ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী : বোঝা নয়, সম্পদ হয়ে বাঁচতে চান

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১৪ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৬  দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী : বোঝা নয়, সম্পদ হয়ে বাঁচতে চান

কৃতী ৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

শাহীন রহমান, পাবনা : এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাবনার ৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তাদের প্রবল ইচ্ছা শক্তির সুফল ঘরে এনেছেন। অন্যের সাহায্যে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এরা সবাই কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য আর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

তারা আগামীতে আরো বড় হতে চান, যেতে চান আরো বহুদূর। তাদের ইচ্ছা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দেশের সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে। মানুষের বোঝা হয়ে নয়, মানুষের সম্পদ হয়ে বেঁচে থাকতে চান তারা।

 

পাবনা কলেজের আজিজুল হক পেয়েছেন জিপিএ ৪.৩৩ ও সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন জিপিএ ৩.৫০। পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের দুরুল হুদা পেয়েছেন জিপিএ ৪.২৫, নুরুল ইসলাম জিপিএ ৩.৩৩,  মোবারক হোসেন জিপিএ ৪ এবং ওয়াসিম আকরাম পেয়েছেন জিপিএ ৩.৯২। এরা সবাই পাবনার শহরতলি সিঙ্গা মানব কল্যাণ ট্রাস্টে থেকে লেখাপড়া করছেন।

 

আজিজুল হক কিশোরগঞ্জ জেলার আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। তারা তিন ভাইয়ের মধ্যে মধ্যে দুজনই প্রতিবন্ধী। তিনি জন্মের দুই বছরের মাথায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও পড়ালেখার প্রতি বরাবরই তার গভীর আগ্রহ। আর সেই আগ্রহ থেকেই তিনি ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা চালু রাখেন। এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার মনোবল আরো বেড়ে গেছে।

 

তিনি আরো বড় হতে চান, যেতে চান বহুদূর। কৃতী শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন ফেনী জেলার প্রয়াত সাইদুল হকের ছেলে। জন্মগতভাবেই তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

 

আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুরুল হুদার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামে। তার বাবার নাম জোহাগ আলী। নওগাঁর মান্দা উপজেলার ঘাটকুর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহমানের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মোবারক হোসেনও জন্মগতভাবেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

 

একই জেলার পত্নীতলা উপজেলার খান্দাই বলরামপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুস সামাদের ছেলে ওয়াসিম আকরাম। এ কৃতী শিক্ষার্থীও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

 

এ ছাড়া শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার শকিপুর গ্রামের ওলি খানের ছেলে নুরুল ইসলামও প্রতিবন্ধিতা জয় করা কৃতীদের একজন। হতদরিদ্র পরিবারের এই সন্তানের স্বপ্ন আরো লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন।

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই ৬ শিক্ষার্থী জানান, তাদের পড়ালেখা ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পেছনের নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। তাদের ভাষায়, সরকারিভাবে এইচএসসি লেভেলে ব্রেইল পদ্ধতির বই না দেওয়ায় আমাদের অনেক কষ্টে পড়ালেখা করতে হচ্ছে।

 

তারা আরো জানান, তাদের বেশির ভাগের পরিবার দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করায় অনেক অর্থ খরচ করে ব্রেইল পদ্ধতির বই তারা জোগাড় করতে পারে না। ফলে অন্যের কাছ থেকে পড়া শুনে মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে তাদের পড়ালেখা করতে হয়েছে।

 

প্রতিবন্ধিতা জয়ী এসব শিক্ষার্থী জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য পরীক্ষায় ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও তারা এই সময় আরো ১০ মিনিট বাড়িয়ে ৩০ মিনিট করা উচিত বলে মনে করেন। কারণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পরীক্ষা দিতে হয় অন্য রাইটারের সাহায্যে। প্রতিজন রাইটারকে সাত থেকে আট হাজার করে টাকা দিতে হয়। দরিদ্র পরিবারের এসব শিক্ষার্থীর পক্ষে এ ব্যয় বহন করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়ে ওঠে না।

 

এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে এনে নিজের ট্রাস্টে রেখে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনার সিঙ্গায় অবস্থিত মানব কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল হোসেন।

 

তিনি জানান, তার ট্রাস্টে এখন ১২৫ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৫ জনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। অন্যরা শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং এতিম ও অসহায় শিশু। ট্রাস্টের খরচেই তাদের থাকা-খাওয়া ও পড়ালেখা চলে। প্রতিদিন এদের পিছনে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। শুধু দানের ওপর নির্ভর করে এদের লালন  পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এজন্য তিনি এদের পালনে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/১৪ আগস্ট ২০১৫/শাহীন রহমান/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়