ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অন্তরালোকে দেখছেন তারা...

32,36 || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অন্তরালোকে দেখছেন তারা...

আরিফ সাওন ও আবু বকর ইয়ামিন : বেশির ভাগ মানুষের যখন বইমেলাকে ঘিরে আগ্রহের অন্ত নেই তখন কিছু মানুষ নিভৃতে কেঁদে যান।

অন্যের মতো করে বইমেলার সেই আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ নেই তাদের। কারণ তাদের চোখে আলো নেই। তারা দেখতে পান না। বাহিরের চোখ দিয়ে দেখতে না পেলেও স্রষ্টার দেওয়া অন্তরালোকে তারা দেখতে পান গ্রন্থমেলার সৌন্দর্য।

যাদের চোখের আলো নেই তারাও জ্ঞানের স্পর্শ থেকে দূরে থাকবে না, এমন চিন্তা থেকেই বইয়ের ব্রেইল সংস্করণের উদ্ভব। বইমেলায় দৃষ্টিহীন মানুষের জন্য জ্ঞানের সন্ধান দিতেই ব্রেইল সংস্করণের বইয়ের সম্ভার নিয়ে এসেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশন।

অন্ধদের দুঃখের সীমা হয়ত এখানে একটু লাঘব হয়। কারণ নির্দিষ্ট সিলেবাসের পাঠ্যবইয়ের বাইরে তারা এখানে পাচ্ছেন বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের লেখা গল্প, কবিতার বই।

এখন পর্যন্ত এই প্রকাশনা থেকে প্রায় ৪০টি ব্রেইল বই প্রকাশিত হয়েছে। আর এবার এই প্রকাশনা থেকে আটটি ব্রেইল বই প্রকাশ হয়েছে। এগুলো হলো- কাইজার চৌধুরীর লেখা ‘শোভনের একাত্তুর’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘দলের নাম ব্ল্যাক ড্রাগন’, ‘ঈশপের গল্পসমগ্র’, জুলভার্নের ‘৮০ দিনে বিশ্ব ভ্রমণ’, সৈয়দ নাজিমুদ্দিন হোসেনের ‘গলদা মামার গোয়েন্দাগিরি’, ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার’, লুৎফর রহমান রিটনের ‘রসগোল্লাটা কথা বলে’ ও ফারাহ সাঈদ ও রুহুল মাহফুজ জয় সম্পাদিত বাংলা কবিতার বই ‘স্পর্শছুরি’।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী শারমিন আক্তার রিমা বলেন, ‘স্পর্শ ব্রেইল শুধু আমাদের জন্য বই প্রকাশ করে থাকে। যদি সব প্রকাশনী বছরে একটি করে বইও ব্রেইল আকারে বের করে তাহলে আমাদের পড়ার সুযোগ বাড়ে। বাংলা একাডেমি চাইলে প্রত্যেক প্রকাশনাকে এটি বাধ্যতামূলকও করে দিতে পারে।’

চোখে আলো নেই বলে বইমেলার জন্য আগ্রহের কমতি নেই বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ছাত্রী কবিতা আক্তারেরও। গ্রন্থমেলা ঘুরেছেন। চোখের আলোতে না দেখলেও অন্তরালোকে অনুভব করেছেন এর কোলাহল।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীতে দায়িত্ব পালনরত কর্মীরা বলেন, ‘মূলত মানুষের সচেতনতা বাড়াতেই আমরা এখানে স্টল দিয়েছি। আমরা চাই বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রত্যেক বড় বড় প্রকাশনাকে বছরে অন্তত একটি করে হলেও ব্রেইল প্রকাশনা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া। এখান থেকে কোনো ব্রেইল বই বিক্রি করা হয় না। জানানো হয় একজন অন্ধ মানুষ কীভাবে ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে বইয়ের সংস্পর্শে এসে জ্ঞান লাভ করতে পারেন। আর দৃষ্টিহীন মানুষ যারা বই পড়তে আগ্রহী তারা এসে রেজিস্ট্রেশন করে যান। পরে মেলায় যখন ব্রেইল বই প্রকাশিত হয় তখন তাদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হয় বই।’

এখন পর্যন্ত শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের প্রত্যেকের হাতে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশনার দিন নতুন ব্রেইল বইগুলো তুলে দেওয়া হয়।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনের উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক প্রকাশনা সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছি বইমেলায় অংশ নিয়ে অন্তত একটি করে হলেও ব্রেইল বই প্রকাশ করুন। তাহলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যেমন আরো জ্ঞান লাভ করতে পারবে ঠিক তেমনি তারা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথেও এগিয়ে যাবেন অনেকখানি।’

গ্রন্থমেলার ২৩তম দিনে মেলা প্রাঙ্গণে ছিল জমজমাট ভাব। মেলার বাংলা একাডেমির অংশে প্রবেশ করে দেখা গেল দুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনে ব্রেইল বইয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশন করছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়