ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

আয়কর দেন না ৫০ হাজার কোটিপতি

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আয়কর দেন না ৫০ হাজার কোটিপতি

এম এ রহমান : ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন কোটিপতি। অথচ দেশে কোটিপতির সংখ্যা অনেক আগেই লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

 

কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই কোটিপতির সংখ্যা ৫৬ হাজার। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক হিসাবেই প্রায় ৫০ হাজার কোটিপতি আয়কর রিটার্ন জমা দেন না কিংবা আয়কর দেন না।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের বিভিন্ন সূত্র রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

 

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে জানায়, ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর শেষ হয়। এ সময়ে সারা দেশে এনবিআরের কর অফিসগুলোতে জমা পড়া আয়কর রিটার্নে ১ কোটি টাকার ওপর সম্পদ দেখিয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন করদাতা।

 

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক হিসাবধারী হিসেবে দেশে কোটিপতি রয়েছেন ৫৬ হাজার ২৪৫ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার ওপর স্থিতি ছিল। সে হিসাবে ২০১৫-১৬ করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি ৫০ হাজারের বেশি কোটিপতি।

 

তবে বেসরকারি হিসাবে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে বর্তমানে কম করে হলেও প্রায় আড়াই লাখ কোটিপতি রয়েছেন বাংলাদেশে।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, কর প্রদানে কোটিপতিদের অনীহা নতুন কিছু নয়। এর আগের করবর্ষের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে সে রকম চিত্রই প্রকাশ পায়।

 

এনবিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, ২০১১ করবর্ষে সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী চূড়ান্ত হিসাবে ২ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ আছে এমন করদাতার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩০৩ জন। যেখানে ২০১২ সালে ৪ হাজার ৮৬৫ জন, ২০১৩ সালে ছিল ৫ হাজার ১৪৫ জন এবং ২০১৪ সালে ওই সংখ্যা ছিল ৫ হাজারের কিছু বেশি।

 

এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী কথা বলতে গেলেও মাত্র ৬ হাজার ব্যক্তি আয়কর রিটার্নে কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যত দিন যাচ্ছে কোটিপতিদের কাছ থেকে কর আদায় তত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নিয়ে কোটিপতিদের শনাক্ত করার উদ্যোগ এনবিআরের গ্রহণ করা উচিত। এরপর তাদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা উচিত। তা না হলে দেশের রাজস্ব আদায় বাড়বে না।

 

বিষয়টি অনেকটা অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটা অপ্রত্যাশিত যে, এত কমসংখ্যক ব্যক্তি কোটি টাকার ওপর সম্পদ দেখিয়েছেন। সঠিক হারে আয়কর দিয়ে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।’

 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে কোটিপতির সংখ্যা ৫৬ হাজার। সেখানে আমাদের আয়কর ফাইলে রিটার্ন দেন মাত্র ৬ হাজার কোটিপতি। বিষয়টি এনবিআর খতিয়ে দেখছে। যে সব কোটিপতি আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের জন্য অগ্রিম বার্তা হলো, ‘কর দাও, নিশ্চিন্ত থাক। তা না হলে এনবিআর কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’

 

গত নভেম্বরে শেষ হওয়া সময়ে ৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৯৪ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এর বিপরীতে আয়কর জমা পড়েছে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে ২ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৮ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৬/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ/এএন/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়