ্যেই বনে আগুন দেখা যায়। তবে রাতের আঁধারে বনে আগুন দিলে আতংক সৃষ্টি হয়।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, এক শ্রেণির অসাধু লোকজন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। আবার অনেকেই ঝুম চাষ করার ফলে পাহাড়ে আগুন দিয়ে বন ধবংস করছে। আর এই আগুন দেওয়ার কারণে বন্য পশু-পাখি বিলুপ্ত হতে চলেছে।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বনে আগুন দেওয়ার ঘটনা অনেক কম। আর আমাদের লোকবল অনেক কম থাকায় আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। আর এ মৌসুমে বনের এক জায়গায় আগুন লাগলে আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে কেউ বনে আগুন দিতে না পারে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সুফল প্রকল্পের আতত্তায় কিছু জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা সকলে মিলে কাজ করে যাচ্ছি।

কাওছার/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়