ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কোটিপতি শনাক্তে এবার জরিপ করবে এনবিআর

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোটিপতি শনাক্তে এবার জরিপ করবে এনবিআর

রাজস্ব ভবন

এম এ রহমান : ব্যাংকগুলোতে জমা থাকা কিংবা আগাম অর্থের হিসেবে দেশে কোটিপতির সংখ্যা সোয়া ১ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে কোটিপতি সংখ্যা ৫৬ হাজারের একটু বেশি।

 

এবার দেশে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে জরিপ করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ঢাক-ঢোল না পিটিয়ে অনেকটা ভিন্ন কৌশলে জরিপের প্রক্রিয়াগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন সূত্র রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে প্রত্যেক ইউনিয়নে গিয়ে কোটিপতিদের  শনাক্ত করবে প্রতিষ্ঠানটি। সেক্ষেত্রে স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদের হিসাব বিবেচনায় নিয়েই কোটিপতির হিসাব করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কোটিপতির সঠিক সংখ্যা হিসাব করে তাদেরকে করের আওতায় আনা হবে।

 

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের বক্তব্যেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘এনবিআর এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।  এ ক্ষেত্রে আমরা বহুদূর এগিয়েছি। তবে আমরা কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছি। বেশ কয়েকটি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা লাগবে। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। যথা সময়ে আপনাদের জানানো হবে।’

 

এটাকে ঠিক জরিপ না বলে অনুসন্ধান বলতে পারেন, উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি নিজের উদ্যোগে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়েছেন দেশকে স্বাবলম্বি করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

 

এ দিকে চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, অর্থমন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে জরিপ করে কোটিপতি শনাক্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকল নির্দেশনায় এনবিআরকে কোটিপতিদের সঠিক সংখ্যা শনাক্ত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শনাক্তের পর কোটিপতিদের আয়করের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে এনবিআরে পাঠানো নির্দেশনায়।

 

গত ২৫ জানুয়ারি এক প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কোটিপতির বিষয়ে বলেন, গত পাঁচ বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৬ হাজার। ব্যাংকগুলোতে জমা থাকা এবং আগাম অর্থের হিসাবে দেশে কোটিপতির বর্তমান সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ জন। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতা মাত্র ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫০৩ জন।

 

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক হিসাবধারী হিসেবে দেশে কোটিপতি রয়েছে ৫৬ হাজার ২৪৫ জন ব্যাক্তি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে এসব ব্যাংক একাউন্টে কোটি টাকার উপর স্থিতি ছিল।

 

কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন কোটিপতি। অফিসিয়াল হিসেবেই প্রায় ৫০ হাজার কোটিপতি আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না কিংবা আয়কর দেয় না।

 

ব্যাক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়-সীমা ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর শেষ হয়। এ সময়ে সারা দেশে এনবিআরের কর অফিসগুলোতে জমা পড়া আয়কর রিটার্নে ১ কোটি টাকার উপর সম্পদ দেখিয়েছে মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন করদাতা।

 

এনবিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, ২০১১ করবর্ষে সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী চূড়ান্ত হিসাবে ২ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ আছে এমন করদাতার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩০৩ জন। যেখানে ২০১২ সালে ৪ হাজার ৮৬৫ জন, ২০১৩ সালে ছিল ৫ হাজার ১৪৫ জন এবং ২০১৪ সালে ওই সংখ্যা ছিল ৫ হাজারের কিছু বেশি।

 

বিষয়টি অনেকটা অপ্রত্যাশিত বলেছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত যে এত কম সংখ্যক ব্যাক্তি কোটি টাকার উপর সম্পদ দেখিয়েছেন। সঠিক হারে আয়কর দিয়ে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। যে সকল কোটিপতি আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে তাদের জন্য অগ্রীম বার্তা হলো কর দাও নিশ্চিন্ত থাক। তা না হলে এনবিআর কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

 

গত নভেম্বরে শেষ হওয়া সময়ে ৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৯৪ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এর বিপরীতে আয়কর জমা পড়েছে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে ২ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৮ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন।

 

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়