ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা : চার্জশিট চলতি সপ্তাহে

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নুসরাত হত্যা : চার্জশিট চলতি সপ্তাহে

মাকসুদুর রহমান : ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলার তদন্ত প্র্রায় শেষ দিকে। নুসরাতের মায়ের দায়ের করা মামলার পর থেকেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সন্দেহভাজন গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা। যার হুকুমদাতা ছিলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা বলে তদন্তে পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার তদন্ত কাজ মোটামুটি শেষ। দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হবে চলতি সপ্তাহে। এখন কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছে। আসামি করা হবে ১৬ জনকে। তবে টেকনিক্যাল সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।’

রাইজিংবিডির প্রশ্নে তিনি নিশ্চিত করেন, ‘আসামিদের প্রত্যকে ঘটনায় কোন না কোনভাবে জড়িত। যা তদন্তে মিলেছে। আসামিদের সংশ্লিষ্টতার বর্ণনা চার্জশিটে উল্লেখ করা হবে। সেক্ষেত্রে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে তেমনটি ভাবা ঠিক না।’

পিবিআই তদন্তে পেয়েছে, হত্যায় জড়িত ১৬ জনের মধ্যে আটজনই সরাসরি অংশ নেয়। এর মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজকে হুকুমদাতা ও দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয়দাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মণি, শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন ও সাইফুর রহমান জুবায়েরও সরাসরি জড়িত ছিল। নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন দেয় তারা। আর বাকি আট জনও কোনো না কোনোভাবে এ হত্যাকান্ডে জড়িত আছে।

আটজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আশ্রয়দাতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, অর্থ যোগানদাতা পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবছার উদ্দিনের নামও চার্জশিট থাকবে। তবে থানা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া কেফায়েত উল্যাহ, আরিফুল ইসলাম, আলা উদ্দিন, নূর হোসেন ওরফে হোনা মিয়া, সাইদুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি।

তদন্তে মিলেছে, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা শিরীন আক্তার। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান সিরাজ। পুলিশ ওই দিনই অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এর আগে শিরীন মেয়েকে শ্লীলতাহানির বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিরাজ রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের ভয় দেখান।

নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার ভয়ভীতি দেখানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আসামিরা তাকে কিভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা যায় পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এর আগে আসামিদের দু’জন কারাগারে দেখা করে সিরাজের সঙ্গে। সেখান থেকেই মূলত চূড়ান্ত হুকুম দেন সিরাজ। আসামিরা সবাই মিলে মাদ্রাসাটিকে সিন্ডিকেটে পরিণত করেছে।

শনিবার মুঠোফোনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১৬ আসামির সবারই ঘটনার পৃথক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এতটুকু বলতে পারি। একটি নিরপেক্ষ চার্জশিটের কাজ চলছে।’

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনাগাজী থানার তৎকালিন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে করা মামলার এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার পাশপাশি ওই মামলারও বিচার নিশ্চিত করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সে মারা যায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৯/মাকসুদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়