ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিদ্যুৎ নিয়ে জাতীয় কমিটির মহাপরিকল্পনা

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২২ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদ্যুৎ নিয়ে জাতীয় কমিটির মহাপরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার সমালোচনা করে বিকল্প মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত খসড়া রূপরেখা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মহাপরিকল্পনা উপাস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, আমাদের দেওয়া মহাপরিকল্পনা বিচার বিশ্লেষণ করে যথাযথ নীতি গ্রহণ করলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা নিজেদের গ্যাস থেকেই মেটানো সম্ভব। কিন্তু সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে গ্যাস নিয়ে রপ্তানিমুখী চুক্তি বাতিল করতে হবে। বাপেক্সকে কাজের সুযোগ দিতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। স্থল ও গভীর সমুদ্রে নিয়মিতভাবে অনুসন্ধান চালাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনায় দেশের ভূপ্রকৃতি, জনবসতি, সম্পদের আপেক্ষিক অবস্থান, পরিবেশগত ঝুঁকি, আর্থিক সামর্থ্য এবং জনস্বার্থের প্রশ্ন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি প্রকল্পই হবে বিদেশি কোম্পানি ভিত্তিক, আমদানি ও ঋণনির্ভর।

সরকারের এ মহাপরিকল্পনার বিপরীতে বিকল্প মহাপরিকল্পনা তুলে ধরেছে জাতীয় কমিটি। এ মহাপরিকল্পনায় স্বল্পমেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যমান কাঠামোতে অল্প পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের প্রস্তাবিত কাঠামোতে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে গ্যাস থেকে ৫৯ ভাগ, তেল থেকে ১৯ ভাগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ ভাগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা থেকে ৫ ভাগ বিদ্যুৎ আসবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মূল প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনসহ জাতীয় কমিটির সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মধ্যমেয়াদে (২০৩১ সাল পরর্যন্ত) পুরনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস পাওয়ার হার হ্রাস পেলেও যথাযথ অনুসন্ধান করলে গভীর ও অগভীর সমুদ্র থেকে নতুন পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। কোনো কারণে ঘাটতি দেখা দিলে গ্যাস আমদানিও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে। 

দীর্ঘমেয়াদে (২০৪১ সাল) গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করে নবায়নযোগ্য উৎস থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শীর্ষস্থানে পৌঁছাবে। সেজন্য ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫৫ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আনা সম্ভব হবে।

সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা এবং জাতীয় কমিটির মহাপরিকল্পনার পার্থক্য তুলে ধরেন আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যমাত্রা সরকারের মহাপরিকল্পনায় ২৪৫ টেরাওয়াট আওয়ার, আমাদেরও তাই। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য আমদানি ও রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণনির্ভর এবং পরিবেশবিধ্বংসী। অন্যদিকে আমাদের মূল বৈশিষ্ট্য দেশের সম্পদনির্ভর, রাশিয়া–চীন-ভারতের ঋণমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব।

এ সময় জ্বালানি খাত নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাসহ একটি সার্বিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জাতীয় কমিটির গবেষণা প্যানেল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৭/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়