ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইলিশের খোঁজে চাঁদপুরে

সিয়াম সারোয়ার জামিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২২ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইলিশের খোঁজে চাঁদপুরে

সিয়াম সারোয়ার জামিল : বুড়িগঙ্গাকে কেউ কেউ ‘কালিগঙ্গা’ বলে থাকেন; কালো পানির কারণে। দুই তীরের অসভ্যদের অত্যাচারে কতটা ভাল থাকা যায়? তবে বর্ষায় পানির রং আর দুর্গন্ধ কিছুটা কমেছে! বেলা ১১টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চে ওঠার পর যতই এগিয়ে যাই পানির রং ও পরিবেশ বদলে যেতে থাকে। শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মেঘনা নদীতে চলে যাই।

 

সদরঘাট টু মেঘনা সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। মেঘনা টু চাঁদপুর কম-বেশি আরও দু’ঘণ্টা! এই দু`ঘন্টার পুরোটাই দেখা যাবে মাছ ধরার দৃশ্য। ছোট ছোট জেলে নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে, কেউ দাঁড় ধরে আছে, কেউ জাল টানছে, কেউবা মাছ আলগা করায় ব্যস্ত। বর্ষায় তুমুল বৃষ্টি হবার কথা থাকলেও এবার মাত্রাটা কম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ হলেও সূর্যের দেখা মেলে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে সবখানেই।

 

বেলা আড়াইটায় চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নেমেই খেয়ে ফেললাম দু পিস ইলিশ আর ভাত। সঙ্গী সৃষ্টি আপুও কম গেলেন না। একাই খেলেন চার পিস, যদিও সাইজ ছোট ছোট। বলে রাখা ভাল, দাম নাগালের মধ্যেই। পেটপূজো শেষে রিকশায় সোজা চলে গেলাম চাঁদপুর মোহনায়। পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদী এখানেই মিলিত হয়েছে। চাঁদপুর জেলা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত এটি। নয়নাভিরাম জায়গাটিতে বিদেশি পর্যটকেরও দেখা মিলল!

 

 

শেষ বিকেলের পোড় খাওয়া সূর্যের আলোকচ্ছটা পড়ার পর মোহনায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেল বেশ। বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে যেন। বসার সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট বেঞ্চ। ছোট-বড় মাঝারি বৃক্ষের সমারোহ ভালো লাগার একটি বড় কারণ। চানাচুর, পিঠা ছাড়াও বিভিন্ন রকম হালকা খাবারও দেখা গেল। স্থানীয়দের অনেকেই সেসব বেশ আমুদে মুডে খাচ্ছেন।

 

রাত ন`টার দিকে ফেরার পথ ধরলাম। লঞ্চে কেবিনের টিকেট বুক করা ছিল। নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট দেরিতে পৌঁছাল দেখে বেশ রাগ হলো। যাত্রীদের ওঠানামার হুড়োহুড়ির মাঝেই নিজেরা জায়গা খুঁজে নিলাম। অল্পক্ষণেই সাইরেন বাজিয়ে লঞ্চ ছেড়েও দিল। কেবিনে ব্যাগ রেখে করিডর, ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল যেন। দিনের চেয়ে রাতের নদী আরও বেশি মোহনীয়। প্রায় ঘণ্টা চারেক পরেই পৌঁছে গেলাম সদরঘাট।

 

ইলিশ কিনতে চাইলে : চাঁদপুরে এলে অনেকেই ইলিশ কিনতে চান। সেজন্যে বড় স্টেশন চলে যেতে হবে। ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য বাজার থেকেই সুন্দর করে বরফ দিয়ে প্যাকেট করে দেবে। নিশ্চিন্তে ইলিশ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবেন। আর মাছ কেনার সময় রূপালি রং দেখে কিনবেন। কারণ এটাই চাঁদপুরের ইলিশ চেনার সহজ উপায়।

 

 

কীভাবে যাবেন : ঢাকার সদরঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কয়েকটি লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নিজের সময়মতো পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব সঙ্গে নিয়ে এই সময়ের মধ্যে যে কোনো একটি লঞ্চে রওনা দিতে পারেন।

 

চাঁদপুর লঞ্চঘাটের পাশে খেয়া পাড় হয়ে যাওয়া যায় মোহনা দ্বীপে। রিকশাযোগে মোহনা পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবেন। বোট ভাড়া করেও ঘুরতে পারেন ২০০ টাকা ঘণ্টা। লঞ্চে ভাড়া চেয়ারকোচ ২০০-৪৫০ টাকা, কেবিন ৫০০-১৫০০ টাকা।

 

কোথায় থাকবেন : পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য উন্নত মানের হোটেল সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল তাজমহল, হোটেল জোনাকী, হোটেল শ্যামলী অন্যতম।

 

 

খাবার দাবার : বড় স্টেশন বাজারে চারদিকে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে গিয়ে দুপুরের ভাত খাওয়ার পর্ব সেরে নিতে পারেন টাটকা ইলিশ মাছ দিয়ে। ওইসব রেস্টুরেন্টে ইলিশের রান্না করা নানা পদের তরকারিও পাওয়া যাবে।

 

সতর্কতা : চাঁদপুর গেলে খুব জরুরি না হলে রিকশায় না ওঠাই ভালো। কারণ রিকশা ভাড়াটা বড্ড বেশি! তবে এখানে লোকাল ট্রান্সপোর্ট হিসেবে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বেশ ভালো।

ছবি : লেখক

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ