ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

জয়ে রঙিন হলো না শেষটা

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জয়ে রঙিন হলো না শেষটা

আবু হোসেন পরাগ, সিলেট থেকে : ম্যাচ তখনো শেষ হয়নি। গ্যালারির অনেকটাই খালি। অথচ ইনিংস বিরতিতেও গ্যালারি ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই সেই গ্যালারিতে দর্শক হাতে গোনা যাচ্ছিল!

চিত্রটা তো ভিন্নও হতে পারত। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। অনেক আশা নিয়েই মাঠে এসেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের সেই আশাটা পূরণ করতে পারল কই!

দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ন্যূনতম লড়াইটাও করতে পারল না। ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং। যেতে পারল না লক্ষ্যের ধারে-কাছেও। মাত্র ১৩৫ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। আর ম্যাচ হেরেছে ৭৫ রানের বড় ব্যবধানে। যেটি আবার বাংলাদেশের তৃতীয় বড় হার।

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে কখনো দুই’শ রান তাড়া করে জিততে পারেনি। তবে আজ বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছিল একটি পরিসংখ্যান। এই মাঠে আগের ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচই জিতেছিল পরে ব্যাটিং করা দল। কিন্তু বাংলাদেশ সেই রেকর্ড অক্ষত রাখতে পারল না। তার চেয়েও বড় কথা, এত বাজে ব্যাটিং অন্তত কেউ প্রত্যাশা করেনি।



শ্রীলঙ্কার কাছে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও টেস্ট সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথম ম্যাচে হারের পরই। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে অন্তত সিরিজটা ড্র করার সুযোগ ছিল। হারতে হারতে অসুখী একটি পরিবারে পরিণত হওয়া দলে কিছুটা সুখ ফেরানোর সুযোগ ছিল। সুযোগ ছিল সিলেটে নিজেদের প্রথম আর সিরিজের শেষ ম্যাচ জয়ে রাঙানোর। কিন্তু হতাশামাখা সিরিজের শেষটা জয়ে রঙিন হলো না। বরং শেষটা হলো আরো বিবর্ণ।     

বড় লক্ষ্য তাড়ায় তামিম ইকবাল ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফাইন লেগ দিয়ে হাঁকান ছক্কা। তখন মনে হচ্ছিল, আজ বুঝি ভালো কিছুই হবে! গ্যালারির দর্শকদের মুখে তখন চওড়া হাসি। তবে সেই হাসি মিলিয়ে যায় পরের ওভারেই। আগের ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পরের ম্যাচে মারলেন ডাক। আউটও হয়েছেন বাজেভাবে। অফ স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন পয়েন্টে।

শুরুতেই সৌম্যকে হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরো দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে মাদুশানাকার তিন বলের মধ্যে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। আগের বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। পরের বলেই মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। তার রান বলতে ওই ছক্কাই। আর দলে ফেরা মিথুনও আগের বলে বাউন্ডারি মেরে পরের বলে ক্যাচ তুলে দেন। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৩ উইকেটে ২২!

এক প্রান্ত আগলে রাখা তামিম তবুও চেষ্টা করেছিলেন দলকে এগিয়ে নিতে। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৩৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন। শরীর থেকে বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে তামিম এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিলে ভাঙে এ জুটিও। নিজের জার্সি নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে ঠিক ২৯ রানই করেন তামিম, ২৩ বলের ইনিংসে ছক্কা ও চার দুটি করে।



প্রথম ম্যাচে অভিষেকে শেষ দিকে নেমে এক বল খেলার সুযোগ পেয়ে এক রানে অপরাজিত ছিলেন আরিফুল হক। আজ সুযোগ পেলেন ইনিংসের অর্ধেক না পেরোতেই। তবে ঘরোয়া আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যে এক নয়, সেটা তিনি টের পেলেন দ্বিতীয় ম্যাচেই। গত বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। জীবন মেন্ডিসের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে আরিফুল ৩ বলে করেছেন ২।

ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে (২০) সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহর ৪২ রানের জুটি শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে। অধিনায়ক রান আউট হওয়ায় আগে করেছেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৪১ রান। বাকি চার উইকেট হারাতে বেশি সময় লাগেনি।

এর আগে বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটাও ছিল হতাশায় মোড়ানো। টস জিতে বোলিং নেওয়া মাহমুদউল্লাহর মুখে চওড়া হাসি এনে দিতে পারেননি বোলাররা। অভিষিক্ত আবু জায়েদ রাহীকে ইনিংসের প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে স্বাগত জানান কুশল পেরেরা। প্রথম ওভারে ১২ রান দেওয়া রাহীকে তৃতীয় ওভারে আর বোলিংয়েই আনেননি অধিনায়ক। এবার বল তুলে দেন আরেক অভিষিক্ত মেহেদী হাসানের হাতে। তাতেও আসেনি সাফল্য।

বাংলাদেশ যখন প্রথম সাফল্য পেল, ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা পেয়ে গেছে বড় সংগ্রহের ভিত। একাদশ ওভারের শেষ বলে গুনাথিলাকাকে (৩৭ বলে ৪২) লং অফে তামিমের ক্যাচ বানিয়ে ৯৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন পার্ট টাইম বোলার সৌম্য সরকার। ব্যাটিং অর্ডারে 'প্রমোশন' পেয়ে তিনে নেমেছিলেন থিসারা পেরেরা। নেমেই থিসারা তুলেছিলেন ঝড়। থিসারাকে সৌম্যর ক্যাচে পরিণত করে তার ১৭ বলে ৩১ রানের ঝড় থামান আবু জায়েদ। তার প্রথম উইকেট।



পরের ওভারে মেন্ডিসকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। তবে বড্ড দেরিতে। ৪২ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭০ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেছেন মেন্ডিস। এরপর শ্রীলঙ্কার স্কোরটা দুই’শ পার করেন উপুল থারাঙ্গা ও দাসুন শানাকা। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে ২৫ রান করেন থারাঙ্গা। আর শানাকা ১১ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৩০ রানের ছোট্ট ঝোড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন।

শেষ তিন ওভারেই শ্রীলঙ্কা তোলে ৪৯ রান! তাতে সফরকারীরা গড়ে রানের পাহাড়। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত মাঠে শ্রীলঙ্কার রান পাহাড়ে চাপা পড়ল বাংলাদেশ! স্বাগতিকদের হতাশায় ডুবিয়ে তিনটি ট্রফিই দেশে নিয়ে গেল (যাবে) শ্রীলঙ্কা।

|| সংক্ষিপ্ত স্কোর ||


শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ২১০/৪

বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৪৫

ফল: শ্রীলঙ্কা ৭৫ রানে জয়ী

সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ শ্রীলঙ্কা ২-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ : কুশল মেন্ডিস।




রাইজিংবিডি/সিলেট/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/পরাগ/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়