ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জীবনযুদ্ধে হার না মানা সুলতানার গল্প

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ২ মে ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৪, ২ মে ২০২৪
জীবনযুদ্ধে হার না মানা সুলতানার গল্প

পুরুষের সঙ্গে সমানতালে শ্রমিকের কাজ করছেন সুলতানা বেগম

মোসা. সুলতানা বেগম (৩৮), কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নে পাইকেনটারী গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমান বাস রাজধানীর পার্শ্ববর্তী আমিন বাজার এলাকার টং ঘরে। ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে যে কোনো কাজ করা সম্ভব, তার প্রমাণ করেছেন ব্রহ্মপুত্র নদী ভাঙনে ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব সুলতানা। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে শ্রমিকের কাজ করছেন তিনি। 

বুধবার (১ মে) আমিনবাজার বেড়িবাঁধে রাইজিংবিডির সঙ্গে সুলতানা বেগমের আলাপ হয়। এ সময় সুলতানা বেগম শোনান তার জীবনের চরম বাস্তবতার কথা, জীবনযুদ্ধের গল্প। 

আলাপের শুরুতেই উঠে আসে, কীভাবে গ্রাম থেকে সাহস সঞ্চার করে রাজধানীর দিকে পাড়ি জমিয়েছেন। সুলতানার ভাষ্য, ২০২০ সালে নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় ব্যাপক ভাঙন। দুদিনে পাইকেনটারী গ্রামের ১৯টি পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। আর ১০ বছর আগে (এপ্রিল, ২০১৪) স্বামী মো. রুহুল যখন মারা যান, তখন তার চার বছরের রবি, দুই বছরের রিয়া আর চার মাসের রাজু নামে তিন সন্তান।

স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনরকম সংসার চালাচ্ছিলেন সুলতানা। নদীভাঙনে ভিটে-মাটি হারিয়ে পাশের গ্রাম কোদালকাটিতে আশ্রয় নেন তিনি। চার মাস থাকার পর সে বাড়িটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর চোখে অন্ধকার দেখেন সুলতানা বেগম। হতাশা এসে গ্রাস করে তাকে। তিন সন্তানকে একমুঠো করে ভাত খাওয়াতে হবে— এজন্য একটা কাজ জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেন সুলতানা। 

সুলতানা বেগমের প্রতিবেশী রাবেয়া ঢাকার আমিনবাজারে কাজ করেন। তার প্রতিশ্রুতিতে একদিন (জুন, ২০২১) দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়র কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ধার করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। রাবেয়া তাকে আমিনবাজার বেড়িবাঁধের ফুটপাতের টং ঘরে ভাড়ায় উঠিয়ে দেন। সেই থেকে জীবনযুদ্ধে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সুলতানা শ্রমিকের কাজ করে যাচ্ছেন। 

সুলতানা বেগম বলেন, ঢাকায় এসে রাবেয়াকে ফোন দিলে তিনি একটি ছোট্ট ছাপড়া ঘরে ভাড়ায় উঠালেন। পরের দিন আমাকে ৪০০ টাকা ধার দিয়ে ছেলে-মেয়েদের সবজির ব্যবসা করার জন্য বললেন। আর আমাকে দিলেন শ্রমিকের কাজ। সবজি বিক্রি ও শ্রমিকের কাজ করে চলছে সংসার। রোদে পুড়ে পরিশ্রম করে খাই, তবুও কারও কাছে হাত পাতি না। আমাদের নবী কাজ করে খেতে বলেছেন, ভিক্ষা করে খেতে নিষেধ করেছেন। এটাই মেনে চলি।

দুঃসময়ে রাবেয়া বেগমের মাতৃতুল্য আচরণ কখনও ভুলবেন না সুলতানা বেগম। তিনি বলেন, ‘দুঃসময়ে তিনি (রাবেয়ো) এসে আমার মায়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন মানুষ আমার অভিভাবক হয়েছেন, এটি বিরল ঘটনা।’

এ বিষয়ে সমাজকর্মী মাজহারুল ইসলাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সুলতানা বেগম জীবনযুদ্ধ করা একজন নারী। বার বার জীবনযুদ্ধে হোঁচট খেয়েও থেমে থাকেননি। মনের ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। সমাজে এরকম অনেক যোদ্ধা আছেন, তারা কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। তবু কারও করুণার পাত্র হচ্ছেন না।’

/এনএইচ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়