ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পার্ক ও খেলার মাঠে পশুর হাট না বসানোর দাবি

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২১ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পার্ক ও খেলার মাঠে পশুর হাট না বসানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্ক, খেলার মাঠ ও রাস্তার পাশে কোরবানির হাট না বসানোর দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

শনিবার রাজধানীর কলাবাগানে পবার কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠকে মক্কা-মদিনার আদলে ‘কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক’ এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

সভায় বক্তারা বলেন, কোরবানি একটি ধর্মীয় পালনীয় বিষয় হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি অনুসরণ করা হয় না। কোরবানি দেওয়া ও পরবর্তী সময়ে পালনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষ পুরোপুরি সচেতন নয়। মক্কা মদিনার আদলে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে একটি বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে।

প্রতি বছর সারা দেশে গরু, মহিষ, ভেড়া, খাসিসহ প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ পশু ঈদে জবাই করা হয়। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের সর্বত্র ঈদের দিন বা পরের দিন যত্রতত্র বিপুল সংখ্যক কোরবানির পশু জবাই করা হয়। জবাইকৃত পশুর বর্জ্য, রক্ত, নাড়িভুড়ি, গোবর, হাড়, খুর, শিং যেখানে সেখানে ফেলায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। পরিবেশসম্মত কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করা হলে একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে জবাইকৃত পশুর ‍উচ্ছিষ্ট সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। কিন্তু সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের দেশে কোরবানি পরবর্তী সময়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যা কারো কাম্য নয়।

বক্তারা আরো বলেন, পবিত্র মক্কা নগরীতে কোরবানির কতোগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা ও জায়গাটি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পশু কোরবানি করা। এর ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানো, রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটা, পশুর চামড়া বিনষ্ট হওয়া ইত্যদির ভয় থাকে না এবং বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা ও এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

এ সময় কোরবানি সম্পর্কিত ধর্মীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে অবহিত করে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, প্রতিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে কোরবানি ও পশু জবাইয়ের স্বাস্থ্যসম্মত স্থান ও ব্যক্তি নির্ধারণ করা, ধর্ম সম্মতভাবে কোরবানি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি এলাকায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির সুপারিশ করেন বক্তারা।

বাংলাদেশে পশু উৎপাদন প্রক্রিয়াটি একটি অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখা যাচ্ছে। একটি অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী খাবারের খরচ ও সময় কমাতে উন্নত সুষম খাবার না দিয়ে পশুকে অতিরিক্ত ইউরিয়া, সিপ্রোহেপ্টাডিন, স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ, এ্যানাবলিক স্টেরয়েড, হরমোন ইত্যাদি খাওয়ায় বা ইনজেকশন প্রয়োগ করে।

পশুর হাট যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ খেলার মাঠ এবং রাস্তাঘাটে না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। এসব স্থানকে পশুর হাট হিসেবে ব্যবহার করলে রাস্তাঘাট অপরিষ্কার হয়ে যায়, যানজটের সৃষ্টি হয়, পশুকে খুঁটিতে বেঁধে রাখার জন্য খেলার মাঠে গর্ত করা হয়, ইট পাথর যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়, কয়েকমাস পর্যন্ত দুর্গন্ধ থেকে যায় ফলে খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বক্তারা বলেন, পরিবেশসম্মত কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০১৫ সালের কোরবানির ঈদে ঢাকা মহানগরীর ৩৯৩টি, ২০১৬ সালে ঢাকা দক্ষিণে ৫৮৩টি এবং উত্তরে ৫৬৭টি এবং ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৯টি স্থানকে কোরবানির জন্য নির্ধারিত করে। কিন্তু এরপরও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো স্থায়ী উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না।

আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া পশুর হাড় থেকে শুরু করে শিং, অন্ডকোষ, নাড়ি-ভুড়ি, মূত্রথলি, চর্বি বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পশুর হাড় বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। জবাইয়ের পর গরুর আকার ভেদে ১৫ থেকে ২৫ কেজি হাড় ফেলে দেওয়া হয়। এই হাড় সংগ্রহ করে প্রতিদিন ব্যবসা হয় অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার। হাড় দিয়ে ওষুধ, সিরামিক পণ্যসামগ্রী, বোতাম ও ঘর সাজানোর উপকরণ তৈরি করা হয়। শুধু অসচেতনতা আর অবহেলার কারণে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে হাড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শুধু কোরবানির গরুর হাড়ের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। কোরবানিসহ সারা বছর জবাইকৃত গরুর হাড়ের মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।

কোরবানির পশু উৎপাদন প্রক্রিয়ার স্থান নিয়মিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, ডাক্তার দ্বারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা, বড় রাস্তার পাশে, পার্ক-খেলার মাঠে কিছুতেই কোরবানি পশুর হাট যেন না বসে তা নিশ্চিত করা, পশুকে পরীক্ষার জন্য হাটে পশুর ডাক্তারের টিম রাখা, কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত নির্ধারিত স্থান নির্ধারণসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয় বৈঠক থেকে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, নাসফের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, এম এ ওয়াহেদ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামন মজুমদার, সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক জোবাইদা গুলশান আরা প্রমুখ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুলাই ২০১৮/নাসির/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়