ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আদিবাসী শিশুরা এখন শিক্ষার আলোয়

সোহেল মিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আদিবাসী শিশুরা এখন শিক্ষার আলোয়

রাজবাড়ীর পল্লীতে লেখাপড়ায় মগ্ন আদিবাসী শিশু

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : দু’বেলা দু’মুঠো ভাত যাদের ভাগ্যে জোটেনা, তারাও এখন স্বপ্ন দেখছে সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার। তারা মনে করছে সময় এসেছে ভাগ্য পরিবর্তনের। কখনো স্কুলের বারান্দায় যেতে পারবে কিনা এমন ভয় ছিল যাদের, তারা এখন রীতিমত শিক্ষার আলো পাচ্ছে।

 

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মৌকুড়ী গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথাই বলছি। এই পল্লীর ছেলে মেয়েরা প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে এখন তারা মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।  শুধু স্কুলের বারান্দায় নয় তাদের সন্তানেরা এখন স্বপ্ন বুনছে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। আদিবাসী শিশুরা এখন প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে।

 

আদিবাসি পল্লীর শিশুদের আলোর পথ দেখানো এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রয়াসে নিজেরাই গড়ে তুলেছে ‘পূর্ব মৌকুড়ী আদিবাসী পাড়া সংঘ’ নামের সংগঠন।

 

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার সরদার পাইলট জানান, এই পল্লীর ৪৪টি পরিবারের ছেলে-মেয়েরা একসময় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তারা কখনো ভাবতে পারেনি স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ পাবে। কিন্তু বাস্তবতা এখন ভিন্ন।

 

ওই পল্লীতে গেলে দেখা যায়, আদিবাসী শিশুরা একটি জরাজীর্ণ কুড়ে ঘরের বারান্দায় খেজুরের মাদুর বিছিয়ে প্রায় ২০-২৫ জন শিশু শিক্ষার্থীরা বসে লেখাপড়া করছে। এদের মধ্যে যারা বড় তারা ছোটদেরকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে।

 

বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী পলি সরদার ও শহীদ জিয়া আইডিয়াল একাডেমির ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাপলা সরদার জানায়, অর্থের অভাবে আমরা প্রাইভেট পড়তে পারিনা। তাই আমরা যারা বড় তারা ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের প্রতিদিন সকালে ১ ঘন্টা করে বিদ্যালয়ের পড়া তৈরি করে দেই।

 

বালিয়াকান্দি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী বৈশাখী সরদার তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই আদিবাসী পল্লীর মেয়েদেরকে একটু বড় হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা পড়েছি বাল্য বিবাহ দেওয়া অপরাধ। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে নয় লেখাপড়া করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকুরি করব।’

 

ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আকাশ জানায়, ‘অর্থের অভাবে বাবা আমাকে দিয়ে কাজ করাতে চায়। কিন্তু আমি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করব না। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বাবাকেও সহযোগিতা করব। লেখাপড়া শিখে আমি বড় হতে চাই।’

 

আকাশের বাবা বিকাশ সরদার জানান, ‘প্রতিনিয়তই আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে জীবিকার সন্ধানে। সেখানে কিভাবে সন্তানকে লেখাপড়া করাবো বুঝতে পারছিনা। তার পরেও আমার কষ্ট হলেও ওকে লেখাপড়া শিখাব। ওর স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করব।’

 

শুধূ আকাশই নয় এরকম অর্ধশতাধিক আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীরা এখন তারা স্বপ্ন দেখছে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে তারা তাদের এই আদিবাসী পল্লীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পরিবর্তন ঘটাবে এটাই তাদের প্রত্যাশা।

 

অন্যদিকে পর্যাপ্ত সরকারী সহায়তা ও নজর দানের দাবি জানিয়েছেন অবহেলিত পিছিয়ে পড়া এই পল্লীর আদিবাসী নেতারা।

 

 

রাইজিংবিডি/রাজবাড়ী/৩১ অক্টোবর ২০১৬/সোহেল মিয়া/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ