ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

নৌকায় রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ২৩ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নৌকায় রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি

কাপ্তাই লেক, রাঙ্গামাটির এখান থেকেই যাত্রা শুরু

ফেরদৌস জামান

শুভলং ঝরনা, প্যাদা টিং টিং ও আশপাশ ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দিতে রাঙ্গামাটি শহরে রয়েছে একাধিক টুর অপারেটর। শহরের রিজার্ভ বাজারে গিয়ে পৌঁছতেই ঘিরে ধরল অপারেটরদের বেশ কয়েকজন। মজার ব্যাপার এদের অধিকাংশই  নৌকা চালক। কারণ রাঙ্গামাটি ঘুরে বেড়াতে হলে কাপ্তাই লেকে আপনাকে ভাসতেই হবে। আর এ জন্যই নৌকার ব্যবস্থা। দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। কয়েক ঘণ্টায় দেখে ফেলা যায় উল্লেখিত স্পটগুলো।

সব দেখাব স্যার, ধীরে ধীরে নৌকা চালাব, লেকের পানিতে সাঁতার কাটা বা গোসল করতে পারবেন- এমন সব লোভনীয় প্রস্তাব উপেক্ষা করে পা বাড়ালাম হোটেলের খোঁজে। আগে রাতে থাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। ততক্ষণে ঘাগু অপারেটরদের বুঝতে বাকি রইল না যে, আমরা তাদের টোপ আপাতত গিলছি না। তারপরও তারা নাছোড়বান্দা! পেছনে পেছনে হোটেল পর্যন্ত এলো। এবার তাদের আরেক অফার- স্যার, বুজছি, রাতে লেকে বেড়াতে চান, সমস্যা নাই। সে ব্যবস্থাও আছে। সারা রাত বেড়াতে চাইলে রয়েছে স্পেশাল আয়োজন।

সেই স্পেশাল আযোজনটা কী জানতে ইচ্ছা হলো না। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। আমরা স্পষ্ট বলে দিলাম, আমরা ওসব শুভলং-টুভলং বা টিং টিং-ফিং ফিং নয়, নৌ-পথে রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ির মারিশ্যা যাব। ব্যাস, এবার রক্ষা পাওয়া গেল। তারা শুকনো মুখে যে যার রাস্তা খুঁজে নিল।

 
থাকার জন্য দেখেশুনে এমন একটি হোটেল নির্বাচন করলাম, যে হোটেলের বারান্দা থেকে কাপ্তাই লেক স্পষ্ট দেখা যায়। হ্যাঁ সত্যিই তাই, টলটলে জলের পরশ মাখা বাতাস এসে শরীর-মন অনবরত সতেজ ও চাঙ্গা করে দিচ্ছে। দূর থেকে দেখছি, ছোট নৌকাগুলো জলের বুকে সাঁতার কাটছে। তিরতির করে কোথা্য় যাচ্ছে মাছ ধরার নৌকা। এ দিকে মনের মধ্যে আকুলিবিকুলি করতে থাকল- কখন ওই জলে ভেসে রওনা দেব মারিশ্যার উদ্দেশে। মাঝে প্রতীক্ষা কেবল রাতটুকু। সন্ধ্যার আগে বের হলাম সমস্ত খোঁজখবর নেয়ার জন্য। জানলাম, রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় মারিশ্যার উদ্দেশে ছোট্ট একটি দুইতলা লঞ্চ ছেড়ে যায়।

কোনমতে কেটে যায় রাত, ভোরে গিয়ে বসে থাকলাম ঘাটে। লঞ্চের ম্যানেজার বলল, ছাড়তে দেরি আছে, নাস্তা-টাস্তা খেয়ে সকালের শহরটা ঘুরে দেখেন। তার কথা মতো নাস্তা খেয়ে কিছুক্ষণ পর গিয়ে বসলাম জানালার পাশের আসনে। দেখতে দেখতে যাব, কোনো কিছু মিস করতে চাই না! কিন্তু লঞ্চ তো ছাড়ে না! অবশেষে সাড়ে আটটায় লঞ্চ ছাড়ার সময় হলো। ভেতরে বসে না থেকে আসন ছেড়ে সকলেই গিয়ে বসলাম পেছনের খোলা অংশে। সূর্যের আলোয় ছোট ছোট  ঢেউয়ের ভাঁজে সোনালি রংয়ের ঝলক, পাখিরা ব্যস্ত মাছ শিকারে, যেদিকে চোখ যায় কেবল পাহাড়ের দীর্ঘ দেয়াল। ধীরে ধীরে দৃষ্টিসীমায় ক্রমশ ছোট হয়ে এলো রিজার্ভ বাজার, আর আমরা হারিয়ে যেতে থাকলাম লেকের জলের স্বচ্ছতায়।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়