ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাজধানীতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা

হাসান মাহামুদ : ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য আগামী এক সপ্তাহ রাজধানীতে থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়।

 

বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম এবং সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মঙ্গলবার সকাল আটটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য ঈদগাহ ময়দানের আশপাশে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের এলাকায় পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

যানজট এড়াতে কোরবানির পশুর চামড়াবাহী যানবাহনকে নির্দিষ্ট রাস্তায় চলাচল করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ (ডিএমপি)।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, ঈদের সময় রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ে। এ সময় চুরি-ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়ায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার রাজধানীসহ দেশের বড় বড় ঈদগাহগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে চার স্তরের নিরাপত্তা: বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের এলাকায়। সেখানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষের সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা নামাজে অংশ নিবেন। ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। ঈদগাহ ময়দানসহ আপশাশে বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা।

 

নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি যানবাহন চলাচল ও পার্কিংয়ের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের এলাকা বমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা তল্লাশি চালাবে। ময়দানের চারদিকে থাকা উঁচু ভবনগুলোতে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। পুলিশ ও র্যা বের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার শাহাবুদ্দীন কোরেশী বলেন, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য থাকছে সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও ডগ স্কোয়াড। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও কমান্ডো ইউনিটের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

 

নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহে জায়নামাজ ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে না যাওয়ার জন্য মুসল্লিদের অনুরোধ করা হয়েছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া হলে মুসল্লিরা ঈদগাহে ছাতা নিয়ে যেতে পারবেন।

 

শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা: এবার ঈদুল আজহায় ১৮৯তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। সেখানেও নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি। গত ঈদে মাঠের কাছে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

 

বিজিবির পাশাপাশি র্যা ব-পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকেও ঈদগাহের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে। এবার মাঠে কাউকে কোনো ধরনের ব্যাগ বা পোটলা-পুটলি নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। জামাত শুরু হবে সকাল ৯টায়।

 

প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ঈদুল আজহার জামাতে ইদুল ফিতরের তুলনায় কমসংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না বলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে। ঈদুল ফিতরে তিন থেকে চার লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছিলেন শোলাকিয়ায়।

 

এ ছাড়া সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করবে। ঈদের দিন মাঠের তিন দিকের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠের সামনের দুটি গেট দিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মুসল্লিদের মাঠে ঢোকানো হবে। মাঠ ঘিরে সিসি ক্যামেরার নজরদারি তো আছেই।

 

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘গত ঈদে (ঈদুল ফিতর) অপ্রত্যাশিত জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঈদ ঘিরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

 

তিনি জনসাধারণের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ারও আহ্বান জানান।

 

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়ার ঈদগাহের পাশে আজিমুদ্দিন স্কুলের সামনে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা ও চাপাতির কোপে নিহত হন পুলিশের দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক। পরে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলিতে ঝর্ণা রাণী সূত্রধর নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে শফিউল ইসলাম নামের এক জঙ্গি। পরে তিনি নিহত হন।

 

ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের গাড়ি পার্কিং এলাকা: সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের নিম্ন বর্ণিত স্থানসমূহ পার্কিং এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিকটবর্তী নির্ধারিত পার্কিংয়ে শুধুমাত্র ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের গাড়িগুলো মৎস্য ভবন হয়ে প্রবেশ করবে।

 

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে সুপ্রীমকোর্টের অভ্যন্তরে গোল চত্বরের কাছে রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর (ভিভিআইপি অ্যালাইটিংয়ের পশ্চিম পাশে)। সুপ্রীমকোর্টের ভেতরে দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নারে (মাজারসংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে) বিচারপতিদের গাড়ি পার্কিং হিসেবে বিবেচিত হবে। ঈদগাহ ময়দানের প্রধান গেটের উত্তর-পশ্চিম দিকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ ভিআইপিদের এবং গণপূর্ত ভবনের আঙ্গিনা ও অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন।

 

সাধারণ গাড়ি পার্কিং এলাকা : জিরো পয়েন্ট ও ইউবিএল ক্রসিংয়ের (মুক্তাঙ্গন) উভয় পার্শ্ব, দোয়েল চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর পার্শ্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল থেকে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্ব, মৎস্য ভবন ক্রসিংয়ের পূর্ব দিকে কার্পেট গলি রোড ক্রর্সিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে।

 

এ ছাড়া অন্যান্যের গাড়ি এবং বাণিজ্যিক যানবাহনগগুলো সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল মোড়-প্রেসক্লাব লিংক রোড-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পেছনের গলি-সাব কন্ট্রোলরুম গ্যাপ-ইউবিএল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর ক্রসিং-মৎস্য ভবন ক্রসিংয়ে স্থাপিত ব্যারিকেডের বাইরে পার্কিং ও চলাচল করবে।

 

চামড়াবাহী যানবাহন চলাচল : যানজট এড়াতে কোরবানির পশুর চামড়াবাহী যানবাহনকে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টা থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিম্নবর্ণিত রাস্তা দিয়ে চলাচল করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

 

প্রবেশ : দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আগত চামড়াবাহী যানবাহন গাবতলী থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে নবাবগঞ্জ রোড হয়ে বটতলা ক্রসিং দিয়ে শেরেবাংলা রোড ধরে ট্যানারি শিল্প এলাকায় ঢুকবে। যদিও হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যারা জরিমানা দিয়ে চামড়া ঢুকাবেন, তাদের এই নির্দেশ মেনে চলতে হবে। তবে সাভারে চামড়া নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলা থেকে আসা চামড়াবাহী যানবাহন পলাশী ও আজিমপুর ক্রসিং থেকে বিজিবি সিনেমা হলের পাশ দিয়ে পিলখানা রোড ধরে চামড়াশিল্প এলাকায় প্রবেশ করবে।

 

অন্যান্য ক্ষেত্রে আগত পশুর চামড়াবাহী যানবাহন জিগাতলা ক্রসিং দিয়ে জিগাতলা কাঁচাবাজার হয়ে হাজারীবাগ ট্যানারিশিল্প এলাকায় প্রবেশ করবে।

 

পোস্তা এলাকার পশুর চামড়ার মার্কেটগামী যানবাহন ঢাকেশ্বরী রোড দিয়ে লালবাগ চৌরাস্তা হয়ে শায়েস্তা খান রোড ধরে ঢুকবে।

 

বহির্গমন : ট্যানারি শিল্প এলাকায় আসা যানবাহন মাল খালাস করে কালুনগর রোড অথবা রায়েরবাজার টালি অফিস সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে বেড়িবাঁধ হয়ে গন্তব্যে যাবে।

 

ওয়াটার ওয়ার্কস রোড থেকে আলীরবাগ ঘাট ইসলামবাগ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। পোস্তা এলাকার চামড়া মার্কেট থেকে বহির্গামী যানবাহন ওয়াটার ওয়ার্কস রোড ধরে চকবাজার ক্রসিং জেলখানার পাশ দিয়ে নাজিমউদ্দিন রোড হয়ে চানখাঁরপুল ক্রসিং দিয়ে বেরিয়ে যাবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/হাসান মাহামুদ/তৈয়বুর রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়