নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন যেভাবে
আব্দুল্লাহ আল মামুন || রাইজিংবিডি.কম
মনে করুন, আপনি জুতা কিনতে গেলেন। এখন দুই ব্র্যান্ডের জুতা সামনে আছে, একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের আর আরেকটি তুলনামূলক কম দামি ব্র্যান্ডের। এখন আপনি কোন ব্র্যান্ডের জুতা কিনবেন?
আমি যদি ভুল না করি তাহলে কম দামি ব্র্যান্ডের জুতার দাম বিশেষ ব্র্যান্ডের চেয়ে দাম অনেক কম হলেও আপনি বিশেষের জুতাই কিনবেন। কেন? কারণ, ছোটবেলা থেকেই তো আপনি বিশেষেরটার নাম শুনছেন এবং আপনার পরিবাবের কেউ না কেউ কমবেশি এটার জুতা ব্যবহার করেছেনই। তো বিশেষেরটা আপনার কাছে আস্থার জায়গা। তাই অন্য ব্র্যান্ডের চেয়ে আপনি এটাই অগ্রাধিকার দেবেন। তাই না?
তাই, ব্র্যান্ড কী জিনিস? ব্র্যান্ড হলো একটা আস্থার জায়গা, যেখানে কথা এবং কাজে মিল থাকে, আপনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। আজকে আলোচনা করবো পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের দুটি স্টেপ (পর্যায়) নিয়ে, যেগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেলেন।
স্টেপ-১: আপনি যদি চান মানুষ আপনার কাজ দেখুক, আপনার কথা শুনুক বা আপনার প্রোডাক্ট কিনুক, তাহলে আপনাকে বা আপনার গ্রুপ/পেজকে ব্র্যান্ড পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। তো আমরা নিজেরা যদি নিজেদের ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই, তাহলে কি কি লাগবে?
১. আপনার প্যাশন খুঁজে বের করুন
২. পছন্দ অনুযায়ী প্ল্যাটফর্ম সিলেক্ট করুন
৩. নিজের ইউনিক স্টাইল খুঁজে বের করুন
চলুন এবার ব্রেকডাউন করি…
আপনি নিজে কিসে দক্ষ তা আগে জানুন। আপনি কোনটা ভালো পারেন? ডিজাইন, ভিডিও মেকিং, আর্টিকেল রাইটিং, অডিও মেকিং কোনটায় ভালো? যেটায় আপনি দক্ষ সেটাই করুন। ইচ্ছার অধীনে কাজ করলে কিন্তু পর্যাপ্ত আউটপুট পাওয়া যায় না, আর আপনি যেটায় দক্ষ না, সেটা নিয়ে আগাতে থাকলে ব্যাপারটা ময়ূরের পালক লাগিয়ে কাকের ময়ূর সাজার মতো অবস্থা হবে। তাই প্রথম কাজ নিজের প্যাশন খুঁজে বের করুন।
প্যাশন পেয়ে যাওয়ার পর দরকার প্ল্যাটফর্ম। ধরুন, আপনি খুব দারুণ বক্তৃতা দিতে পারেন, কিন্তু আপনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোই পেলেন না বা এমন সময়ে বক্তৃতা দিলেন যখন কেউ শুনলোই না। কাজ হবে? তাই প্রথমেই নির্ধারণ করে ফেলুন আপনার খেলার জায়গা কোনটা হবে!
ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম নাকি অন্য কিছু? একটা দিয়ে শুরু করেন। ওইটায় একটা ভালো ঘাঁটি বানান, যেন আপনার কোনো আপডেট সামনে চলে আসলেই মানুষ চোখ বন্ধ করে সেগুলো দেখে।
কপিক্যাট হওয়া যাবে না। নিজের ইউনিক স্টাইল খুঁজে বের করুন। সময় দিন, প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করুন। দরকার হলে একটি থিম, কালার মেইনটেইন করুন। প্রথমে মানুষ কেয়ার না করলেও একটা সার্টেন টাইমের পর মানুষ কেয়ার করবে। আপনার নিজস্ব স্টাইল মানুষকে মুখস্ত করিয়ে ফেলেন…। কীভাবে? তা আলোচনা করবো স্টেপ দুইয়ে। আর হ্যাঁ, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনলাইনে এইচএসসির স্টুডেন্টদের আইসিটি পড়াই, বুক রিভিও করি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং শিখছি। তার মানে আমার প্যাশন হলো টিচিং, ভিডিও বানানো, কন্টেন্ট মেকিং এবং আমি বেছে নিয়েছি ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবকে। আমি কিন্তু তিনটি স্টেপই ফলো করছি। এখন আপনার পালা।
স্টেপ-২: গত স্টেপে আমরা জেনেছিলাম কীভাবে নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। এই স্টেপে আমরা শিখবো কীভাবে নিজের ব্র্যান্ডের নাম মানুষকে মুখস্থ করাতে হয়। আপনার নাম বা আপনার ব্র্যান্ডের নাম তখনই মানুষের মুখস্থ থাকবে, যখন সে প্রতিদিনই আপনার কন্টেন্টগুলো পাবে। বুঝলেন না? বুঝিয়ে দিচ্ছি -
রমজানের সময়ে ইফতারের আগে যখন টিভি অপেন করতাম, তখন আজানের আগের ১৫/২০ মিনিট প্রচুর বিজ্ঞাপন হতো এবং একটি বিজ্ঞাপন একটু পরপর আসতো। এভাবে কিছু দিন চলার পর পুরো বিজ্ঞাপনের কথা, ব্র্যান্ডের ব্যাপারে আমি না চাইতেও আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।
আরও একটি উদাহরণ দেই, যারা আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন, তারা প্রায় প্রতিদিনই আমার আইসিটি কোর্সের আপডেট দেখেন। হয় সেটি প্রমোশন, নাহলে মিম। কিন্তু পোস্ট হয় আইসিটি কোর্স রিলেটেড অ্যান্ড মেক্সিমামেরই মুখস্থ হয়ে গেছে যে মামুন অনলাইনে এইচএসসির স্টুডেন্টদের আইসিটি পড়ায়!
আবার, আমার সঙ্গে ফেসবুকে মাহদী ভাইয়ের বিজ্ঞাপন আছে। ভাই প্রায় প্রতিদিনই তার ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সগুলোর সুবিধা বা প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে পোস্ট করে। এছাড়াও কেন মার্কেটিং শেখা দরকার সেগুলো জানিয়েও পোস্ট করে। এভাবে কিছুদিন পোস্ট দেখার পর কিন্তু আমার ব্রেইনে এটা ঠিকই মুখস্থ হয়ে গেছে যে- মাহদী ভাইয়ের অনলাইনে মার্কেটিং নিয়ে কোর্স আছে, যেগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য উপকারী।
তিনটি উদাহরণ থেকে কী বুঝলেন? নিজেকে বা নিজের কাজকে মানুষের ব্রেইনে মুখস্থ করানোর জন্য একটি বিষয় লাগে, তা হলো- ‘Consistency’ সব থেকে ব্যাটার হয় প্রতিদিন পোস্ট করা। কারণ প্রতিদিন যখন একইসময়ে পোস্ট করবেন, তখন একটা সার্টেন টাইমের পর মানুষের ব্রেইনে আপনার/আপনার ব্রান্ডের নাম এমনিতেই সেট হয়ে যাবে।
তবে হ্যাঁ, আপনার কন্টেন্ট যদি অন্যদের লাইফে ভ্যালু এড না করে, তাহলে কিন্তু কোনো কাজে আসবে না। উদাহরণ হিসেবে আমি আমার এক ক্লাসমেটের কথা বলি যে কি-না প্রতিদিন ফেসবুকে নিজের ৫/৬টা করে ছবি আর নিজের করা ফানি টিকটক ভিডিও আপলোড করেন। কথা হলো এগুলো কি অন্যদের কাজে দেয়? আপনার লাইফে ভ্যালু এড করে?
মানুষ বিনোদনের জন্য হয়তো কিছুদিন দেখবে… এরপর? আনফলো/আনফ্রেন্ড করবে। তাই নিজেকে ব্র্যান্ড বানাতে চাইলে ভ্যালুয়েবল কন্টেন্ট বানাতে হবে এবং সেগুলো প্রতিদিন আপলোড করতে হবে। আর হ্যাঁ, সব ঠিক থাকলে কালকে থেকে কথা বলবো কন্টেন্ট স্ট্যাটেজি নিয়ে, যেখানে মার্কেটিংও হবে আবার অন্যের লাইফে ভ্যালুও এড করবে!
কথা হলো যদি প্রতিদিন আপলোড না করতে পারি তাহলে কী হবে? একদিন পরপর আপলোড করুন বা দুইদিন পরপর বা সপ্তাহে দুইদিন বা সপ্তাহে একটা নির্ধারিত দিনে আপলোড করুন। আপনার অডিয়েন্সকে আগে থেকেই জানিয়ে দিন যে তারা এই টাইমে কন্টেন্ট পাবে। সেই হিসেবে স্ট্যাটেজি সেট করুন। মোটকথা, নিয়মের মধ্যে আসতেই হবে। যেকোনো কিছুতেই অর্গানিক গ্রোথ খুব দরকার। তাহলে ভালো আউটপুট পাওয়া যায়।
বিন্দু বিন্দু জল থেকেই কিন্তু মহাসমুদ্র তৈরি হয়। ঠিক তেমনি আপনার প্রতিদিনের একটু একটু করে দেওয়া ইফোর্টই আপনাকে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেতে সাহায্য করবে। একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, কোনো কিছুই একদিনে হয় না। স্টেপগুলো ফলো করতে থাকুন এবং সময় দিন, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো এখন সময়ের ব্যাপার শুধু।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ (৩য় বর্ষ), মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ঢাকা/মাহি