ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সংসদের দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার চান এরশাদ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৬, ২৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংসদের দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার চান এরশাদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে আগামী নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, নির্বাচনের সময়ে, আমরা যারা সংসদে আছি তাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। তখন আমরা সাধারণ কাজ করব। আমরা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করব না। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এটাই জাতীয় পার্টির রূপরেখা।

তিনি আরো বলেন, এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জনগণ ভোট দিতে পারুক, এটা আমরা চাই। ইনশাআল্লাহ, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য থাকবে। দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হবে।  জনগণের ভোটে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাবে।

জাপা চেয়ারম্যান আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা রূপরেখা দিয়েছি- আগামী নির্বাচনে সংসদে যেসব দল আছে তাদের প্রতিনিধি দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবে। কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে সরকার গঠন ও ক্ষমতার জন্য প্রস্তুত জানিয়ে প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতি বলেন, মানুষ আমার কাছে প্রশ্ন করেন, আজকের মহাসমাবেশে কী বার্তা দেব? আমার প্রথম বার্তা হলো- আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করব। আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করব। দেশবাসীর জন্য এই আমার বার্তা।

তিনি আরো বলেন, আজকের মহাসমাবেশ প্রমাণ করে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা প্রস্তুত কি না, প্রস্তুত, আমরা প্রস্তুত। দেশের ১৬ কোটি মানুষ দেখে যাও, জাতীয় পার্টি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আগামীতে জয়ী হয়ে আমরাই সরকার গঠন করব।

মহাসমাবেশে লোকসমাগম দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বক্তব্যেও সেই আবেগ ঝরে পড়ে। তিনি বলেন, আবেগে আমার কণ্ঠ রুদ্ধ। এত বড় সমাবেশ আমার জীবনে কখনো দেখি নাই। আশা করি, আগামীতে এর চেয়েও বড় সমাবেশ হবে। জনগণের ভোটে ইনশাআল্লাহ জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে। অত্যাচার, লুটপাট বন্ধ হবে। মানুষ শান্তি পাবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, তোমাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আজকের এটি মহাসমাবেশ না, জনসমুদ্র, নাকি মহাসমুদ্র? আজকের এই সমাবেশ জনসমুদ্র, মহাসমুদ্র। আমার হৃদয়, আমার মন ভরে গেছে আজ। কানায় কানায় পূর্ণ। মহাসমাবেশ সফল করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আপনাদের সকলকে, আপনাদের পক্ষ থেকে দলের মহাসচিবকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মহাসচিব না থাকলে এটা করা সম্ভব হত না।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহর অবরুদ্ধ, সব রাস্তা বন্ধ। মানুষ চলাচল করতে পারছে না। আমরা প্রমাণ করেছি, জাতীয় পার্টি আছে, আগামীতে সরকার গঠনের মতো শক্তি অর্জন করেছে। এই শক্তি হলেন আপনারা, দেশের জনগণই আমাদের শক্তি। দেশের মানুষকে নিয়েই আমরা ক্ষমতায় যাব।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা করে সম্মিলিত জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, আমরা ২৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম না। এ সময়ে দুটি দল ক্ষমতায় ছিল। তারা জনগণকে কী দিয়েছে? কিছুই দিতে পারেনি। কী পেয়েছে? অন্যায়-অবিচার, নারীদের লাঞ্চনা, চাকরি নেই, মানুষ বেকার। জনগণকে তারা কিছুই দিতে পারেনি। তাদের মুখে শুধু বড় বড় কথা। আমরা নাকি এখন উন্নয়নশীল দেশে। ঢাকায় চাকচিক্য, অনেক লাইট, বাজি পোড়ানো হচ্ছে। ঢাকার বাইরে গিয়ে দেখেন দেশের মানুষের কী অবস্থা। মানুষ কীভাবে বাস করছে। দুই বেলা খেতে পারে কি না। ঢাকার বাইরে যান, মানুষের অবস্থা দেখেন, তখন বুঝবেন আপনারা কতটুকু উন্নত করেছেন। কত উন্নয়ণশীল দেশ হয়েছে বাংলাদেশ।

‘মানুষ কি চায়? শান্তিতে বাস করতে চায়। নিরাপত্তা চায়, নিরাপদে ঘুমাতে চায়। সরকারের কাছে কিছু নাই। আমরা ক্ষমতায় আসলে মানুষকে নিরাপত্তা দেব। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। মানুষ ভালো থাকবে। আমরা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ বলেন এইচ এম এরশাদ।

প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতি বলেন, এখন সমাজে মাদক আর ইয়াবা। যুবসমাজের চাকরি নেই। প্রতিবছর তিন লক্ষ যুবক চাকরির জন্য যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু চাকরি নেই। তারা মাদকের আশ্রয় নেয়। দেশ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ক্ষমতায় গেলে দেশকে রক্ষা করব, যুবসমাজকে রক্ষা করব। খবরের কাগজ খুললেই নারী ধর্ষণ, শিশু ও মানুষ হত্যা। শুধু হত্যা আর রক্ত। শান্তি কোথাও নেই। শান্তি শুধু ঢাকায়, ঢাকার বাইরে শান্তি নেই। আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই।

শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলি। শিক্ষায় পচন ধরেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সহনীয় পর্যায়ে ঘুষ নেবেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই ঘুষ খাই। সেই মন্ত্রী এখনো আছেন। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। আগে পাস করা কঠিন ছিল, এখন ফেল করা কঠিন। এভাবে দেশ চলতে পারে না। পরিবর্তন আনতে হবে, আমরাই আনব। শিক্ষাব্যবস্থা আনব, সুশাসন ফিরিয়ে আনব।

তিনি বলেন, ব্যাক ‍লুট, অর্থনৈতিক মন্দা। দেশের মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করছে। আমরা ক্ষমতায় আসলে মানুষকে নিরাপত্তা দেব। শান্তি দেব। ব্যাংক লুট বন্ধ করব। লুটেরাদের বিচার করব। উন্নয়ন-সমৃদ্ধি আমরাই করেছি। আমাদের উন্নয়ন বলতে হলে অনেক কথা বলতে হয়। তাই উন্নয়ন সমৃদ্ধির জন্য, পরিবর্তনের জন্যই জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার সকালে কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী, জাপা নেতা রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, ইকবাল হোসেন রাজু, গোলাম মোহাম্মদ রাজু ও ইসলামী ফ্রন্টের সওম আব্দুস সামাদের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলীয় নেতা ও জাপা সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এমপি, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সালমা ইসলাম এমপি, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মুজিবুর রহমান সেন্টু, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনএ চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী মনি, ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুক, ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন প্রমুখ।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশের মঞ্চে সকাল সোয়া ৯টার দিকে হাজির হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার পরেই আসেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ জাপা ও জোটের নেতারা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মার্চ ২০১৮/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়