ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মৌলিক ভাবনার গল্প সব কাল ছুঁয়ে যায়: শাশ্বত নিপ্পন

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৌলিক ভাবনার গল্প সব কাল ছুঁয়ে যায়: শাশ্বত নিপ্পন

নিজস্ব প্রতিবেদক : লেখক, কবি ও সাহিত্যিক শাশ্বত নিপ্পন বলেছেন, ‘সাহিত্যে সমকাল বলতে আসলে কোনো কাল আছে বলে আমার মনে হয় না। মৌলিক ভাবনার গল্প সব কালকেই ছুঁয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আপনি যদি রবীন্দ্রনাথের ছুটি ধরেন, তার কাবুলিওয়ালা ধরেন বা এ ধরনের অনেক গল্পই আমরা বলতে পারব। আচ্ছা এগুলো যে সময়ে লেখা হয়েছিল, সে সময় আমরা পার করে এসেছি। কিন্তু গল্প কি পুরোনো হয়েছে? আমরা সেই গল্পের সঙ্গে আছি। সময়টা আমাদের সঙ্গে আছে। তার মানে হচ্ছে, গল্পে মৌলিক ভাবনাগুলো যদি ধারণ করা যায়, তাহলে গল্প সব কালকেই গল্প ছুঁয়ে যায়।’

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সমকালীন সাহিত্য ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে লেখক শাশ্বত নিপ্পন এ কথা বলেন।

জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম এই বৈঠকের আয়োজন করে। বুধবার সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি স্টলে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গ্রন্থমেলায় সমকালীন সাহিত্য ভাবনা নিয়ে এটি ছিল রাইজিংবিডির দ্বিতীয় আয়োজন।

গল্পের চিরন্তনতার ব্যাখ্যায় শাশ্বত নিপ্পন বলেন, ‘আমার দুটো বাচ্চা আছে। একটা মেয়ে, একটা ছেলে। তাদেরকে মাঝে মাঝে গল্প বলতে হয়। আমি অনেক সময় রোবটের গল্প বলি, তারপর কার্টুনের গল্প বলি। কিন্তু যখন গল্প না পেয়ে সেই পুরোনো আমলের গল্প বলি, এক যে ছিল রাজা, তার দুটো রানি। আমরা যখন ঠাকুর মার ঝুঁলির কাছে পৌঁছে যাই তখন তারা সেটিকে আরো গুরুত্ব দিয়ে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে শোনে। আমার কাছে মনে হয়েছে, শিশুদের মধ্যে গল্পের একটি আঙ্গিক দাঁড়িয়ে গেছে। ওই আঙ্গিকটা তাদের গল্পের ভিত্তি। আমরা যে গল্পের কাঠামোর কথা বলছি বা সমকালের কথা বলছি- গল্পসাহিত্যে সমকাল বলতে প্রকৃতপক্ষে কোনো কাল নেই।’

তিনি বলেন, ‘সমসাময়িক লেখকদের ক্ষেত্রে গল্প ও কবিতায় দুটি জিনিস লক্ষ্য করছি আমি। গল্পতে তারা এত বেশি কাঠামোর দিকে নজর দিয়েছেন যে, পাঠক যখন গল্প পড়ছেন, তখন তাদের ভাবতে হয় এর ফর্ম কী হতে পারে। এতে পাঠক খুবই বিব্রত হন বলে আমি মনে করি।’

‘গল্প লিখতে লিখতে আসলে নিজস্ব একটা আঙ্গিক দাঁড়িয়ে যায়। হাসান আজিজুল হকের গল্প যদি আমরা লক্ষ্য করি, সেখানে গল্পে যে রূপ দাঁড়িয়েছে, সেটি তার নিজস্ব রূপ। আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্প লিখি। এগুলো বর্ণনামূলক এবং সেটি আমার নিজস্ব রূপ। এটাতে বাঁধাধরা কোনো রূপ বা কাঠখোট্টা ধরনের কোনো রূপ দাঁড় করানোর চেষ্টা নেই। ব্যাকরণগতভাবে সাজিয়ে লিখলে যে গল্পের ভালো আঙ্গিক দাঁড়াবে এটা আমি মনে করি না।’

‘আরেকটি জিনিস আমি বলতে চাই। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গল্পের বেলায়। বাংলাদেশে অনেক কিছু নিয়ে অনেক পরীক্ষা হয়েছে। আমরা চীনের তৈরি স্যালো মেশিন লাগিয়ে দিয়েছি পায়ে চালানো তিন চাকার বাহনের মধ্যে। এর এমন উদ্ভট ব্যবহার হবে সেটি চীনারা হয়তো কখনো ভাবেনি। আমরা রবীন্দ্র সংগীতকে এমনভাবে রিমিক্স করে এমন একটা আধুনিক রূপ দিয়েছি, সেটাও একটা ভাবনার বিষয়। অনেক কিছুই তো আধুনিক হচ্ছে। কিছু কিছু জিনিস থাক না। বাঙালির হৃদয়ে অত্যন্ত আবেগময় বিষয়গুলো- যেমন মুক্তিযুদ্ধ, একুশে ফেব্রুয়ারি।’

‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমনভাবে ভাবার সুযোগ নেই যে, পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে আঁচটা আমার বাড়িতে লাগেনি। কেউ নির্যাতন ভোগ করছে সেটি আমি হৃদয় থেকে ধারণ করব না- বিষয়টি এমনও নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ রকম করে ভাবার কোনো সুযোগ নেই।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইয়ামিন/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়